পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

821 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩৩৩ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে কালান্তর ১৭ জুন, ১৯৭১ বনগাঁও সুবৃহৎ সমাবেশ মহিলা ফেডারেশন ও মহিলা সমিতির উদ্যেগে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে বনগাঁও সুবৃহৎ সমাবেশ বনগাঁ, ১৬ জুন (সংবাদদাতা)- বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ভারতীয় মহিলা ফেডারেশন ও পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতির আহবানে বনগাঁর রেল স্কুল ময়দানে গত ১৪ জুন দশ হাজার মানুষের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখযোগ্য, বনগাঁয় আশ্রিত বাংলাদেশ শরণার্থীদের একাংশ এই সভায় যোগদান করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রীমতী রেণু চক্রবর্তী, সর্বভারতীয় বিশিষ্ট মহিলা নেত্রীরা ভাষণ দেন। স্থানীয় জননেতা শ্রী অজিত গাঙ্গুলী এম এল এ মহিলা নেত্রীদের স্বাগত জানিয়ে ভাষণ দেন। শ্রী গাঙ্গুলী বলেন, সমস্যাজৰ্জরিত সীমান্ত শহর বনগাঁ লক্ষাধিক শরণার্থীকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে এবং এগিয়েই থাকবে। বিশিষ্ট মহিলা নেত্রী শ্রীমতি বিমলা ফারুকী বলেন, জঙ্গনায়ক ইয়াহিয়া বাংলাদেশের মানুষের উপর নিষ্ঠুরতম সন্ত্রাস চাপিয়ে দিয়েছে। যার ফলে লাখো লাখো মানুষ এ দেশে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, শুধুমাত্র মানবিক কর্তব্য সম্পাদনের জন্যই আমরা তাদের আশ্রয় দিচ্ছি না, তাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সংগ্রামকে সাহায্য করাও আমাদের উদ্দেশ্য, কারণ আমরাও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তিনি জানান যে, বাংলাদেশ থেকে আগত ভাই-বোনদের সাহায্য এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে জনমত সৃষ্টির জন্য জাতীয় ফেডারেশন ভারতজুড়ে প্রচারাভিযান চালাবার সিদ্ধান্ত করেছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেত্রী মালেকা বেগম এপার বাংলার মানুষের কাছে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেবার জন্য অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, অনেক কষ্টে ও দুর্ভোগে আমরা এ দেশে আশ্রয় নিয়েছি। অন্য দেশে চিরকাল আমরা থাকব না। আমরা এখানে নিজেদের সংগঠিত করে সংগ্রাম তীব্রতর করার প্রস্ততি নিচ্ছি। শ্রীমতি বেগম বলেন, ২৩ বছরেও বাংলার মানুষ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের স্বাদ পায়নি। তাই তারা আজ স্বাধীনতা অর্জনের লাড়াইয়ে নেমেছে। তিনি ইয়াহিয়ার ক্রুরতা হিটলারকে হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেন। শেষত: তিনি ঘোষণা করেন, জঙ্গশাহীর অত্যাচারে আর নিষ্ঠুরতায় আমাদের চোখের পানি শুকিয়েছে, কিন্তু মনের আগুন নেভেনি। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলমানকে এক হয়ে লড়তে হবে। জননেত্রী শ্রীমতি অরুণা আসফ আলী বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশও এখন বুঝতে পারছে, এটা গৃহযুদ্ধ নয়। ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি, বাংলাদেশের পাশেও দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার দায়িত্ব শরণার্থীদেরও আছে, আমরা তাদের সাহায্য করব। পশ্চিম বাংলার জননেত্রী শ্রীমতি গীতা মুখার্জি ইয়াহিয়ার চক্রান্তের স্বরূপ বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন, ইয়াহিয়া এক বেয়নেট দিয়ে মুক্তিকামী বাঙ্গালী তরুণদের হত্যা করছে আর এক বেয়নেট দিয়ে হিন্দুদের এ বাংলায় তাড়িয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের সব সম্প্রদায়ের মিলিত সংগ্রাম এই চক্রান্তকে ব্যর্থ করাতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সভাপতি শ্রীমতি রেণু চক্রবর্তী বলেন, তিন মাস চেষ্টা করেও ইয়াহিয়া বাংলাদেশে একটা কাঠের পুতুল সরকারকে দাঁড় করাতে পারেনি। পশ্চিম পাকিস্তানের জঙ্গী চক্রের বিরুদ্ধে বাঙ্গালী জাতিকে হয়ে স্বাধীনতার লাড়াই চালাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য হিন্দু মুসলমান শরণার্থীদেরও হাতিয়ার তুলে নিতে হবে। সভায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন শ্রী দেবনাথ চক্রবর্তী ও ওপার বাংলার শিলপীরা।