পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

823 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩৩৫। বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য কম্পাস ১৭ জুন, ১৯৭১ “মাষ্টার প্ল্যান’ চাই সম্পাদকীয় বাংলাদেশ শরণার্থীদের জন্য “মাষ্টার প্ল্যান চাই ংলাদেশ থেকে আগত লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের মধ্যে শুধু ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিলেই আমাদের কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না, দায়িত্ব লাঘবও হয় না। এদের সুসংগঠিত একটি ফলপ্রসূ শক্তিতে পরিণত করার জন্য আমাদের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন এবং অনতিবিলম্বে সে পরিকল্পনাকে বাস্তবে পরিণত করাও অত্যন্ত আবশ্যক। বাংলাদেশ থেকে আগত তরুণ ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, আইন ব্যাবসায়ী, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার প্রত্যেককেই এই অবশ্য কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং এই বাংলার মানুষের উদ্যোগী হতে হবে। এই পরিকল্পনা রূপায়ণে পশ্চিম বাংলা সরকারও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ দায়িত্ব রয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে কতকগুলি বাধ্যতামূলক নির্দেশ জারী করতে হবে। গেরিলা যুদ্ধের জন্য ভারত সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশের তরুণদের বিশেষ ট্রেনিং দান করা এবং এই রণকৌশলে তাদের সুদক্ষ ও সুশিক্ষিত করে তোলা বাংলাদেশ সরকারের কর্মসূচির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবকদের সংখ্যাগত এবং গণগুত পরিস্থিতি কিছুমাত্র সন্তোষজনক নয়। গেরিলা যুদ্ধের প্রাথমিক কর্মপন্থার জন্যই এখন পর্যন্ত সম্ভবত সাত থেকে আট হাজারের বেশী তরুণ তালিকাভূক্ত হননি।প্রকৃত ট্রেনিং কতটা দেওয়া হচ্ছে সে সম্পর্কে অবশ্য আমরা কিছু জানি না, কারণ স্বাভাবিকভাবেই তা গোপন সামরিক দপ্তরের বিষয়। কতসংখ্যক তরুণকে এ কাজে পাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে বহু পরস্পরবিরোধী রিপোর্ট আসছে। তবে প্রায় ষাট লক্ষ উদ্ধাস্ত্তদের মধ্যে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সের অন্তত পাঁচ ছয় লক্ষ তরুনের নাম রেজিস্ট্রারে থাকা উচিত। ভারত সরকার এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শরণার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা এই যুবকদেরও অন্নবস্ত্রদান এবং রক্ষণাবেক্ষণের দিকে লক্ষ্য রাখছেন। কিন্তু কেন এই পাঁচ ছয় লক্ষ তরুণকে বাধ্যতামূলক ভাবে প্রাথমিক সামরিক শিক্ষার জন্য তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে না? এনসিসি পদ্ধতির ট্রেনিং (পিটি, প্যারেড, বন্দুক চালনা, ফাষ্ট্র এইড, সমাজ কল্যাণ ও রাজনীতি সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান, ক্যাম্পের শরণার্থী সেবার মধ্য দিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা সবই এই শিক্ষণ সূচীর মধ্যে পড়বে) দেওয়াটা তো বিপজ্জনক কিছু নয় ভারতীয়। ছাত্রদের জন্য এনসিসি বাধ্যতামূলক, কিন্তু তার সঙ্গে ছাত্রদের রাজনৈতিক মতপথ জড়িয়ে তো কেউ দুশ্চিন্তা করে না। কোনো শত্রু পক্ষীয় লোক যাতে এই বিশেষ ট্রেনিং-এর সময় শিক্ষণকারী তরুণদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে আত্মগোপন করে থাকতে না পারে তার জন্য স্ক্রটিনী ও স্ক্রীনিং করার পরে এই সুশিক্ষত ও সুসংহত বিশাল যুব বাহিনী থেকে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী এবং কম্যান্ডো ও গেরিলা গ্রুপের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে দীর্ঘদিন সৈন্য জোগানে সম্ভব। সমস্ত তরুণদের যদি আলাদাভাবে একটি সুশৃঙ্খল সংগঠনের মধ্যে সতর্ক বিধিনিষেধের নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তাহলে স্ক্রটিনী ও স্ট্রনিং-এর কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। এই অজস্র শরণার্থীদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা একটি বিরাট দায়িত্ব এবং প্রচন্ড সমস্যা। পশ্চিমবাংলার আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাটাই এতে দিশাহারা হয়ে পড়তে পারে। উপরন্তু এই হত দরিদ্র, শৃঙ্খলাহীন ভারতে এই দেশত্যাগী হৃতসর্বস্ব মানুষের স্রোত যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট সৃষ্টি করবে সেই পরিস্থিতিতে শত্রপক্ষের ষড়যন্ত্রকারীরা ধূমায়িত সাম্প্রদায়িক সুযোগ নিতে চেষ্টা করবে। কিন্তু বাংলাদেশের সমস্ত শরণার্থী যুবকদেরই