পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৭৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

755 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড বাদশা খান বলেছেন, সেদিন সংখ্যাগুরুদের উপর সংখ্যালঘু কর্তৃক চাপিয়ে দেবার জন্য পাকিস্তানের জনক খোদ জিন্না সাহেব যে পন্থা অবলম্বন করেছিলেন আজ সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগকে দাবিয়ে ভুট্টোর সংখ্যালঘিষ্ঠ পিপলস পাটিকে পাকিস্তানের ক্ষমতায় বসাবার জন্য সেই একই বলপ্রয়োগের নীতি গ্রহণ করেছেন সামরিক রাষ্ট্রপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খান। বাদশা খান চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে গুরু যে পথ নিয়েছিলেন শিস্যও সেই পথ ধরেই চলেছেন। তিনি স্পষ্টতই বলেছেন, বলপ্রয়োগের দ্বারা পাকিস্তানের জনসাধারণকে আর ভুলিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যদি একসঙ্গে থাকতে হয় তবে ভাই ভাই হয়ে থাকতে হবে-সমমর্যাদা ও সমান অধিকার স্বীকার না হয় তবে পশ্চিম পাকিস্তানের অঙ্গ রাজ্যগুলোর সংখ্যালঘুরা সামরিক শাসকের কাছে কী-ই বা প্রত্যাশা করতে পারে? পশ্চিম পাকিস্তানের অঙ্গ রাজ্যগুলোকে মিলিয়ে আবার যদি একটি প্রদেশে পরিণত করা হয় তা শাসন ক্ষমতায় যদি ভুট্টোর দল এসে বসে, তবে পাখতুনরা তা কিছুতেই বরদাস্ত করবে না বলে বাদশা খান হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কারণ তা মতে তা হবে দাসতু ও শোষণকে বরণ করে নেওয়া। বাদশা খান পাকিস্তানের কল্যাণকামী বলেই একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। বর্তমান পাক সরকার যদি প্রয়োজন বোধ করেন তাঁকে মধ্যস্থ মানতে পারেন। সম্মতি পেলে তিনি সিন্ধু, বেলুচিস্তান, সীমান্ত প্রদেশ ও পাঞ্জাব থেকে কয়েকজন প্রতিনিধি নিয়ে বাংলাদেশে যাবেন। তার আগে পাক সরকারকে কথা দিতে হবে যে, তাঁরা শান্তি চান। মুজিব ও তাঁর সমর্থকরা বাদশা খানের প্রস্তাবে সম্মত হবেন কি-না সেটা বড় কথা নয়, শান্তিপূর্ণ পথে সমাধান সম্ভব কি-না তার চেষ্টা করে দেখবেন তিনি। তাঁর প্রস্তাবে পাক সরকারের কোন সাড়া পাওয়া যায়নি এখনো পর্যন্ত। সাড়া পাওয়া যাবে বলেও মনে হয় না। সদিচ্ছা থাকলে আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক অধিকারকে এভাবে পিষ্ট করে ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতেন না।