পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

দলিল প্রসঙ্গঃ মুজিবনগর-প্রশাসন

 মুজিবনগর সরকারের দলিলপত্র সংগ্রহ করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ ছিল, কারণ এসব দলিল সংরক্ষণের জন্য কোন মহাফেজখানা সৃষ্টি করা হয়নি। একই সাথে বিভিন্ন সকারী দলিল-দস্তাবেজ ঢাকায় আনয়নের দায়িত্বও কোন একক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার ওপর অর্পণ করা হয়নি। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি বিভিন্নভাবে এসব দলিলপত্র নিয়ে আসেন এবং সব দলিল সংগ্রহের কেন্দ্রীয় দায়িত্ব কারও হাতে না থাকায় অনেক দলিলপত্র নষ্ট হয়ে যায়। অতএব, সংগ্রহের ব্যাপারে আমাদের প্রধানভাব নির্ভর করতে হয়েছে বিভিন্ন যন্ত্রণালয়ের সংগৃহীত তথ্যাদি এবং বিভিন্ন ব্যক্তির নিজস্ব সংগ্রহের উপর। বলাবাহুল্য, এর উপর ভিত্তি করেই সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়।

 ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সরকার-এর আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু এর পূর্বেকার স্বাধীনতার ঘোষণাসমূহ এবং বিভিন্ন আবেদনগুলিও গ্রন্থে সংযোজিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীদের ভাষণগুলি যথাসম্ভব সংযোজিত হয়েছে।

 মুজিবনগর সরকারের মূল যে কয়েকটি বিভাগ ছিল, যথা- অর্থ, স্বরাষ্ট্র, সাধারণ প্রশাসন, তথ্য ও প্রচার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র এবং কেবিনেট মন্ত্রণালয়- এসবের বিভিন্ন দলিলপত্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এ খণ্ডে। সমস্ত মন্ত্রণালয়ের আনুপাতিকভাবে সমসংখ্যক দলিলপত্র না পাওয়াতে দলিল সন্নিবেশের ক্ষেত্রে হয়তো কিছু কিছু ফাঁক বা ঘাটতি থেকে গেছে এবং এ তথ্য-স্বল্পতার অনিবার্য পরিস্থিতিতেও যাতে একটি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনারত একটি জাতীয় সরকারের পূর্ণ অবয়ব ফুটে ওঠে, দলিল সন্নিবেশকালে আমরা সে চেষ্টার ত্রুটি করিনি।

 মূজিবনগর সরকারের শাখা-দপ্তরসমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আঞ্চলিক প্রশাসনিক জোনসমূহ, যার অধীনে বিভিন্ন এলাকার পরিচালিত হত। এইসব জোনের অধীনে শরণার্থী শিবির এবং যুব ক্যাম্প উভয়ই পরিচালিত হত। মুজিবনগর সরকারের বিভিন্ন জোনগুলির মাধ্যমে জনগনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করা হত। এই জন্য জোন প্রশাসনের দলিলের জন্য একটি আলাদা বিভাজন করতে হয়েছে।

 যুব ত্রাণ এবং যুব অভ্যর্থনা শিবিরগুলি থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রট করা হত। অতএব, কিভাবে এই কাজ সম্পন্ন করা হত উপস্থাপিত দলিল থেকে এ বিষয়ের একটি চিত্র পাওয়া যাবে। মুজিবনগর সরকারের বিজয়ের পর কি ধরনের রাষ্ট্র-কাঠামো প্রতিষ্ঠার চিন্তা ছিল তার পরিচাল পাওয়া যাবে পরিকল্পনা বোর্ডের দলিলের মধ্যে। তাছাড়া বিভিন্ন দলিলে বিশেষ করে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের দলিলপত্রসমূহে এই চিত্র আরও বিশদভাবে ফুটে উঠবে।

 পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দলিলসমূহ একত্র করে একটি আলাদা বিভাজন করা হয়েছে এইজন্য যে, আন্তজার্তিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক অংশ। এই অংশে দলিলপত্রের সঙ্গে কিছু কিছু প্রচারমূলক তথ্যাদিও সংযোজিত করা হয়েছে, যথা- “বাংলাদেশ এ ওয়ার্ল্ড কমেনট্রি” (পৃষ্ঠা ৭৯৬) এবং “দ্য কেস ফর বাংলাদেশ” (সেপ্টেম্বর ১৯৭১, পৃষ্ঠা ৮২৯)।

 সর্বোচ্চ পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অন্যান্য দেশের মধ্যে যে চিঠিপত্র বিনিময় হয়েছে, সেসবও এখানে সংযোজিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত প্রথম ডাকটিকিট সংক্রান্ত দলিলপত্র নিয়ে একটি পরিশিষ্ট প্রকাশ করা হয়েছে।