পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

796 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩১৭। বাংলাদেশের ব্যাপারে শুধু বিশ্ববিবেক যুগান্তর ৬ জুন, ১৯৭১ নয় দেশের বিবেকও জাগাতে হবে ংলাদেশের ব্যাপারে শুধু বিশ্ববিবেক নয়, দেশের বিবেকও জাগাতে হবে গত সোমবার কল্যাণসুন্দরম লোকসভায় মন্তব্য করেন- ভারত সরকার পাকিস্তানকে তুষ্ট করে চলেছে। এ কথায় শ্রীমতি গান্ধী খুবই মর্মাহত হয়েছেন। একজন সিপিআই নেতা চেমবারলিনের কুখ্যাত মিউনিখ নীতির সঙ্গে ভারত সরকারের পাকিস্থান নীতির তুলনা টানবেন- এমন কথা প্রধানমন্ত্রী বোধহয় কল্পনাও করেননি। তিনি খুব জোরের সঙ্গে এই মারাত্মক অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে, “আমরা বাংলাদেশের ঘটনাবলী সম্পর্কে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণে তৎপর রয়েছি”- এর চেয়ে বড় কোন আশ্বাসও প্রধানমন্ত্রী সেদিন দিতে পারেননি। মে মাসের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করেছিলেন- নীতি সংক্রান্ত ব্যাপারে ভারত অন্যান্য দেশের মনোভাবের উপর নির্ভরশীল নয়; সে নিজেই নিজের নীতি স্থির করে থাকে। কিন্তু তবু বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার বর্বর অত্যাচার শুরু হওয়ার পর থেকে আমাদের সরকার যে কটনীতিক স্তরে খুবই তৎপর হয়ে ওঠেনি- এমন কথা কেউ বলতে পারবেন না। বিভিন্ন দেশের রাজধানীর সঙ্গে নয়াদিল্লী নিয়ত সংযোগ রক্ষা করে চলেছে। অন্যান্য দেশের সরকারের সঙ্গে নোট বিনিময় করাও হয়েছে। ইয়াহিয়া ভারতের উপর কী বিপুল সমস্যা চাপিয়ে দিয়েছেন, তার ফল কী দারুণ বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াতে পারে- আমরা ঐ সব দেশকে সে কথা বোঝাবার চেষ্টা করেছি। আমরা আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিদেশে পাঠিয়েছি। তিনি কয়েকটি দেশে গিয়ে বাংলাদেশের সমস্যা বুঝিয়ে বলবেন শিল্পোন্নয়ন মন্ত্রী শ্রী মঈনুল হক চৌধুরী ইতিপূর্বেই ঐ কাজ কিছুটা সেরে এসেছেন। একই কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন শ্রম ও পুনর্বাসন মন্ত্ৰী শ্রী খাদিলকর। কূটনীতিক কাজে তিনি এত ব্যস্ত যে শরণার্থীদের দেখাশোনার কাজটা তিনি তার অধস্তনদের হাতেই ছেড়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিষয়ে নয়াদিল্লীর বক্তব্য দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিকে বুঝিয়ে দিয়ে তাদের আমাদের পক্ষে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী শ্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়। বাংলাদেশ নিয়ে আমরা যে প্রবল কুটনীতিক অভিযান শুরু করেছি, তা আগে আর কখনো দেখা যায়নি। যে সব দেশে আমাদের প্রতিনিধিরা যাচ্ছেন, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই পাকিস্থান কুটনীতিক সম্পর্ক আছে। তাদের নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগও আছে; এবং আছে, তাদের নিজস্ব অর্থ আড়াই মাস ওদের লোকেরাও ইয়াহিয়ার রক্ত ক্ষুধার তান্ডব স্বচক্ষে দেখেছেন। তবু আমাদের সরকার অতি আশায় বোধ হয় ভাবছেন- ভারত গিয়ে ওদের ব্যাপারটা ঠিকমত বুঝিয়ে দিলেই ওদের বিবেক একেবারে পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং ওরা ভারতের পক্ষে চলে আসবে। ফল যা-ই দাঁড়াক বিশ্ব-বিবেক জাগ্রত করার এই প্রয়াসের জন্য ভারত সরকারের সাধুবাদ অবশ্য প্রাপ্য। কিন্তু ভারতের যে সব রাজ্য সরাসরি শরণার্থী সমস্যা দ্বারা পীড়িত হচ্ছে না, তাদের বিবেক জাগানোর চেষ্টা যথেষ্ট রকম হয়েছি কি? শ্রীমতি গান্ধী তার সহযোগী মন্ত্রীদের কিংবা সর্বশক্তিমান রাজনীতি বিষয়ক কমিটির বিবেকই কি জাগাতে পেরেছিন? শরণার্থীদের ঠাঁই দেওয়ার ব্যাপারে অধিকাংশ রাজ্যের যা মনোভাব তাতে মনে হয় বিদেশে দূত না পাঠিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিবেক জাগ্রত করা এবং পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় রাজ্যে লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তর সমাবেশ ভারতের পক্ষে কী সংকট ডেকে এনেছে তা বুঝিয়ে বলার জন্য বিভিন্ন রাজ্যে দূত পাঠালেই ভাল হতো।