পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৯৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

906 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড সুতরাং এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে দলমত নির্বিশেষে ভারতের সমস্ত গণতান্ত্রিক মানুষের আশু কর্তব্য, ভারত সরকারের উপর জোরালো আন্দলনের চাপ সৃষ্টি করিয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করা। কারণ, নব কংগ্রেসের নেতাদের হাবভাব এবং কথাবার্তার ধরন-ধারণ দেখিয়া আমাদের আরও সন্দেহ হইতেছে যে, বাংলাদেশ ইসু্যটাকে এখন তাঁরা ভারতবর্ষের অভ্যন্তরেই নিজেদের সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগাইবার মতলবে আছেন। যেমন, একদিকে উদ্বাস্ত্তদের জন্য সারা বিশ্বের সম্মুখে কাসুনি গাহিয়া রিলিফ সংগ্রহ করা হইবে আর অন্যদিকে উদ্বাস্ত্তদের শিখন্ডী করিয়া পশ্চিমবঙ্গে গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে পন্ড করিয়া দেওয়া হইবে। শুধু তাই নয়, গরিবী হটাওর ব্যর্থতা, মূল্যবোধ বা অন্য যে-কোন অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য যখন বিরোধী দলগুলী, ইন্দিরা গান্ধীর সমালোচনা করিবেন তখনই ভারতবাসীর যা কিছু দুঃখ কষ্ট সব অনর্থের মূল হিসাবে উদ্বাস্তদের দিকে আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া দেওয়া হইবে। তা না হইলে শরণ সিংয়ের মুখে ‘রাজনৈতিক সমাধানের গীত শোনা যায় কেন ? কারণ যে কোন মূখও জানে যে, বাংলাদেশের মুক্তি বা স্বাধীনতা না আসিলে একজন শরণার্থীরাও পাকিস্তানের ফ্যাসিস্ট খাঁচায় বা কাঠামোর মধ্যে ফিরিয়া যাইবে না। পরিবেশ সৃষ্টির দিকেই ঝুঁকিতেন অর্থাৎ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতেন। কিন্তু এখনও তেমন কোন পদক্ষেপের নমুনাই তো আমরা দেখিতাছি না। অতএব উদ্বাস্ত্তদের দেশে ফেরত যাওয়া সম্বন্ধে ভারত সরকারের উদ্বেগও যে কতখানি আন্তরিক, সে বিষয়ে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি হইতেছে না কি ? বিশেষত যখন শোনা যাইতেছে যে, ংলাদেশের উদ্বাস্ত্তদের শিখন্ডী করিয়া “গরিবী হটাও" এর প্রধানমন্ত্রী আগামী বাজেটে আরও ৫০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ট্যাক্সের বোঝা চাপাইতে উদ্যত হইতেছেন তখন বাংলাদেশের উদ্বাস্তত্তরাই শুধু নন, ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষেরও যে প্রাণান্তকর অবস্থা সৃষ্টি হইবে তাতে আর সন্দেহ কি? সুতরাং এই পরিস্থিতিতে আমরা ভারতবর্ষের, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত বামপন্থী এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলির উদ্দেশ্যে পুনরায় সনির্বন্ধভাবে এই অনুরোধ জানাইতেছি, যে অবিলম্বে বাং r. স্বীকৃতির সমর্থনে আপনারা ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়িয়া তুলুন, কারণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে আমাদের স্বার্থও (যেখানে অধিকাংশ উদ্বাস্ত্তই পশ্চিমবঙ্গের ঘাড়ের উপর) আঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভু্যদয় যদি আজ কোনরকমে বিনষ্ট হয়, তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশরূপে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি ও তার সমস্ত জনজীবনের ভবিষ্যতও বঙ্গোপসাগরের অতল জলে তলাইয়া যাইবে।