পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৩৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



356

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র

 গ্রামরক্ষী:

 নেতার নির্দেশে প্রয়োজন হলে প্রাণ দেবে এমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়ে তারা কাজ করবে। শুধু গ্রাম পাহারা দেওয়া এবং চুরি-ডাকাতি, শত্রর চরানুচর দমনের কাজই নয়, গ্রাম-জীবন উন্নয়নের সকল কাজেও এরা অগ্রণী হয়ে থাকবে। এরাই হবে গ্রামের সত্যিকার ভিত্তি-ফৌজ। এই গ্রামরক্ষী বাহিনীকে অনুপ্রেরণা দেওয়াই হবে ভিত্তিফৌজ কর্মীর অন্যতম কাজ।

 অর্থব্যবস্থাঃ

 শ্রম-সমবায় এবং ভাগাভাগি-বিনিময় ববস্থায় প্রতিষ্ঠিত গ্রাম জীবনে টাকা পয়সার তেমন কোনো প্রয়োজন থাকবে না। দুনীতি এবং সামাজিক প্রতারণার বাহন হিসাবে টাকার ব্যবহার যত কমবে ততই মঙ্গল।

 পারিশ্রমিকঃ

 পঞ্চায়েত এবং গ্রামরক্ষীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসাবেই এসব দায়িত্ব নেবে। তবুও তাদের নামমাত্র পারিশ্রমিক যদি কিছু দিতেই হয় তার জন্যও টাকা-পয়সার সত্যিই কোনো প্রয়োজন নেই। ঘরে ঘরে পঞ্চায়েতী “তোলা” তুলে তাদের জন্য মাসিক পণ্যের ব্যবস্থা করলেই চলবে। কিন্তু তার মধ্যেও যেন শোষণ-দমননীতির বিষ না ঢোকে, তার জন্য এ নীতিও গ্রহন করতে হবে যে পঞ্চায়েতী শৃঙ্খলায় গ্রামীন উৎপাদন যা বাড়বে তার উপরই “তোলা” উঠবে। উৎপাদন যদি না বাড়ে, গ্রামবাসী যদি পঞ্চায়েতের উপর সন্তুষ্ট না থাকে, তবে দ্বৈমাসিক সভায় গোটা পঞ্চায়েত বদল করে নিলেই চলবে।

স্বাধীন বাংলা সরকার অনুমোদিত ভিত্তি-ফৌজের মূলনীতি

  গ্রামে গ্রামে দুর্গ গড়
শেখ মুজিবের অস্ত্র ধর

 পশ্চিমা হানাদর বর্বর এবং তাদের চরানুচর বিশ্বাসঘাতকদের জঘন্য আক্রমণের হাত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং বাঙ্গালী জাতির ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য আজকের এই মুক্তিযুদ্ধ। শুধু মুসলমান অথবা শুধু হিন্দু বাঙালীর যুদ্ধ নয়, এ শুধু ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী অথবা শুধু কৃষক-শ্রমিক বুদ্ধিজীবী অথবা শুধু কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী বাঙালীর যুদ্ধও নয়। সকল বাঙালীর মহান নেতা শেখ মুজিবের অমর আদর্শে আজকের এই যুদ্ধ, যে বাঙালী যেখানে আছে, যে যেই কাজে যতটুকু পারে তারই সম্মিলিত দল-মত শ্রেণী-ধর্ম নির্বিশেষে সকল বাঙালীর সর্বাঙ্গীণ জন-যুদ্ধ।

 বাইরের কোনো শক্তি এসে বাঙালীকে এই যুদ্ধ করে দেবে না। অথবা করলেও তাতে বাঙালীর লাভ হবে না। বাইরের কেউ সাহায্য করুক বা না করুক এবং তা যতটুকুই করুক, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজের চেষ্টায় বাঙালী যতটুকু করবে এ যুদ্ধে বাঙ্গালীর জয় ততটুকুই হবে। কেননা পরম করুণাময় সর্বশক্তিমানও বলেছেনঃ আমি কোনো জাতির ভাগ্য পরিবর্তনে ততটুকুই সাহায্য করব যতটুকু সে জাতি নিজের চেষ্টায় করবে। তাই আজ অতীতের সকল পরনির্ভরতা ভুলে গিয়ে বাঙ্গালীকে আত্মনির্ভরশীল সংগ্রামের পথ ধরতে হবে।

 কিন্তু শুধু নেতৃত্বের মুখে যুক্তি-তর্ক দিয়ে আজকের এই জয় হবে না অথবা শুধু মুক্তিসেনার হাতে অস্ত্র দিয়েও নয়। তার সাথে সাথে চালিয়ে যেতে হবে শেখ মুজিবের দেওয়া মারণাস্ত্র-গ্রামে গ্রামে কোটি কোটি মুক্তিকামী বাঙ্গালীর হাতে অর্থনৈতিক যুদ্ধ। এই অর্থনৈতিক যুদ্ধের ভয়েই পশ্চিমা দুৰ্বত্ত আজ নৃশংস উন্মাদ হয়ে


  • যুব প্রশিক্ষণকালে অনেক সময় পাঠ্যক্রম হিসেবে বিবেচিত হতো।