পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র
16
শিরোনাম সূত্র তারিখ
জনগনের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশাবলী বাংলাদেশ সরকার, প্রচার দপ্তর ১৪ এপ্রিল,১৯৭১

আল্লাহু আকবর
স্বাধীন বাংলার সংগ্রামী জনগণের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের

নির্দেশাবলী

দেশবাসী ভাইবোনেরা,  হানাদার পাকিস্তানী পশুশক্তিকে বাংলাদেশের পবিত্র মাটি থেকে হটিয়ে দেবার ও বাঙ্গালীকে শোষণমুক্ত করে একটি নতুন সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলবার দীপ্ত শপথ ও ব্রত নিয়ে বাঙ্গালীর প্রানপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ও নেতৃত্বে গত ১২ই এপ্রিল রাত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ বেতার থেকে বাংলাদেশ সরকার ঘোষনা করা হয়েছে। এই ঘোষনার পর থেকে মুক্তি সংগ্রাম ঠিক পূর্বের মতই এক সুস্পষ্ট গতিতে চলছে। প্রতিটি বাঙ্গালী আজ নিজ নিজ ঘরে প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তুলে সংকল্পকে দৃঢ় থেকে আরও দৃঢ়তর করে তুলছে। মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্বাসঘাতক জঙ্গী পশু সরকারকে বিনাশ করে বিশ্বের দরবারে আজ মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছে বলে-বাঙ্গালীর যুদ্ধ আজ আরও তীব্রতর; বিশ্বাস আজ অটুট; প্রতিটি বাঙ্গালী আজ সংগ্রাম থেকে অবিচ্ছিন্ন।

 বাঙ্গালীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনে এ সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন স্বাধীন বাংলার মহানায়ক বাঙ্গালীর প্রিয় বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর তাঁর সহকারী হিসেবে রয়েছেন ত্যাগী ও শ্রদ্ধেয় নেতৃবৃন্দ।

 সৈয়দ নজরুল ইসলাম, উপ-রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত। জনাব তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালন করবেন এবং দেশরক্ষা দপ্তরের দায়িত্বও অতিরিক্তভাবে তাঁর উপর ন্যস্ত। খোন্দকার মোশতাক আহমদ পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত। স্বাধীন বাংলা সরকারের মন্ত্রী পরিষদে আর যাঁরা রয়েছেন তাঁরা হলেন জনাব মনসুর আলী, জনাব এ, এইচ, এম, কামরুজ্জামান।

 জনযুদ্ধের আশু সাফল্য অর্জনের উদ্দেশ্যে সরকার সম্প্রতি কতগুলো নির্দেশাবলী জারী করেছেন।

 পাকিস্তানী শোষকগোষ্ঠী ও তাদের ভাড়াটিয়া হানাদার সৈন্যবাহিনী আজ বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি লোকের উপর নগ্ন, পৈশাচিক বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বাঙ্গালীর অপরাধ তারা অবিচারের অবসান চেয়েছে, বাঙ্গালীর অপরাধ তারা তাদের মা-বাপ, ভাইবোন, সন্তান-সন্ততিদের জন্যে অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-চিকিৎসার দাবী জানিয়েছে, বাঙ্গালীর অপরাধ তারা মানুষের মর্যাদা নিয়ে মাথা তুলে বাঁচতে চেয়েছে। বাঙ্গালীর অপরাধ আল্লাহতালার সৃষ্ট এ পৃথিবীতে, আল্লাহর নির্দেশমত সম্মানের সাথে শান্তিতে সুখে বাস করতে চেয়েছে। বাঙ্গালীর অপরাধ মহান স্রষ্টার নির্দেশমত অন্যায়, অবিচার, শোষন ও নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে এক সুন্দর ও সুখী সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলবার সংকল্প ঘোষনা করেছে।

 মানবতার বিরুদ্ধে হানাদার বাহিনী দানবীয় শক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাদের সহায় আধুনিক মারণাস্ত্র আর আমাদের সহায় পরম করুণাময় সর্বশক্তিমান আল্লাহতালার সাহায্য, বাংলাদেশের জনসাধারনের অটুট মনোবল, মুক্তিলাভের দৃঢ় সংকল্প, শত্রুসংহারের অবিচল প্রতিজ্ঞা।