পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৯৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

967 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৪০৬ ঢাকা দখলের লড়াই আনন্দবাজার পত্রিকা | ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১ বগুড়া মুক্ত। চট্টগ্রাম ও ঢাকার গভর্ণরের প্রাসাদ জুলছে ঢাকা দখলের লড়াই খান শাহীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মন্ত্রিসভাসহ ডঃ মালিকের পদত্যাগ : নিরপেক্ষ এলাকায় আশ্রয় নয়াদিল্লী, ১৪ই ডিসেম্বর (ইউএনআই)-ঢাকায় গভর্নরের বাড়ী ও অন্যান্য কয়েকটি লক্ষ্যস্থলে এখন আগুন জুলছে। গভর্ণর ডঃ এ মালিক, তার মন্ত্রী পরিষদ ও উর্ধ্বতন অসামরিক কর্মচারীরা ইতিমধ্যে তাদের নিজ নিজ পদে ইস্তফা দিয়ে নিরপেক্ষ এলাকা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে পালিয়ে গিয়েছেন। এই খবরে আরও জানা যায় যে, ভারতীয় সৈন্য ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে প্রবেশ করেছে এবং সেখানে এখন যুদ্ধ চলছে। ংলাদেশের জনসাধারণের যুগান্তকারী স্বাধীনতা সংগ্রাম এখন শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ঢাকায় পাকিস্তানীদের চূড়ান্তভাবে উচ্ছেদ করে একটি প্রতিনিধি স্থানীয় সরকার গঠনের জন্য ভারতীয় সৈন্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান সরকার আজ বিকেলে সদলবলে পদত্যাগ করেছেন এবং ইসলামাবাদে ইয়াহিয়া সরকারের কেন্দ্রীয় প্রশাসন থেকে নিজেদের সরিয়ে এনেছেন। ঢাকার শহরতলীতে প্রচন্ড হাতাহাতি লড়াই চলছে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় জোয়ানরা তীব্রবেগে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। একটা শক্তিশালী পাকবাহিনীর মোকাবেলা করে তাঁরা তাদের সম্পূর্ণভাবে পর্যুদস্ত করেছেন। ঢাকা শহরের সেনাবাহিনীর ছাউনির ওপর ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনী গোলা নিক্ষেপ করে চলেছে। এদিন রংপুর সেক্টরে শত্রর সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ডিভিশনাল হেডকোয়ার্টার বগুড়ার পতনের মধ্যদিয়ে ঐ সেক্টর মোটামুটিভাবে শত্রমুক্ত হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। গভীর রাতে ঢাকা সেক্টরের আরো যে সংবাদ এসেছে, তাতে দেখা যায়, ভারতীয় জওয়ানরা শুধু জয়দেবপুর, টঙ্গী কালিক্টর দখল করেই ক্ষান্ত হন নি, তাঁরা আরো দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছেন। শহরতলীতে পাক সেনাবাহিনীর পুরো একটা ব্রিগেড আটক পড়েছে। ঐ বাহিনীর অধ্যক্ষ একজন ব্রিগেডিয়ার ও ময়মনসিংহ এর মার্শাল ল’এ্যাডমিনিষ্ট্রেটারসহ কমপক্ষে ১২ জন জাঁদরেল পাক সেনাপতি আত্মসমর্পণ করেছেন। অনুমান করা হচ্ছে, সর্বত্র ভারতীয় জওয়ানদের তাড়া খেয়ে পাক সেনাবাহিনীর এই ব্রিগেড জয়দেবপুর-টঙ্গীর নিকটে গিয়ে জমায়েত হয়েছিল। কিন্তু অতর্কিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী উপস্থিত হওয়ায় তারা আটক পড়েন। চট্টগ্রাম সেক্টরে কুমিরার দক্ষিণে ভারতীয় জওয়ানরা বেশ জোরের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর জুলছে। তাছাড়া শ্রীহট্টের নিকটে একটি পেট্রোলিয়ামের পরিশোধনাগারও দখলে এসেছে। দখলদার বাহিনীর প্রধান অধিনায়ক জেনারেল এ এ কে নিয়াজী অনিচ্ছা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়ায় ভারতীয় সৈন্যরা ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ঢাকার অভ্যন্তরে সামরিক লক্ষ্যস্থলগুলির উপর প্রচন্ড বোমা বর্ষণ করেন এবং তারা এখন শহরের মধ্যে এগিয়ে চলেছেন। ঢাকায় এবার তাদের রক্তাক্ত সংগ্রাম শুরু হয়েছে।