পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৯৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

95.7 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড ময়মনসিংহ সেক্টরে পশ্চিম পাকিস্তানীদের সৈন্য ছাউনীগুলিকে ভারতীয় বাহিনী সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ করেছে এবং শত্রদের পলায়নের কোন পথ নেই। ইষ্টাৰ্ণ কম্যান্ডের মুখপাত্র বলেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশের তেরশ মাইল সীমান্ত সৈন্য সমাবেশ করেছিল। এখন বিভিন্ন দিক তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় কোন স্থানে পশ্চিম পাকিস্তানীদের বিশেষ কোন জমায়েত নেই। যশোর সেক্টরে কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা ও নবাবপাড়ায় ভারতীয় সৈন্যদের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের তুমুল লড়াই চলছে। বাংলাদেশের পূর্বাংশে লাকসামে পশ্চিম পাকিস্তানীরা তুমুল লড়াইর পর পরাস্ত হয়েছে। ২৩ নম্বর পাঞ্জাব ব্যাটেলিয়ানের দু’জন অফিসার ও ৪১৫ জন সৈন্যকে বন্দী করা হয়েছে। কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের অবরুদ্ধ পাকিস্তানী সৈন্যরা গতকাল সম্ভবত পালিয়ে যাবার পথ খুঁজবার জন্য ভারতীয় বাহিনীর উপর গুলিবর্ষণ করে। ভারতীয় সৈন্যদের পাল্টা গুলিবর্ষণে ৩০ জন পাক সৈন্য নিহত হয়েছে। ভারতের দু’জন মারা গেছে। এখানে পাকিস্তানীরা ট্যাংক ব্যবহার করেছিল। ময়মনসিংহ, হিলি, কুষ্টিয়া শত্রমুক্ত (সুখরঞ্জন সেনগুপ্ত) কলকাতা, ১১ই ডিসেম্বর-ভারতীয় ও মুক্তি বাহিনরি সম্মিলিত সেনাদলের অভিযানের মুখে আজ কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, জামালপুর, হিলির পতন হয়েছে। মেঘনার পশ্চিম পাড়ে ভৈরব বাজার থেকে ভারতীয় বাহিনীর যথেষ্ট অগ্রগমন হয়েছে। কিন্তু এখানে ভারতীয় বাহিনী ঢাকার পথে কতটা এগিয়েছে তা নির্দিষ্টভাবে বলতে ইষ্টাৰ্ণ কম্যান্ডের মুখপাত্র অস্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন যে, ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী মেঘনার পূর্বপাড়ে বিভিন্ন দিক থেকে ঢাকার পথে অগ্রসরমান। খুলনার পথে ভারতীয় বাহিনী নোয়াপাড়া দখল করার পর এখন দৌলতপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে। ভারতীয় বাহিনী আজকের অভিযানে ছোটবড় ১২টি শহর দখল করেছে এবং ১ জন ব্যাটেলিয়ন কম্যান্ডার, ১৬ জন জেসিও সহ ২ হাজারের বেশী পাকিস্তানী সৈন্যকে বন্দী করেছে। হিলি শহর মুক্ত সামরিক বাহিনীর ঐ মুখপাত্র আরও জানান যে, দিনাজপুর-রংপুর খন্ডে ভারতীয় বাহিনী পাক-বাহিনীকে ঘেরাও করে রেখেছে। ওখানে আনুমানিক চার হাজার পাকসেনা আছে। তাদের আর বেরিয়ে যাবার কোন পথ নেই। ংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে পাক-বাহিনীর বড় ঘাঁটি বগুড়ায় প্রায় ২০ মাইলের মধ্যে ভারতীয় বাহিনী আজ দুপুরে পৌছে গেছে। দিনাজপুর ও রংপুর শহর দু’টির যে কোন সময়ে পতন ঘটতে পারে পাক বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি হিলি থেকে ষ্টাফ রিপোর্টার শ্রীকল্যাণ বসু আরও জানিয়েছেনঃ হিলির নিকটবর্তী বাহাদুনিয়া ও গোবিন্দগঞ্জে যুদ্ধে ১২০ জন পাক সেনা ও একজন অফিসার নিহত হয়েছে। বিধ্বস্ত অবস্থায় ৪টি পাকিস্তানী ট্যাঙ্ক কামানসহ দখল করা হয়েছে। ২৪ ঘন্টার যুদ্ধের পরিণতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষে হিলি, গোবিন্দগঞ্জ, বাহাদুরিয়া, ফুলঝুরি সম্পূর্ণভাবে শত্রমুক্ত হয়েছে। হতাবশিষ্ট পাকসেনারা সিরাজগঞ্জ হয়ে ঢাকায় পালাবার জন্য মরিয়া হয়ে পথে খুঁজছে।