পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

771 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩০৪। বাংলাদেশের স্বাধীনতা কম্পাস ২৯ মে, ১৯৭১ সংগ্রামে ভারতের ভূমিকা ংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের ভূমিকা সুদিন ভট্টাচার্য আপাতঃ দৃষ্টিতে মনে হয় ইয়াহিয়া খাঁ বোধ হয় যা চেয়েছিলেন তাই হতে চলেছে। পূর্ব বাংলার প্রায় এক কোটি হিন্দু এবং কয়েক লক্ষ শিক্ষিত সংস্কৃতিবান মুসলমান সে দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে ভারতের আশ্রয় নেওয়ার পথে। এর ফলে সুচতুর রাজনীতিবিদ ভুট্টোর আশা পূর্ণ হবে- বাঙ্গালীরা পাকিস্তানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিণত হবে। তার প্রতিক্রিয়া হবে সুদূরপ্রসারী। পূর্ব বাংলায় গণবিপ্লবের সময় পাকিস্তান সরকার যেমন মাসাধিকতাল ধরে গড়ে দৈনিক ১ কোটি টাকা সামরিক ব্যয় করতে বাধ্য হয়েছেন এবং প্রায় ৭০ কোটি টাকার মত বৈদেশিক মুদ্রা রোজগার করতে অক্ষম হয়েছেন তেমনি ভারতকেও প্রতিদিন আশ্রয়প্রার্থীদের ভরণপোষণের জন্য একই প্রকার অর্থ ব্যয় করতে হবে তা ছাড়া সামাজিক এবং রাজনৈতিক কুফল তো আছেই। কিন্তু কেন এমন হতে চলেছে? আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের ব্যর্থতা? পাকিস্তানী সৈন্যদের অসাধারণ উন্নতমানের অস্ত্রাদি এবং দক্ষতা ? না ভারতের ব্যর্থতা ? এই তিনটি বিষয় একে একে আলোচনা করা যাক (১) আওয়ামী লীগ খুব বেশী দিনের দল নয়। নেতৃত্বও তরুণ। এর সুবিধা ও অসুবিধা দুইই আছে। অহিংস সংগ্রামের অভ্যস্ত নেতৃত্ব হিংস সংগ্রামের প্রস্তুতি চালাতে স্বভাবতঃই অক্ষম হয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত : এদের সমর্থকদের একাংশ, ছাত্ররা আদর্শনিষ্ঠ এবং সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে থাকলেও দূর গ্রামাঞ্চলে তাদের প্রভাব ততটা কার্যকর হয়নি। সেখানে এখনও লীগ যুগের ধর্মান্ধতার রেশ কম বেশী রয়ে গিয়েছে। ইয়াহিয়া চক্র এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। তৃতীয়তঃ শেখ মুজিবের ব্যক্তিত্ব এবং নেতৃত্ব ছিল এই দলের সবচেয়ে বড় ভরসা। ২৫শে মার্চ রাত্রে মুজিবর রহমান পাকিস্তানী সৈন্যদের হাতে গ্রেফতার হওয়ায় তার দল অনেক পরিমাণে দিশাহারা হয়ে পড়ে। সশস্ত্র সংগ্রাম সম্পর্কে লীগের নেতৃবৃন্দের বিন্দুমাত্র ধারণা থাকলে তারা বিদ্রোহ করার জন্য ২৫শে মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন না এবং সৈন্যদের হতো পুলিশ ও ইপিআরকে নিরস্ত্র এবং প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে দিতেন না এবং প্রথম দিনেই তারা ঢাকা বিমানঘাঁটি দখল করবার চেষ্টা করতেন। (২) পাকিস্তান মোটামুটি শক্তিশালী দেশ। টাইম’ পত্রিকার তথ্য যদি ঠিক হয় তকে বুঝতে হবে যে দেশের ঐ সৈন্যদলে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে মাত্র একজন পূর্ব বাংলার মানুষ। মাত্র ৫/৬ ব্যাটেলিয়ন সৈন্য পূর্ব বাংলার- তার মধ্যেও বহু অবাঙ্গালী সৈন্য ও অফিসার ছিল। এর মধ্যেও অর্ধেক ছিল পশ্চিম অংশে। সুতরাং বিদ্রোহের দিনে মাত্র হাজারখানেক সামরিক শিক্ষিত বাঙ্গালী পূর্ব বাংলায় উপস্থিত ছিলেন ইপিআর প্রকৃতপক্ষে সীমান্ত পুলিশ। এদের অল্প সংখ্যক ষ্টেন, এলএমজি ২" ও ৩" মর্টার ছিল। কিন্তু সামরিক শিক্ষার মানের দিক দিয়ে এরা খুব পশ্চাৎপদ আনসারদের অস্ত্রশস্ত্র খুব কমই ছিল, সামরিক শিক্ষার মানও ছিল শোচনীয়। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের প্রতি আনুগত্য ও স্বদেশ প্রেমের দ্বারা তো যুদ্ধ করা যায় না- বিশেষতঃ পূর্ব বাংলার খোলামাঠে এবং গ্রীষ্মকালের ফসলহীন ক্ষেতের উপর যুদ্ধ হলে জিতবার কোন আশাই থাকে না আধুনিক সৈন্য বাহিনীর বিরুদ্ধে। পাকিস্তানের সামরিক শক্তি “ষ্টেটসম্যান” -এর হিরন্ময় কার্লেকার মহাশয় যা দিয়েছেন ততটা নয়“ইনষ্টিটিউট অব ষ্ট্রাটেজিক ষ্টাডিজ” -এর মতে তার চেয়ে অনেক কম। নিয়মিত সৈন্য প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার,