পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

768 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড উপরোক্ত বিষয়গুলি বিবেচনা করে বলা যায় যে, চীন যে হুশিয়ারী দিয়েছে তা ধর্তব্যের মধ্যে না আনাই উচিত হবে। তাই আমরা পাকিস্তানকে তার ইচ্ছামত বাংলাদেশ ও তার সংগ্রামী নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে দিতে পারি না। ভৌগোলিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই রাশিয়া ও পাকিস্তান, বিশেষত: পশ্চিম পাকিস্তান সম্পর্কে বিশেষ আগ্রহী। চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের খপ্পর থেকে পাকিস্তানকে ছিনিয়ে আনতে রাশিয়া চায়। নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এখন রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি রক্ষণশীল। রাশিয়াও স্থিতাবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে চলতে চায়। প্রতিরক্ষা এবং অন্যান্য কারণের জন্য ভারত যুক্তরাষ্ট্রের চাইতে সোভিয়েট রাশিয়ার ওপরই বেশী নির্ভরশীল। কিন্তু রাশিয়ার উদ্বেগ নিয়ে ভারতের পক্ষে মাথ ঘামানোর প্রয়োজন নেই। কারণ, ভারত দৃঢ়তার সঙ্গে তার নীতি অনুযায়ী এগিয়ে গেলে, রাশিয়া কোন অবস্থাতেই ভারতকে পরিত্যাগ করতে পারবে না। কেননা, তাহলে তাকে সমগ্র এশিয়াতেই তার (রাশিয়ার) বর্তমান আত্মরক্ষা ব্যবস্থা পরিত্যাগ করতে হবে। বর্তমানে আমেরিকায় বাংলাদেশ বিরোধীদের চাইতে সমর্থকদের সংখ্যাই বেশী। এখন সেখানকার প্রভাবশালী মহল পশ্চিম পাকিস্তানকে বাংলাদেশের অবস্থার জন্য নিন্দা করছে। অবশ্য মার্কিন সরকার ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে সমর্থন করে এখনও সেই পুরোনো খেলাই খেলছে। স্বাধীন সত্তা নিয়ে পূর্ব বাংলায় নব অভু্যদয় ঘটেছে তাকে এখন ইংল্যান্ডের শ্রমিকদল সাহায্য সমর্থন করতে প্রায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী যে নারকীয়তা ও নির্মমতার মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলায় হত্যাকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে, তা সেখারনকার ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলও সমর্থন করতে পারছে না। ব্রহ্মদেশ, সিংহল, নেপাল, সিকিম প্রভৃতি ভারতের চর্তুর্দিকস্থ ছোট ছোট রাষ্ট্র পূর্ব বাংলার পরিস্থিতিতে ভারত কী রকম আচরণ করে এটা দেখার জন্যই অপেক্ষা করছে। যদি ভারত তার কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভারতের প্রতি এখনও তাদের যেটুকু আস্থার ভাব আছে, সেই ভাবটুকু একেবারেই কেটে যাবে এবং তারা আত্মরক্ষার জন্য অন্যান্য বৃহৎ শক্তির জন্য ঝুঁকে পড়বে। অবশ্য ভারত সরকারও এসব বিষয়ে অবহিত। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলির তথাকথিত চাপেই যে ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের পক্ষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ইতস্তত করছে তা-ও বলা যায় না। এ ব্যাপারে অন্যান্য শক্তির ওপর ভারত সত্যিই কোন দোষারোপ করতে পারে না। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটা নেবার ভার ভারতকেই নিতে হবে- ঐ সব রাষ্ট্রকে নয়। বাংলাদেশের ব্যাপারে জড়িয়ে পড়ার মত শক্ত নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই তা বলা যায় না। তাছাড়া, আজ কি একটি মাত্র ব্যক্তির হুকুমে, তাঁর নিজের শাসনেই, ভারত সরকার চলছে না? কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অন্যান্য মন্ত্রীদের অস্তিত্বটা তাঁর মর্জির উপরই নির্ভর করে। নিজেরই ইচ্ছামত প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীসভা গঠন করতে পারেন- ভাঙ্গতেও পারেন। ভারতের ঐক্যবদ্ধ জনমত হল, বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হোক- আর খোলাখুলিভাবে উপযুক্ত পরিমাণ সাহায্য দেওয়া হোক। এ প্রশ্ন নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে আমাদের সমর বিভাগের সেনাপতিরা যে বিরোধিতা করবে তা সত্য নয়। অবশ্য তাদের মধ্যে সকলেই খুব উৎসাহী নাও হতে পারেন। কিন্তু যুদ্ধ অথবা শান্তি যাই হোক না কেন, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ, সমর বিভাগ নয়। রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মান্য করাই ও আদেশ পালন করাই সামরিক বিভাগের কাজ। সমর বিভাগের ওপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার অর্পণ করলে, তারা সব সময় উপযুক্ত প্রস্তুতির অভাবের ছুতো দেখিয়ে যুদ্ধকে পরিহার করতে চাইবে। আর প্রস্তুতি