পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৭৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

766 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩০৩। বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ ও সুদৃঢ় নীতির কম্পাস ২৯ মে, ১৯৭১ দাবীতে সম্পাদকীয় বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ ও সুদৃঢ় নীতির দাবীতে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দানের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চাপ আসতে পারে, এজন্যই ভারত সরকার ইতস্তত করছেন। সাধারণভাবে এরকম একটা ধারণাই এখন জনসাধারণ্যে দেখা যাচ্ছে। ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলেও বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলি হয়তো ভারত সরকারকে অনুসরণ করে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেবে না। এটাই নাকি ভারতের পক্ষে স্বাধীনভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে যথেষ্ট বাধার কারণ। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে বিদেশী রাষ্ট্রগুলির মনোভাব কি দাঁড়াতে পারে, তা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। চীন সুস্পষ্ট ভাষায় ভারতকে এই মর্মে হুশিয়ার করে দিয়েছে যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারত যেন আর নাক গলায়। সর্ব প্রথমে চীনের হুমকির বিষয়ে আলোচনা করা দরকার। পূর্ব বাংলার ঘটনাবলীতের উদ্বেগ প্রকাশ করে ১৯৭১ সালের ৩রা এপ্রিল সোভিয়েট রাশিয়া পাকিস্তানের কাছে এক নোট পাঠিয়েছিল। এর পরেই আসে ১৯৭১ সালের ৬ই এপ্রিল চীনের তরফে ভারতের প্রতি হুঁশিয়ার বাণী। চীনের এই হুশিয়ারীর পরেই এদেশে অনেকেই বলতে শুরু করলেন, “আর কিছু করার প্রয়োজন নেই”, বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারত যেন আর জড়িয়ে না পড়ে। অবশ্য চীনের ঐ নোটের তাৎপর্য খুব সতর্কতার সঙ্গে অনুধাবন করলে দেখা যায় (ক) সম্ভবতঃ রাশিয়ার নোটের প্রত্যুত্তরে পাকিস্তানের অনুরোধে বা চাপে চীন ভারতের প্রতি ঐ ধরনের হুশিয়ারী দিতে থাকতে পারে। যদি চীন সত্যিই তার হুশিয়ারী সম্পর্কে সিরিয়াস হয়ে থাকে, তাহলে তাকে অবশ্যই ভারত ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। আর এরকম ব্যবস্থা নেওয়ার অর্থই হলো বিশ্বযুদ্ধকে ডেকে আনা। কিন্তু এই মুহুর্তেই যে চীন বিশ্বযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত, তা কারুর মত নয়। শুধু হুমকি দিয়েই চীন পাকিস্তানের সঙ্গে তার বন্ধুত্বকে বজায় রাখতে চেয়েছে-তার বেশী কিছু নয়। (খ) চীন যে হুশিয়ার দিয়েছে, তাতে কোথাও পূর্ববাংলার আন্দোলন ও দাবীর ন্যায্যতা সম্পর্কে যেমন কিছু বলেনি, তেমনি ঐ আন্দোলন ও দাবীর সম্পর্কে অন্যভাবে কোন বক্তব্য রাখেনি। চীন শুধু ভারতের হস্তক্ষেপেরই নিন্দা করেছে। এর অর্থ হলো পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নটি সম্পর্কে বিবেচনার পথ সে খোলাই রেখেছে। এ প্রশ্ন নিয়ে তখনই সে বিবেচনা করবে, যখন তার স্বার্থের প্রশ্ন দেখা দিবে। (গ) যদি পাকিস্তান চূড়ান্ত পরিণতিতে সম্পূর্ণরূপে শত্রভাবাপন্ন দুটি ইউনিট ভেঙ্গে পড়ে আর ঐ ইউনিট দু’টি একে অপর থেকে স্বাধীন হয়ে যায় তাহলে চীন এবং অন্যান্য শক্তিগুলিকে (যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েট রাশিয়া ও বৃটেন) একটিকে ছেড়ে আর একটিকে বেছে নিতে হবে। অবশ্য উপরোক্ত রাষ্ট্রগুলির প্রত্যেকেই পাকিস্তানের ঐক্যাবস্থা বজায় রাখতে আগ্রহী। কারণ, সাধারণভাবে এশিয়ায় এবং বিশেষভাবে ভারত উপমহাদেশে নিজেদের আন্তর্জাতিক রণকৌশল স্বাৰ্থ বজায় রাখার জন্য তারা প্রত্যেকেই ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানকে ব্যবহার করার সুযোগ পাবে। এতে তাদের দুটি উদ্দেশই সিদ্ধ হবে- ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানকে দাঁড় করিয়ে সাম্য সৃষ্টি করা এবং