পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৯৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

943 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩৯৬ স্বাগত বাংলাদেশঃ বাংলাদেশের যুগান্তর ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ স্বীকৃতির ওপর একটি সম্পাদকীয় স্বাগত বাংলাদেশ সোমবার, ৬ই ডিসেম্বর ইতিহাসের এক যুগান্তকারী দিন। অধীর আগ্রহের বাঞ্ছিত অবসান। বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিয়েছেন নয়াদিল্লী। প্রায় আট মাস আগে সার্বভৌম রাষ্ট্ররূপে যার প্রথম আবির্ভাব, আজ তার পূর্ণ অভিষেক সমাপ্ত। নবজাতকের মাথায় কল্যাণ বারি বর্ষণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী। ভারতের পঞ্চান্ন কোটি নরনারীর অন্তরের শুভেচ্ছা মিশান রয়েছে তার সঙ্গে। লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী যখন ঘোষণা করছিলেন ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত তখন আনন্দমুখর হয়ে উঠেছিল পরিষদ কক্ষ। দলমত নির্বিশেষে সবার কণ্ঠ গিয়েছিল মিশে। স্বাগত জানাচ্ছিলেন তাঁরা বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রটিকে। উচ্চল হৃদয়ের এই সাদর অভিবাদন গোটা ভারতের তৃপ্ত বাসনার প্রতিধ্বনি হয়ত চমক লেগেছে ইসলামাবাদের জঙ্গীশাহীর সাড়ে সাত কোটি বাঙালীকে ধ্বংস করার জন্য তাঁরা ছুড়েছিলেন কামানের গোলা। তাঁদের সেই নিক্ষিপ্ত গোলা থেকে জন্ম নিয়েছে নতুন রাষ্ট্র। ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির সম্ভাবনায় সে প্রাণবন্ত। তাকে দাবিয়ে রাখতে পারে না দুনিয়ার কোন স্বৈরাচারী শক্তি। বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা আপোষে পায়নি, লড়াই করে ছিনিয়ে নিয়েছে। দিতে হয়েছে তাকে রক্ত মূল্য। যা সে পেয়েছে তা রাখার জন্য দরকার আরও রক্তের পূবের বাঙালী তার জন্য তৈরি। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত। গত আট মাস ধরে অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করেছে সে। সীমান্তের ওপার থেকে প্রতিদিন ভেসে আসত আর্তমানুষের বুক ফাটা কান্না, ধর্ষিতা নারীর রক্ষার মিনতি এবং মায়ের কোল জড়িয়ে ধরা অসহায় শিশুর ভয়াত চীৎকার। আবার পরক্ষণেই পাক পশুদের উন্মত্ত উল্লাসের মধ্যে মিলিয়ে যেত সব সীমান্তের বাঁধ ভেঙ্গে ঘাতকের খাঁড়া কেড়ে নিতে পারেনি ভারত। তাঁদের চোখের জল মুছাতে ত্রটি করেননি এদেশের পঞ্চাশ কোটি নরনারী। সাময়িক সান্তনায় ভরেছে ওদের মন, কিন্তু প্রানে আসেনি শান্তি। স্বদেশ যাদের শক্ৰকবলিত তারা কি করে পাথর চাপা দিতে পারেন জীবনের সমস্ত অনুভূতি? আহত সিংহের মত গর্জে উঠেছিল বাঙালী। করেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা। মুক্তিবাহিনী ধরেছিল অস্ত্র। আঘাতে আঘাতে জর্জর করে তুলেছিল দখলদার পাক বাহিনীকে। ইয়াহিয়ার অত্যাচারে নিরস্ত্র জনতার রূপান্তর ঘটেছে জাতীয় সেনা বাহিনীতে। তাদের ভরসাস্থল ভারত, পঞ্চান্ন কোটি নরনারীর আশীৰ্বাদ তাদের পাথেয় এবং স্বাধীনতার উদগ্র আকাংক্ষা তাদের প্রেরণা। আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত একটি দসু্যদলের সঙ্গে ক্ষীণকায় বাঙালীর দীর্ঘস্থায়ী লড়াই সাম্প্রতিক ইতিহাসের এক অনন্য সাধারণ ঘটনা। ওরা গোটা দুনিয়ার বিস্ময় এবং ভবিষ্যৎ মুক্তিসেনানীদের সার্থক পথিকৃৎ। এঁদের ভাগ্যের সঙ্গে নিজের ভাগ্য মিশিয়ে দিয়েছে ভারত। ইয়াহিয়া দিয়েছে তাঁর জঙ্গী উত্তর ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন তিনি। জলে, স্থলে এবং অন্তরীক্ষে চলেছে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। ংলাদেশে পাকবাহিনী পর্যুদস্ত। এখন শুধু তাদের আত্মসমর্পণের অপেক্ষা। পশ্চিম রণাঙ্গন জুলছে। জঙ্গীশাহীর শোষণ দুর্গ পুড়ে একেবারে ছাই হবার আগে তা নিভবে না। কোনমতেই ভারত এ আগুন নিভাতে দেবে না। গত তেইশ বছরের পাক আবর্জনার কোন চিহ্নই সে রাখবে না বর্তমান সংগ্রাম- সামন্ততন্ত্রী পাক দসু্যদের নিঃশেষ করার শেষ সংগ্রাম। ইচ্ছা করে নয়াদিল্লী নেননি এই রক্ত পিছল বন্ধুর পথ। ইসলামাবাদের উন্মাদের দল তাদের ঠেলে দিয়েছে এ পথে। আজ ভারত এবং স্বাধীন বাংলাদেশ সহযাত্রী। মুক্তিযোদ্ধাদের খুন মিশে যাচ্ছে ভারতীয় জওয়ানদের রক্তের সঙ্গে। ওদের সম্মিলিত আঘাত পড়ছে নরপশুদের উপর। কিসের বন্ধনে বাধা পড়েছে অসমসাহসী ভারতীয় জওয়ান এবং দুর্বার মুক্তিসেনা। কোথায় পেয়েছে তারা উল্কার গতি? কেন একসঙ্গে মিশে যাচ্ছে তাদের