পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৩৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

316 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র শিরোনাম সূত্র তারিখ জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তথ্য মন্ত্রণালয় ১৭ ডিসেম্বও ১৯৭১ স্বাধীনতার সূর্যোদয়ে দেশবাসী সংগ্রামী ভাইবোনেরা, বাংলাদেশে দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে। সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুক্তিসংগ্রাম আজ সাফল্যের তোরণে উপণীত হয়েছে। গতকাল বিকেল পাঁচটা এক মিনিটে সম্মিলিত ভারতীয় সৈন্য বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরার কাছে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খাঁর নিযুক্ত ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক প্রশাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী তাঁর অধীনস্থ পাকিস্তানী স্থল, বিমান ও নৌ-বাহিনী, আধা সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র-বাহিনী সহ বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ করেছেন। পচিশে মার্চ বাংলাদেশের জনসাধারণের যে দুঃস্বপ্লের রাত্রি শুরু হয়েছিল, এতদিনে তার অবসান হল। বাংলাদেশে আমাদের নিজেদের কর্তৃত্ব পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হল। এত অল্পসময়ে বোধহয় আর কোন জাতির স্বাধীনতার সংগ্রাম সফল হয়নি।স্বাধীনতার জন্য এত মূল্যও বোধ হয় আর কোন জাতি দেয়নি। আজকের বিজয়, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের বিজয়, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর বিজয়, সত্য, ন্যায় ও গণতন্ত্রের বিজয়। আমরা যাঁরা আজ স্বাধীনতার সূর্যোদয় দেখার সৌভাগ্য লাভ করেছি, আসুন, শ্রদ্ধাপ্রুত হৃদয়ে, কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে, যাঁরা নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছেন সকলের জন্য। পাকিস্তানের সামরিক চক্র চেয়েছিল বর্বর শক্তি দিয়ে বাংলাদেশের জনগণকে দমন করে রাখতে। হানাদারেরা দেশের মানুষকে হত্যা করেছে, পঙ্গু করেছে, ঘরবাড়ী জুলিয়েছে, আমাদের জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। এই দুঃসময়ে আমাদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে ভারত। আর তাই পাকিস্তানী সমর নায়কদের আক্রোশ গিয়ে পড়ে ভারতের উপর। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে তারা রুপান্তরিত করে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে। পশ্চিম রণাঙ্গনে ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানী আক্রমণ প্রতিহত করেছেন। আর পূর্ব রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর সাথে মিলিতভাবে সংগ্রাম করে তাঁরা মাত্র বারো দিনের যুদ্ধে দখলদার সেনাদেরকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছেন। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিপর্যয় এত দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হতে পারল ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধ্যক্ষ জেনারেল মানেকশার নেতৃত্ব এবং সম্মিলিত বাহিনীর অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরার নিপুণ রণকৌশলে। এই দুই সেনাপতির কাছে এবং ভারতের স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনীর কাছে আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। আমাদের সাফল্যে এই মুহুর্তে ভারতের প্রধানমন্ত্ৰী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বাংলাদেশের আবালবৃদ্ধবনিতা গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছে। তিনি যেভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার ও নেতাদের কাছে আমাদের ন্যায় সঙ্গত সংগ্রামের ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং যেভাবে লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, ইতিহাসে তার নজীর নেই। আমাদের সংগ্রামের ফলে ভারতের জনসাধারণকে যে বিপুল ভার বহন করতে