পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

807 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩২০ । বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাধান কালান্তর ৮ জুন, ১৯৭১ সম্পাদকীয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাধান বাংলাদেশের সমস্যার একটা সমাধান রাজনীতিক সমাধান হোক এ ইচ্ছা পৃথিবীর কোন কোন রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রনায়করা প্রকাশ করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন বক্তৃতায় এর একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানের কামনা ব্যক্ত করেছেন। সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গফফার খান মীমাংসায় পৌছানোর জন্য পশ্চিম পকিস্তানের জঙ্গশাহী ও বাংলাদেশের নেতাদের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাবও করেছিলেন। পকিস্তানের জঙ্গশাহী মেনে না নেওয়ার ঐ প্রস্তাবের অপমৃত্যু ঘটেছে। তা সত্ত্বেও পকিস্থানের নজীরবিহীন ঘটনার কোন রাজনীতিক সমাধান সম্ভব কিনা এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আজও গবেষণার শেষ নেই। রবিবার স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম এক বেতার ভাষণে এই সমাধানের ভিত্তি সম্পর্কে ঐ সরকারের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। এ পর্যন্ত যারাই রাজনীতিক সমাধানের কথা ভেবেছেন তারা প্রত্যেকেই পাকিস্তানের ঐক্য অক্ষুন্ন রেখে সমাধানের কথা হয়ত চিন্তা করছিলেন। বাঙ্গালাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান তাদের এই চিন্তাকে অবান্তর এবং ভ্রান্ত বলে উল্লেখ করেছেন। “লাখো শহীদের রক্তে ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান মরে গেছে, তাকে আর বাঁচানো যাবে না’। সৈয়দ নজরুল ইসলামের এই মর্মান্তিক উক্তির মধ্যে থেকে ভাবপ্রবণতার প্রাবল্য থাকতে পারে কিন্তু এটাই আজ বাংলাদেশের কাছে বস্তব ঘটনা । একই রাষ্টের মধ্যে থেকে যে পূর্ববাংলা ভৌগোলিক দিক থেকে দিয়েছে। একে গোঁজামিল দিয়ে ঐক্যবদ্ধ রাখার কোন প্রয়াসই আর সফল হতে পারে না। অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান অত্যান্ত দৃঢ়তার সঙ্গে এবং সুস্পষ্ট ভাষায় সেই ঘোষণা করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশকে ভিত্তি করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সমস্যার সমাধানের যে চারটি পূর্ব শর্ত দিয়েছেন তার কোন একটিকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান করা যায় না। মুজিবুর রহমান সমেত অন্যান্য গণপ্রতিনিধিদের মুক্তি , হানাদার বাহিনীর বাংলাদেশ ত্যাগ, স্বাধীন, গনপ্রজাতন্ত্রী সরকারের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ ছাড়া বাংলাদেশে কোন শান্তি প্রতিষ্ঠার চিন্তা প্রকৃতই অবাস্তব। এই উপমহাদেশে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা এবং সংগ্রামী জনসাধারণ স্বাধিকারও স্বায়ত্ত্বশাসনের জন্যে যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের একচেটিয়া পুঁজি, সামন্ততান্ত্রিক স্বার্থ এবং সামরিক জুণ্টার মিলিত আক্রমণ তাকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে চেয়েছিলো। বর্ষার প্রবল জলরাশিকে শুধু বাঁধ দিয়ে ঠেকানো যায় না। তার অবাধ প্রবাহের পথ করে না দিলে সে বাঁধ ভাঙ্গে। ইয়হিয়ার বর্বর সৈন্যদের নিষ্ঠুরতা সেই বাঁধ আজ বাংলাদেশের জনতা ভেঙ্গে গুড়িয়ে এগিয়ে চলেছে। স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা, স্বায়ত্ত শাসন থেকে সার্বভৌমত্ব, পশ্চিমী পুঁজির নাগ পাশের বাঁধন শিথিল নয়; একেবারে ছিন্ন করার শপথে বাংলাদেশের জনতা আজ সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। জনতার সেই দুরন্ত আবেগকেই সমাধানের শর্তরূপে বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কদের কাছে হাজির করেছেন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান। বাংলাদেশের সমস্যা অনেকদিন আগেই পাকিস্তান রাষ্টের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়”- এর গভী ছাড়িয়েছে। একটা সামরিক চক্রকে সামনে রেখে বাঙালী জাতিকে (ধর্মের ভিত্তিতে নয়) এবং বাংলাদেশকে পশ্চিম পাকিস্থানের ঐ একচেটিয়া পুঁজির ঔপনিবেশিক শোষণের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করার নীতি যেদিন থেকে গ্রহণ করা হয়েছে সেদিন থেকেই বাঙ্গলী জাতির স্বাধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রাম ঘরোয়া আন্দোলনের সীমা অতিক্রম করেছে।