পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

794 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩১৬। দায়িত্ব পালনে কেন্দ্রের গড়িমসি কালান্তর ৬ জুন, ১৯৭১ দায়িত্ব পালনে কেন্দ্রের গড়িমসি লোকসভায় প্রতিরক্ষা মন্ত্ৰী শ্রী জগজীবন রাম বলেছেন যে, বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের পূর্ণ দায়িত্ব কেন্দ্রের এবং সে দায়িতু তারা অস্বীকার করছেন না। কিন্তু দায়িত্ব স্বীকার ও দায়িত্ব পালন এক কথা নয়। শরণার্থীদের যে প্রবল চাপ পশ্চিমবঙ্গের উপর পড়েছে তার গুরুত্ব উপলদ্ধি এ যাবত কেন্দ্রীয় সরকার করতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। যদি উপলদ্ধি করতেন তবে তাঁরা সমস্যাটা জরুরী বিবেচনায় সমাধানের পথে আরো দ্রুত অগ্রসর হতেন। আসলে গোড়ায় গলদ কেন্দ্রীয় সরকরের চূড়ামণিরা হয়তো ভেবেছিলেন দু’চার দশ লক্ষ শরণার্থী আসবে এবং তাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় রেখে দিয়েই আবার স্বল্পকালের মধ্যে ংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়া যাবে। সমস্যাটা যে তার চেয়ে অনেক বেশী গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়ে উঠতে পারে এমন দূরদৃষ্টি তাদের ছিল না বলেই মনে হয়। কিন্তু অবিরাম শরণার্থীর স্রোতে পশ্চিমবঙ্গ প্লাবিত হতে চলেছে। বন্যার জল বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবনের মত এই জলস্রোত পশ্চিমবঙ্গের চরম বিপর্যয় ঘটাতে পারে। তাই রাজ্য সরকার বিষম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। চল্লিশ লক্ষ শরণার্থীর মধ্যে অনুমান উনিশ লক্ষ ছাদের তলায় কোনরকমে মাথা গুজবার ঠাই পেয়েছে আর পাঁচ লক্ষাধিক শরণার্থী তাড়াহুড়ো করে তোলা চালায় আশ্রয় নিয়েছে। বাকী সব উন্মুক্ত আকাশ বা গাছের তলায়। প্রতিদিন জনস্রোতের মতো শরণার্থীর দল চলে আসছে এপারে। বর্ষা নেমেছে। নিচে জল-কাদা, উপরে বর্ষার ধারা। এই ছত্রহীন লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর কী দশা হবে এখন? মাথা গুজবার জন্যে তারা কোথায় যাবে? নাম তালিকাভূক্ত হবার পর চার দিনের মতো রেশন পায় তারা। সপ্তাহের বাকী ক'দিন কী দিয়ে উদরের জ্বালা নিবৃত্তি হবে তাদের? তার উপর মহামারীর আকারে কলেরার প্রাদুর্ভাব। সর্বস্বান্ত হয়ে সূদুর পথ অতিক্রম করে যারা আসছে পথেই তারা প্রায় অর্ধমৃত হয়ে পড়ে। কোন প্রকারে মুমূর্ষ অবস্থায় এসে পৌঁছাবার পরেও যদি আবার তাদের চরম প্রতিকূল অবস্থারই মধ্যে পড়তে হয় তবে অবশিষ্ট প্রাণশক্তিটুকুও নিঃশেষ হতে দেরি হয় না। হচ্ছেও তাই। কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়েই অনেকে আসছে এপারে; কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসা ব্যবস্থা এতই অপ্রতুল যে তাদের মধ্যে অনেকেই প্রথমিক চিকিৎসা পাবার আগেই চোখ বুজে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। উপযুক্তসংখ্যক চিকিৎসক এবং শুশ্ৰুষাকারীরাও যেমন নেই তেমনি প্রয়োজনীয় ঔষধপত্রেরও অভাব। এমন একটা গুরুতর পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের তৎপরতার নমুনা দেখে অবাক হতে হয়। এ যাবৎ ত্ৰাণ কার্যের জন্য কেন্দ্রের কাছ থেকে এসেছে মাত্র ৩ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বাবদ চাওয়া হয়েছে ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা; কিন্তু তা এখনো পর্যন্ত পৌঁছায়নি। আশ্রয়স্থল নির্মাণের জন্য ৩ কোটি টাকা চেয়ে পাওয়া গেছে মাত্র ১ কোটি টাকা । কলেরা মহামারী আকারে দেখা দেওয়ায় কলেরা ইনজেকশান ও স্যালাইন বোতল চেয়ে যা পাওয়া গেছে তা সমুদ্রে বারিবিন্দুবৎ । সুতরাং দায়িত্ব পালনে কেন্দ্রীয় সরকর এ যাবত যে কৃতিত্ব দেখিয়েছে তাতে কৃতাৰ্থ না হয়ে পারা যায় না। মুখে শরণার্থীদের জন্য দরদের অন্ত নেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের অমার্জনীয় ঔদাসীন্যের ফলে হতভাগ্য শরণার্থী ও পশ্চিমবঙ্গের নিরুপায় মানুষ উভয় কুলই যে ভুবতে বসেছে সেদিকে নজর আছে কার? কানে জল ঢুকলে টাকা হয়তো তারা কিছু দেবেন। কিন্তু টাকা দিলেই জিনিস মিলবে এমন নিশ্চয়তা কোথায়? রেশন দিলেও তো তা রেধে খেতে হবে। শরণার্থীরা জালানীর জন্য কার কাছে যাবে? সীমান্তবর্তী এলাকার যেসব