পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৯৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

929 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড বাংলাদেশে পাক বিমান বাহিনীর অর্ধেকের বেশী বিধ্বস্ত এবং জলপথে তারা সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ। সর্বত্র ভারতীয় বাহিনীর সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন বীর মুক্তিবাহিনী। এই খবর যখন আপনি পড়ছেন ততক্ষণে পূর্ব বাংলার বহু শত বর্গমাইল এলাকা থেকে পাক সেনাবাহিনী বিতাড়িত। শনিবার সন্ধ্যায়ই সরকারী হিসাবমত ২০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ভারতীয় বাহিনীর দখলে। কিন্তু এই হিসাব এতক্ষণে অনেক পালটে গিয়েছে। ভারতীয় বাহিনী আরও বহুদূর এগিয়েছেন। শনিবার সকালে যশোর সীমান্তে গিয়েছিলাম। ভারতীয় বাহিনীর অধিনায়ক বললেনঃ আজ আমরা যশোর থেকে মাত্র সাত আট মাইল দূরে। কাল সকালে যদি আসেন দেখবেন আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। তিনটি ভারতীয় বাহিনী তিনভাবে আক্রমণ করেছে। একই সঙ্গে বিমানবাহিনী ভোরেই সমগ্র বাংলাদেশে সবকটি পাক বিমানঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। এই আঘাতে এই দিন তাদের ১৪টি বিমান ধ্বংস হয়ে গিয়েছে তার মধ্যে ৭টি স্যাবর জেট। এছাড়া আমাদের বিমানগুলি ঢাকা, যশোর, হিলি, লালমনিরহাট, আখাউড়া, কক্সবাজার, মালাপুর প্রভৃতি ১১টি বিমানবন্দরের ওপর আক্রমণ চালিয়ে ওগুলিকে অনেকটা অকেজো করে দিয়ে এসেছে। আমাদের বিমান বাহিনীর আক্রমণে এইদিন সৈয়দপুরে কয়েকটি পাক সেনা বোঝাই ট্রেন এবং যমুনায় ছ’টি স্টীমারও ধ্বংস হয়েছে। চট্টগ্রাম এবং নারায়নগঞ্জে তৈল ডিপোর ওপরও প্রচন্ড আক্রমণ চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী। দুটো এলাকায়ই এখনও আগুন জুলছে। বিমান আক্রমণ চলছে খুলনা ষ্টীমারঘাটের ওপরও। চট্টগ্রামে দুটি পাক জাহাজও বিধ্বস্ত। অবশ্য এই ধ্বংসলীলা ছাড়াও পূর্ব বাংলার সমুদ্রপথ পাক বাহিনীর কাছে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ। কারণ, নৌবাহনী গোটা বঙ্গোপসাগরে অবরোধ সৃষ্টি করেছেন। সমুদ্রপথে বাংলাদেশের দিকে এগোনো পাক বাহিনীর পক্ষে অসম্ভব। স্বয়ং আই এন এস বিক্রান্ত চট্টগ্রাম বন্দরের মুখে। বিক্রান্ত বিমানবাহী জাহাজ। বিক্রান্ত থেকে বার বার বিমান উড়ে গিয়ে চট্টগ্রাম এবং নারায়ণগঞ্জ আক্রমণ করেছে। একটি পাক বাণিজ্য জাহাজ কলম্বো থেকে সামরিক উপকরণ নিয়ে বাংলাদেশের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। ভারতীয় নৌবাহিনী তাকে আটক করেছে। বিমান ও নৌবাহিনী যখন গোটা পূর্ব খন্ডে আক্রমণে পাক দখলদারদের বিধ্বস্ত করছে ঠিক তখনই ভারতীয় সেনাবাহিনী খুব দ্রুত আঘাত হেনে স্থলপথে অগ্রসর হচ্ছে। ভারতীয় বিমান ও নৌবাহিনী গোটা পূর্ব বাংলায় পাক ঘাঁটিগুলির ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। আর সেনাবাহিনী এগোচ্ছে কতকগুলি নির্দিষ্ট সেক্টর দিয়ে। মূল লক্ষ্য ঢাকা কতকগুলি এলাকায় পাক বাহিনী শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে। কতকগুলি অঞ্চলে আবার সামান্য যুদ্ধের পরই তারা আত্মসমর্পণ করেছে। ভারতীয় বিমান ও নৌবাহিনী এইদিন প্রচন্ডভাবে রকেট ব্যবহার করেছে। এই সার্বিক বিমান আক্রমণের ফলে একদিকে যেমন গোটা বাংলাদেশে পাক সেনাবাহিনী প্রচন্ড অসুবিধায় পড়েছে, তেমনি সুবিধা হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অগ্রবর্তী ভারতীয় পদাতিক সেনাবাহিনীর ওপর বিমান আক্রমণ চালাবার তেমন ক্ষমতা আর পাক প্রতিরক্ষা বাহিনীর নেই। এবং পাক ক্যান্টনমেন্ট ও গ্যারিসনগুলির ওপর যখন ভারতীয় বিমানবাহিনী আক্রমণ চালাবে তখন তা প্রতিরোধের ক্ষমতাও পূর্ব বাংলায় পাক বিমান বাহিনীর থাকবে না। এখন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আর বিমান আনাও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অগ্রগতি আসলে শুরু হয়েছে শনিবার বেশি রাত থেকে। শনিবার গোটা দিনে তাঁরা প্রধানত আক্রমনের প্রস্ততি গড়েছেন। এবার চতুর্দিক থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অগ্রসর হতে থাকবেন। দর্শনা ষ্টেশন, ঠাকুরগাঁও, চরখাই, কমলপুর, কুলাউড়া, গাজিপুর এবং চৌদ্দগ্রামের পতন ঘটেছে।এখন ওগুলি ভারতীয় সেনাবাহিনীর দখলে। সাতক্ষীরা এবং আখাউড়ায় শনিবার বিকেলবেলা প্রচন্ড লড়াই চলছিল।