পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৭৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

739 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শরনার্থী শিবিরগুলো দেখতে এসে শ্রীমতি গান্ধী ভালই করবেন। তিনি বুঝতে পারবেন দেখি কি হয় নীতির পরিণাম’। সাড়ে সাত কোটি মানুষের একটা বিরাট অঞ্চলকে ছারখার করছে প্রায় দেড় হাজার মাইল দূরের একটা হানাদার বাহিনী। বিশ্ববিবেকের মাথায় দিনের পর দিন লাথি মারছেন ইয়াহিয়া খান। বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো অত্যাচারিতের সেবার জন্য লোক দেখানো কলরব তুলছে। ঘাতকের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করছেন তাঁদের জন্য কারও মাথাব্যাথা নেই। ওঁদের সরকার পাচ্ছেন না কূটনৈতিক স্বীকৃতি। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আসছে না অস্ত্রশস্ত্র। এই রাষ্ট্রগুলোর মুখ চেয়ে বসে আছেন নয়াদিল্লী। ঘরের পাশে একটা পশু শক্তির বিরুদ্ধে সক্রিয় ব্যবস্থা নিতে পারল না ভারত। তার এই দুর্বলতার জের চলবে দীর্ঘদিন। বাইরের ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোর কোন আস্থা থাকবে না নয়াদিল্লীর উপর। তাদের শক্তির আড়ম্বর দাগ কাটবে না কারও মনে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের মর্যাদাহানির পরিপূরণ করতে পারবে না নিক্রিয় নৈতিক বাক্যবিন্যাসে। শ্রীমতি গান্ধীর জন্য অপেক্ষা করছে শরনার্থীদের বুক ফাটা কান্না। চোখের সামনে যারা নিহত হতে দেখেছেন প্রিয়জনদের, কি দিয়ে তিনি তাঁদের দেবেন সান্তুনা। প্রতিশোধের জন্য বাংলাদেশের সাচ্চা তরুণ-তরুণী পাগল। তাদের সামনে কি দৃষ্টান্ত রেখেছেন নয়াদিল্লী ? ভারতীয় অঞ্চলে পড়ছে পাক-কামানের গোলা। মরছেন ভারতীয় নাগরিক। সীমান্ত রক্ষীদের অপহরণ করছে পাক-হানাদাররা। শুধুমাত্র কড়া নোটে পাঠিয়েই কর্তব্য বোধ করছেন কেন্দ্রীয় সরকার। শক্তিমানের শক্তির আস্ফলনের বাস্তব প্রয়োগ নেই যেখানে, সেখানে সে হতে পারে না অন্যের শক্তির প্রেরণা। এই বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের প্রয়োজন ছিল শ্রীমতি গান্ধীর। হয়ত তিনি পারবেন তা শরনার্থী শিবিরগুলিতে। নয়াদিল্লির হাতে আছে বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর সার্টিফিকেট। অমানুষিক সংযমের পরিচয় দিয়েছেন তাঁরা। শত শত জনপদ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বাংলাদেশে। দশ লক্ষ নরনারীর রক্তে ভেসে গেছে পথঘাট এবং কুকুরের দল গলিত শব নিয়ে করছে টানাটানি। কোটি কোটি টাকা এবং রাশি রাশি সোনা রুপা পাচার হয়েছে পাকিস্তানে। হাজার হাজার নারী ধর্ষিতা। তিরিশ লক্ষ শরনার্থী বোঝা নিয়ে ধুকছে পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো। ভারতের আকাশসীমা এবং সীমান্তরেখা লঙ্ঘিত হচ্ছে বার বার। ঢাকায় রয়েছেন ভারতীয় কুটনৈতিক কর্মীরা আটক। তা সত্ত্বেও ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গেনি নয়াদিল্লির ধরিত্রীর মত এই সর্বংসহা আচরণের অসংখ্য সাধুবাদ দিয়েছে বৃটেন, সোভিয়েট রাশিয়া এবং আমেরিকা। নিজেদের ঘাড়ে যখন এসে পড়ে নিরাপত্তার সমস্যা তখন তাদের মধ্যে দেখা যায় না বহু প্রশংসিত এই সংযম। তার প্রমাণ, কিউবায় মার্কিন অবরোধ, হাঙ্গেরী এবং চেকোশ্লোভাকিয়ায় সোভিয়েট প্রতিরোধ এবং ১৯৫৬ সালে বৃটেনের সুয়েজ অভিযান। বাংলাদেশের ঘটনাবলীর সঙ্গে এগুলোর তুলনা চলে না। এ অঞ্চলের সংগ্রাম গণতন্ত্রের সংগ্রাম এবং সংখ্যালঘু ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠদের লড়াই। ভারতের উপর চলছে তার প্রত্যক্ষ জের প্রধানমন্ত্ৰী শ্রীমতি গান্ধী ভেবে দেখুন- তিনি বৃহৎ শক্তিগুলোর দেওয়া সার্টিফিকেট সোনার ফ্রেমে বাধিয়ে রাখবেন, না তা ছুড়ে ফেলে দিয়ে আত্মশক্তিতে বাস্তব অবস্থার মোকাবিলা করবেন ?