পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৯৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

903 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩৭৮ রাশিয়া-আলজিরিয়া ও বাংলাদেশ আনন্দ বাজার পত্রিকা ১৩ অক্টোবর, ১৯৭১ (সম্পাদকীয়) সম্পাদকীয় রাশিয়া-আলজিরিয়া ও বাংলাদেশ প্রচলিত প্রবাদ-যখন রোমে থাকিবে তখন রোমানদের মত আচরণ করিবে। সোভিয়েট প্রধানমন্ত্রী শ্রী কোসিগিনও কি অবশেষে সেই পরামর্শ গ্রহণ করিলেন? আলজিরিয়া সফরের পর প্রেসিডেন্ট বুমেদিনের সঙ্গে তাহার যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হইয়াছে তাহা পড়িয়া সকলে হতবাক। এমন কি মস্কোর বেসরকারী মুখেও নাকি বিস্ময়ের চিহ্ন। যুক্তবিবৃতিতে বিশ্বরূপ দর্শন উপলক্ষে বাংলাদেশও উল্লিখিত। তবে “বাংলাদেশ” হিসাবে নয়। সেখানকার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ন্যায্য লড়াই কিংবা ভারতে আগত নববই লক্ষ শরণার্থীর কথাও অনুল্লিখিত। বিবৃতির বয়ান অনুযায়ী বাংলাদেশ কার্যত ভারত আর পাকিস্তানের ব্যাপার। দুই রাষ্ট্রনেতার পরামর্শ- ভারত পাকিস্তানের উচিত তাসখন্দ আদর্শে অনুপ্রাণিত হইয়া সমস্যার ফয়সালা করিয়া লওয়া। স্বাক্ষরকারীরা এমন কি “রাজনৈতিক সমাধানের’’ প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করা দরকার মনে করেন নাই। মাত্র কয় সপ্তাহ আগে প্রচারিত শ্রীমতি গান্ধী ও কোসিগিনের যুক্তবিবৃতি “প্রাভদার” ক্রুদ্ধ লেখালেখি, সমগ্র রাশিয়া-ব্যাপী গণ-আন্দোলন-এ সবের তবে অর্থ কি? সবই কি মায়া? কয় দিন আগে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তসংসদীয় সম্মেলনে রুশপ্রতিনিধি নাকি অপ্রত্যাশিতভাবে সম্পূর্ণ বেসুরো গাহিয়াছিলেন। সিমলায় শ্রীচ্যবন ঘোষণা করিয়াছেন-এসব অপপ্রচার। রুশ-ভারত যুক্ত বিবৃতির পর অবান্তর কথায় কান না দেওয়াই ভাল। আলজিয়ার্স হইতে প্রচারিত বিবৃতিতে যিনি সহি করিয়াছেন তিনি কোনও সাধারণ রুশ-প্রতিনিধি নহে স্বয়ং কোসিগিন। এক দলিলে স্বাক্ষরের কালি শুকাইতে না-শুকাইতে সম্পূর্ণ অন্য ধরনের ঘোষণাপত্রে একই হাতে আবার স্বাক্ষর, ব্যাপরটা একটু বেসদৃশ বইকি মস্কোস্থ ভারতীয় দূত নাকি এই রহস্যর কিনারা করার কাজে লাগিয়েছেন। আলজিরিয়া বাংলাদেশ সম্পর্কে উদাসীন হইলে আমাদের কিছু বলার নাই। এমনকি বুমেদিনের সমাজতন্ত্রী সরকার পাকিস্তানের জঙ্গশাহীর প্রতি দূর্বলতা দেখাইলেও সেটা আজ আর কাহারও কাছে বিস্ময়কর ঠেকে না। সত্য, আলজিরিয়ার মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা আছে, এবং একথাও সর্বজনবিদিত সেই লড়াইয়ে ভারত ছিল আগাগোড়া আন্তরিক সমর্থক। কিন্তু তাহাতে বিশেষ কিছু আসে যায় না আলজিরিয়া সমেত অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের মতিগতি ইতিমধ্যেই বোধ হয় তাহা জানাইয়া দিয়াছে। সনাতনপন্থী গোঁড়া ঐশ্নামিক ভ্রাতৃত্বে বিশ্বাসী রাষ্ট্রগুলির কথা বাদই দেওয়া যাক। রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের পক্ষে সওয়ালকারী যদি মরক্কো, প্যারিস সম্মেলনে তবে-টিউনিসিয়। পাকিস্তানের প্রতি সৌদি আরব বা ইরানের ভালবাসা আরও গভীর। কিন্তু অন্যদিকে তথাকথিত প্রগতিশীল আরব রাষ্ট্রগুলিই বা কোন ভূমিকায়? উদ্বাস্ত সমস্যা সম্পর্কে তাহারা ওয়াকিবহাল, প্যালেস্টাইনের শরণার্থীরা এখনও নানা দেশের শিরঃপীড়া। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল বলিয়া বর্ণিত রাষ্ট্রগুলিও যে এখনও মৌন অথবা নিস্পৃহ তাহার পিছনে একাধিক কারণ থাকা সম্ভব। সমাজতন্ত্রী অথবা রাজতন্ত্রী, কোন মুসলিম রাষ্ট্রই নাকি চায় না বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান রাজতন্ত্রী, কোন মুসলিম রাষ্ট্রই নাকি চায় না বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান দ্বিখন্ডিত হোক, এবং তাহার ফলে একটি “অমুসলিম রাষ্ট্র” ভারতের কোনও রাজনৈতিক সুবিধা হোক। দ্বিতীয়ত, গণতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ইত্যাদির মধ্যে যে বিপুল ফারাক বর্তমান, আরব দুনিয়ার রাজনৈতিক ঐতিহ্যের পটভূমিতে সেটা এখনও সকলের কাছে যথেষ্ট স্পষ্ট নয়। তৃতীয়ত, অনেকেরই চোখের সামনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমস্যা রহিয়াছে, ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তাঁদের কাহারও কাহারও চোখে সে চেহারা লইয়াই ফুটিয়া উঠিয়াছে। চতুর্থত, বাংলাদেশ বহু দূর! সুতরাং বুমেদিন বা কোনও আরব নেতা যদি একটি ঐতিহাসিক স্বাধীনতা সংগ্রামকে অন্যভাবে গ্রহণ করতে চাহেন তবে আমাদের বলার