পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৩৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র বন্ধুগণ, জাতির এই গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে আমি মুক্তিসংগ্রামে শহীদ এবং আহত ভাইদের স্মরণ করছি। নিজের বুকের রক্তে যারা স্বাধীনতা রক্ষা করতে এগিয়ে গেলেন সেইসব হাজার হাজার তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে জাতি গর্বিত। মহান ভারতের মহীয়সী দেশনেত্রী শ্ৰীমতী গান্ধীর নেতৃত্বে মানবাতবোধে উদ্বুদ্ধ যেসব বীর ভারতীয় সৈনিক বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের আমি গভীর শ্রদ্ধার সংগে স্মরন করছি। নানা অসুবিধার মধ্যেও ভারতের জনগণ ও সরকার আমাদের লক্ষ লক্ষ ছিন্নমূল মানুষকে তাদের মাটিতে আশ্রয় দিয়ে এবং সর্বোপরি বর্বর পাক সরকারের চরম সামরিক হুমকির মুখেও বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে সাড়ে সাত কোটি মানুষের বাঁচার অধিকারকে সার্থকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষর কষ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমিও ভারতকে আর একবার ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই স্বীকৃতির ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। হাতে হাত মিলিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করে দুটি দেশ এগিয়ে যাবে শান্তি এবং সমৃদ্ধির পথে। আমাদের মুক্তি সংগ্রামকে নৈতিক সমর্থন যুগিয়ে এবং জাতিসংঘ বাংলাদেশের মানুষের মানবিক অধিকারের মৌলিক প্রশ্নটিকে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এবং পরিস্কারভাবে তুলে ধরে সোভিয়েত রাশিয়া আর একবার প্রমাণ করেছেন যে বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের মুক্তি সংগ্রামে চিরদিন তার সমর্থন ছিল এবং থাকবে। বিশ্বের আরো যে সকল বন্ধুরাষ্ট্র বিভিন্ন ভাবে আমাদের মুক্তি সংগ্রামেকে সাহায্য করেছে তাদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সাথে সাথে আমি বিশ্বের সকল রাষ্ট্রকে অনুরোধ করছি বাংলাদেশ একটি বাস্তব সত্য। এ সত্যকে মেনে নিযে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিতে এগিয়ে আসুন। পশ্চিম পাকিস্তানের জংগী-শাহী, যারা বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে, তাদেরকে সাহায্য দানে বিরত থাকুন। বন্ধুগণ, গত চবিবশ বছর ধরে অন্যায় আর অত্যাচারের বিরুদে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে বাংগালী শুধু রক্ত দিয়ে এসেছে। কিন্তু আজ তারা রক্ত নিতে শিখেছে। জমাট বাঁধা রক্ত যেন এক এটি বুলেট। অত্যাচারে ভেঙে যাওয়া হাড়গুলো যেন ধারালো বেয়নেট। ক্রোধে আক্রোশে ফেটে পড়েছে এতদিনের বঞ্চিত লাঞ্ছিত মানুষগুলো মিত্রবাহিনীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা ছুটে চলেছে বাংলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। আঘাত হানছে শত্রর প্রতিটি ঘাঁটি উপঘাঁটিতে। এ আঘাত রোধ করতে পারে এমন কোন শক্তি পৃথিবীতে নেই। শক্ৰ তাই দিশেহারা। চরম পরাজয় তাদের সমাসন্ন। দীর্ঘ চবিবশ বছরের অমানিশার অবসানে স্বাধীন বাংলার আকাশে দেখা যাচেছ সুপ্রভাতের নব আভাস। জয় বাংলা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থও বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব এম, মনসুর আলী কর্তৃক প্রদত্ত বেতার ভাষণ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রচার দফতর কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত।