পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৩১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

286 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র শিরোনাম সূত্র তারিখ জাতির উদ্দেশে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সরকার ৭ ডিসেম্বর,১৯৭১ সংগ্রামের শেষ প্রহরে নতুন অগ্নিশপথ আমার প্রিয় দেশবাসী ভাইবোনেরা, ঝঞ্চাসস্কুল, সংগ্ৰামময়, অমারাত্রির শেষমত প্রহর আমরা অতিক্রম করে এসেছি। স্বাধীনতার সূর্যাভাসে বাংলাদেশের দিকবিদিক আজ উদ্ভাসিত স্বাধীনতার এই সূর্যসকালে আপনারা আমার অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা গ্রহন করুন। আজ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের পাতায় লিখিত হল আর একটি স্মরণোজ্জল দিন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক ন্যায্য স্বীকৃতি দিয়েছেন আমাদের প্রতিবেশী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতবর্ষ। বাংলাদেশের মাটিতে যে নির্মমতম গণহত্যা অনুষ্ঠিত হয়েছে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিবেক জাগ্রত করার জন্য মহান ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই দীর্ঘ আট মাসব্যাপী যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তার জন্য আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের তরফ থেকে তাঁকে ও ভারতবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। মিত্র রাষ্ট্র ভারতের সৈন্য বাহিনীর জোয়ানরা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশের মাটি থেকে হানাদার শত্রদেরকে নির্মুল করার জন্য আজ যুদ্ধ করে চলেছে। আর এই ভাবেই দুই দেশের জনগণের মধ্যে যে অটুট বন্ধুত্ব রচিত হচ্ছে তা রক্ত দিয়ে লেখা । মিত্র রাষ্ট্র ভারতের জোয়ানদেরকে আমি বাংলাদেশের জনগণের তরফ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। বাংগালীর শৌর্য-বীর্যের ইতিহাস প্রায় সাড়ে আট মাস হতে চললো, আমরা এ মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে এসেছি। এই সংগ্রামের ইতিহাস পর্যায়ক্রমে পরাজয়ের ইতিহাস। এ ইতিহাসে যাঁরা লিখেছেন, বাংলার সেই কোটি কোটি জনসাধারণ, যাদের ত্যাগ ও তিতিক্ষা এ ইতিহাস লেখায় সাহায্য করেছে, তাদের সবাইকে আমি সংগ্রামী সালাম জানাই। বাংলার বীর সন্তানেরা যাঁরা অস্ত্ৰধারণ করে হানাদার দসু্যকে আঘাত হেনেছেন, সেই মুক্তিবাহিনীর, বীর সৈনিকদেরকে আমি আজকের দিনে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আজকের দিনে স্মরণ করি সেই সমস্থ বীর শহীদদেরকে যাঁদের রক্তে বাংলার শ্যামল প্রান্তর লাল হয়েছে, আর যাঁদের বীরত্বের ইতিহাস বাঙ্গালী জাতির জন্য এক গৌরবময় অধ্যায় করে গিয়েছে। বন্ধুরা আমার, রক্তের আখরে লেখা, এই সংগ্রামের ইতিহাসের সাফল্যের এ ক্লান্তিলগ্নে আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরন করি বাঙ্গালী জাতির পিতা জনাব শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্বাধীনতার এ উষালগ্নে আজ তিনি আমাদের মধ্যে নেই। বর্বর জঙ্গীশাহীর কারাগারে আজ তিনি আবদ্ধ। আমরা জানি না, অন্ধকার কারাগারে কি দুঃসহ জীবন তিনি যাপন করছেন। বাংলাদেমের মানুষ, বাংলাদেশের বীর মুক্তিবাহিনী, আমরা সবাই যাঁর আদর্শে অনুপ্রানিত, আর যাঁর আদর্শকে রূপ দেওয়ার জন্য আজকের এই সংগ্রাম চলছে এবং চলবে- সেই মহান নেতাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি এবং করে যাবো। যে হানাদার দসু্যরা বাংলার নয়নমণিকে কারাগারে আজও আবদ্ধ রেখেছেন, তাদের কাছে আমি বলতে চাই, সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর দুর্জয় সাহস আর প্রতিজ্ঞা যেমন অস্ত্রের ভাষায় রুদ্ধ করা যায়নি, তেমনি করে বাংলার অবিসংবাদিত নেতাকে কারাগারে রেখেও তারা নিস্তার পাবেন না।