পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৭৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

738 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ミbrや| শরনার্থী শিবিরে শ্রীমতি গান্ধী আনন্দবাজার পত্রিকা ১৪ মে, ১৯৭১ শরনার্থী শিবিরে শ্রীমতি গান্ধী পূর্বাঞ্চলের শরনার্থী শিবিরগুলো ঘুরে ঘুরে দেখবেন প্রধানমন্ত্ৰী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। রবিবার আসবেন তিনি বনগাঁয়। এই শিবিরগুলোতে ইতিমধ্যেই তিরিশ লক্ষ আতঙ্কিত মানুষ জড়ো হয়েছেন। আরও আসছেন হাজারে হাজারে। জলের মত টাকা খরচ হচ্ছে। বাইরের সাহায্য বড় একটা পাওয়া যাচ্ছে না। এপারে এসে দুর্ভাগাদের সোয়াস্তি নেই। মাঝে মাঝে তাদের উপর পড়ছে পাক-কামানের গোলা। এই পর্বত প্রমাণ বোঝা বহনের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ এর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল অনেক আগেই। প্রশাসকদের অদূরদর্শিতা জটিল করে তুলেছে গোটা পরিস্থিতি। শরনার্থীর ভারে নুইয়ে পড়ছে পশ্চিম বাংলা। নয়াদিল্লী ধীরে ধীরে বুঝতে পারছেন বাস্তব অবস্থা। পাল্টাচ্ছে তাদের ত্রাণ পরিকল্পনা আত্মবঞ্চনা করে লাভ নেই। ইয়াহিয়ার চালের হারে হেরে গেছে ভারত। গণহত্যা এবং মানুষ-খেদার অভিযান সম্পূর্ণ হলে বহাল তবিয়তে ঘর গুছাবেন ইয়াহিয়া খান। আর তার দুষ্কার্যের ভারবাহী হয়ে থাকবে ভারত। মুক্তিযোদ্ধারা লড়বেন। তাঁদের সর্বাত্মক বিজয় কবে সম্ভব হবে তা জানবেন না কেউ। অন্তত এইটুকু সত্য আজ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য শরনার্থীরা থাকবেন ভারতে। অনেকে হয়ত আর ফিরে যেতেই চাইবেন না। ইসলামাবাদের ফাঁদে পা দিয়েছেন নয়াদিল্লী এ ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার পথ একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শরনার্থী শিবিরগুলোতে দেশী-বিদেশী অনেক মহামান্যের পদধূলি পড়েছে। তাতে হতভাগ্যদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাংলাদেশের পাক-অত্যাচার বন্ধ হয়নি। শ্রীমতি গান্ধীর আগমনে লক্ষ লক্ষ মানুষের দীর্ঘশ্বাসের গরম হাওয়া ঠান্ডা হবার নয়। ওরা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। স্বদেশে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলেই অধিকাংশই হয়ত ফিরে যাবেন। এই পরিবেশ সৃষ্টিতে যত দেরী হবে অনেকের ফিরে যাবার পথও তত কণ্টকিত হয়ে উঠবে। শেষ পর্যন্ত ক’লক্ষ নরনারীর হয়ত ফিরে যাওয়াই হবে না। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ছাড়া আর কেউ শরনার্থীমুক্ত করতে পারবেন না ভারতকে। তার জন্য দরকার মুক্তি যোদ্ধাদের সামরিক অগ্রগতি এবং মুক্ত অঞ্চলের পরিধির বিস্তার। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার পাননি কারও কূটনৈতিক স্বীকৃতি। তাদের ভাগ্যে জুটছে না প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্ৰ। ইয়াহিয়ার সুসজ্জিত বাহিনীর সঙ্গে তাঁরা লড়াই করবেন কিসের জোরে? বাংলাদেশে সাহায্য পাঠাবার অনুমতির জন্য ইসলামাবাদের কাছে আর্তি জানাচ্ছেন রাষ্ট্রসঙ্ঘ। আমেরিকা পিছন থেকে ঠেকা দিচ্ছে ভারতকে। ইয়াহিয়া শুধু বলছেন- এখনও সময় আসেনি। বাংলাদেশকে একেবারে পর্যুদস্ত না করা পর্যন্ত ইসলামাবাদের বাঞ্চিত সময় আসবে না। দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বেন বাঙ্গালী জনতা। এপারে শরনার্থীদের ঘিরে দানা বাঁধবে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। কৃতজ্ঞতার বদলে দেখা দেবে ভারতের প্রতি বিতৃষ্ণা। ঠিক এই মুহুর্তেই আসবে ইয়াহিয়ার অনুকূল সময়। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাহায্য তিনি নিতে চাইবেন নিজের হাতে। তাতে হয়ত আপত্তি করবেন না বিশ্বসভার মানবদরদীরা। পাক-ঘাতকেরা নামবে আর্ত-ত্ৰাণে। লাভের ব্যবসা ফাঁদবেন ইসলামাবাদ। বৈদেশিক সাহায্যের ছিটেফোঁটা যাবে বাংলাদেশে। পরের ধনে দল ভারী করবে কুচক্রী দল। ক্ষুধার অন্ন যে তুলে দেবে আর্তের মুখে জনতা তাদেরই জানাবেন সেলাম। ভুলে যাবেন অতীতের নারকীয় ঘটনা। দুনিয়ার এই সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটবে না বাংলাদেশে। মুক্তিযোদ্ধারা সহজে ছাড়বেন না। ভারত সীমান্ত থেকে ওঁরা চালাবেন গেরিলা তৎপরতা। অসহায় নয়াদিল্লী চেয়ে চেয়ে দেখবেন। পাক-বেতার শুরু করবে উল্টো প্রচার। পূর্ববাংলা শান্ত। তাকে অশান্ত করছে ভারতাশ্রিত গেরিলারা। আর্ত ত্রাণে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে পদে পদে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞের দল তখন বলবেন-কথাটি ফেল না নয়।