পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৭৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩০০। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের কালান্তর ২৭ মে, ১৯৭১ প্রশ্নে ভারত সরকারের দ্বিধা কাটেনি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের প্রশ্নে ভারত সরকারের দ্বিধা কাটেনি নয়াদিল্লী, ২৬মে-বাংলাদেশ সম্পর্কে আট ঘন্টার লোকসভা বিতর্কের জবাবদানকালে প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি মিসেস ইন্দিরা গান্ধী আজও স্বীকৃতিদান সম্পর্কে সদস্যদের সম্মিলিত আকাঙ্খা পূরণ করতে পারেন নি। আজও তিনি বলেছেন, “আমরা ঝুঁকি নিতে ভয় পাই না। দরকার হলেই ঝুঁকি নেব।” অথচ তাঁর দলের বিশিষ্ট সদস্য শ্রী দীনেশ সিং বলেছেন, ইতিমধ্যেই ভারত অনেকটা দেরী করে ফেলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে একটা জিনিস খুব সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলি কি করে সেদিকে ভারত তাকিয়ে আছে। ইউএনআই-এর সংবাদে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা লোকসভায় বলেছেন, বাংলাদেশে যে সঙ্কটজনক অধ্যায় সূচিত হয়েছে সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমাজকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। এই অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা যাতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় ও বজায় থাকে তা দেখা বিদেশী দেশগুলোর কর্তব্য। আর তা করতে ব্যর্থ হলে তার পরিণতি খুব বিপজ্জনক। শ্রীমতি গান্ধী বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা রাজনৈতিক বা অর্থনীতিক সমস্যা নয়। এ হচ্ছে সমগ্র অঞ্চলের মানুষের জীবণমরণ লড়াই। তিনি বলেন, একটি গোটা জাতিকে ধ্বংস করার সুপরিকল্পিত প্রয়াস থেকে আজকে বাংলাদেশে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। আর সেই গণহত্যার কার্যকরণ পরিণতিস্বরূপ হাজার পুরুষ নারী শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে বা লাখো মানুষকে শরনার্থী করে, ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। শ্রীমতি আজ পুনর্বার বলেন, আমরা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের প্রশ্নটি প্রতিনিয়ত ভেবে দেখছি। এ ব্যাপারে বা অন্য ব্যাপারে আমরা যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করি না কেন তা স্বাধীনভাবে বিচার বিবেচনা করে গ্রহণ করব। আমাদের বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত করব। প্রধানমন্ত্রী আজ সদস্যদের প্রতিশ্রুতি দেন, বাংলাদেশের প্রশ্নে সব বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ংযোগ রক্ষা করে চলবেন। তিনি সদস্যদের বলেন, পাকিস্তানের নির্বাচনে যে রায় প্রকাশিত হয়েছে গণতন্ত্রের এর চেয়ে কোন সুস্পষ্ট প্রকাশ হওয়া কি সম্ভব? তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অনেক গালভরা বুলি শুনেছি। মিত্র দেশগুলি দাবি করেন, গণতন্ত্র বাঁচাবার জন্য নাকি তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নেমেছিলেন কিন্তু এখন তারা কোথায়? তিনি বলেন, কোন কোন দেশ বাংলাদেশের মানুষকে বিছিন্নতাকামী আখ্যা দিয়েছেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষ পূর্বাঞ্চলে বাস করে। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংখ্যাধিক্যের বিছিন্নতাকামী আখ্যা দেওয়া কি সমীচীন হয়েছে? তিনি বলেন সাড়ে সাত কোটি মানুষ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এ কারণেই ভারতের কঠোর মনোভার প্রকাশিত হয়নি, বাংলাদেশের মর্মান্তিক ঘটনার ছাপ ভারতের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে এসে পড়েছে। এই হচ্ছে অবস্থার বাস্তব রূপায়ন। এ কোন প্রচার নয়। পূর্বাহ্নে প্রাক্তন মন্ত্ৰী শ্রী দীনেশ সিং বলেন, ভারত কোন ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করলে তবে বিদেশী রাষ্ট্রগুলি বাংলাদেশের ঘটনার সঙ্গে নিজেদেরকে জড়িত করবে। তিনি বলেন, অনেক দেরী হয়েছে। আর কালবিলম্ব না করে ভারত সরকারের ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করা উচিত।