পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩২৬। ভারত ভুবতে বসেছে কম্পাস ১২ জুন, ১৯৭১ সম্পাদকীয় ভারত ডুবতে বসেছে কত দ্রুত গতিতে ভারতের অর্থনীতি সমাজ ও রাজনীতি গভীর সঙ্কটের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সমস্যা নিয়ে, তা আজও কুপমুভূক ভারতীয়দের চেতনাতে আসেনি। ভারত সরকারের সত্যিই কোন নীতি আছে কি না সন্দেহ অবস্থার চাপে পড়ে ব্যবস্থা করা যাবে, এর চেয়ে পরিস্কার কোন দৃষ্টি তাদের ছিল না। কিন্তু অবস্থা যা ঘনিয়ে উঠেছে তাদের এখন এই নেতৃত্ব হাবুডুবু খাবে মাত্র। নেতৃত্ব হাবুডুবু খাক বা যাক সেটা সবচেয়ে বড় কথা নয়, সবচেয়ে ভাবনার বিষয় হলো এই যে এবারে বুঝি ভারতই (এদেরই হাতে অবশ্য ) ডুবতে বসেছে। ংলাদেশে অনতিবিলম্বে ইয়াহিয়া বর্ষার জলকাদায় ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে ডুবে যাবে, এ জাতীয় অতি সরল হিসেবে মূর্খতার সাফল্য থেকেই অমন সহজাত স্ট্রাটেজী রূপে এদেশে চালু হয়েছে। দিতে পাকিস্তানের এক কোটি করে নাকি টাকা খরচ হচ্ছে, কিন্তু এক শরণার্থীদের ভাত কাপড় দিতেই কি ভারতের সৈনিক দুই কোটি টাকার ব্যবস্থা করতে হবে না? এখন স্বীকার করা হচ্ছে যে ইতিমধ্যেই শরণার্থীর সংখ্যা পঞ্চাশ লক্ষ্যে দাঁড়িয়েছে। আর শরণার্থীর আগমনী স্রোত সহসা দ্বিগুণ বেগে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাঝখানে কয়েকদিনের জন্য এই স্রোতটা কিছু কম ছিল। অমনি কর্তৃপক্ষ যেন একটু আশ্বস্ত বোধ করছিল। কিনউত হয় আজ কয়েকদিন ধরে এই দৈনিক গড়ের হার লক্ষাধিক হয়েছে। কেউ বলেছেন এক লক্ষ, কেউ বলেছেন এক লক্ষ বিশ হাজার করে দৈনিক এই আমদানী। আসলে এই জনস্রোতের বৃদ্ধিটা বুঝতে হবে বাংলাদেশের ভিতরকার অবস্থা থেকে। পাকবাহিনীর আশ্রয় নেয়। এদিকে মুক্তিফৌজ পাকসামরিক বাহিনীর আক্রমণের উত্তরোত্তর বৃদ্ধির সাথে সাথে ভারতের সীমান্তের দিকে চলে আসতে বাধ্য হয়, ভিতরকার প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ে, জনসাধারণের উপর নির্মম অত্যাচার ও হত্যার বিভীষিকা ও তাম্ভব সৃষ্টি করা হয়, রাস্তার ধারে ধারে গ্রামগুলি জুলিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সীমান্ত বরাবর পাক বাহিনীর অগ্রগতির ফলে প্রথমটায় সীমান্ত বরাবর জেলাগুলি থেকেই ভারতে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী প্ৰাণ ভয়ে এক বস্ত্রে চলে আসতে থাকে- রাত্রির অন্ধকারে সীমান্ত পার হতে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের ভিতরকার জেলাগুলি থেকে প্রথমে অত শরণার্থীর স্রোত সৃষ্টি হয়নি। তারা অপেক্ষা করছিল দেখতে শেষ পর্যন্ত কী হয়। শেষ পর্যন্ত কিছুই হলো না, ভারত প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করলোই না, বলে মৌখিক আশ্বাস দিতে ছাড়ে না। এদিক পাক নির্যাতন উৎপীড়ন ও নিধন যন্ত্রের নিষ্পেষণ পূর্ববাংলার দূরতম পল্লীতেও গুন্ডাশ্রেণীর লোকদের সহায়তায় বিস্তৃত হলে লাগলো। এখন তো আর থাকা যায় না, এই প্রত্যয় ও ভয় দৃঢ় হবার সাথে যে যেখান থেকে পারে, যত দূর থেকেই হোক, সীমান্তের দিকেচলতে শুরু করলে। গোটা বাংলাদেশ দেশত্যাগ করতে শুরু করেছে এবার। এবার বরিশাল, ফরিদপুর, ঢাকা প্রভৃতি দূরবর্তী জেলার গ্রাম থেকে লক্ষ লক্ষ নরনারী, শিশু ভারতের দিকে ক্রমবর্ধমান স্রোত ধারায় আসছে। দৈনিক গড় তাই লক্ষাধিক হয়েছে। প্রথমে যারা নিকটবতী অঞ্চল থেকে এসেছিল, তারা অন্তত শক্ত সমর্থন দেহগুলি হেঁটে হোক, ট্রাকে, গাড়ীতে, নৌকাতে, রিক্সাতে এসে পৌছতে পেরেছিল, এবং যতটা আশ্রয় শিবির তৈরী ছিল তাতে এসে মাথা গুজতে পেরেছিল। আজ যারা আসছে, বহু দূর দূর প্রান্ত থেকে ২/৩ সপ্তাহ ধরে পায়ে হেঁটে অর্ধভূক্ত দেখতে পারা