পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র
17

 বাংলাদেশের এ সংগ্রামে দল, মত, শ্রেণী, ধর্ম নেই। বাংলার মাটি, পানি আলো, বাতাসেলালিতপালিত মা নুষের আজ একমাত্র পরিচয় আমরা বাঙ্গালী। তাই বাংলার ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক, ধনিক-বণিক, নারী-পুরুষ সকলকেই মুক্তি বাহিনীর সঙ্গে সহায়তা করতে হবে, মুক্তি সৈনিকের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। বাংলার মাটি থেকে শত্রুকে উৎখাত করার জন্যে প্রত্যেককেই এগিয়ে যেতে হবে।

নির্দেশাবলী

 ১। প্রতি শহর/গ্রাম/মহল্লায় এক-একজন অধিনায়ক নির্বাচিত করে সমাজ জীবনে শৃঙখলা রক্ষা করতে হবে; আরও ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে শত্রুর সাথে অসহযোগ প্রতিরোধ সংঘাতের দুর্বার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

 ২। নিজ নিজ এলাকার খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির চাহিদার হিসাব রাখতে হবে আর চাহিদা মেটাবার জন্যে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়াবার আর সংগ্রহ করবার চেষ্টা করতে হবে।

 ৩। কালোবাজারি, মুনাফাখোরি, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি সমাজবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে। আদেশ অমান্য করলে শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

 ৪। দৈনন্দিন জীবনের সংযম ও কৃচ্ছ্রতা চালিয়ে যেতে হবে। সর্বপ্রকার বিলাসিতা ত্যাগ করে জাতির বৃহত্তর কল্যাণে পারস্পরিক মমত্ববোধে ভ্রাতৃত্বের হাতকে দৃঢ়তর করতে হবে। আত্মশক্তির উপর বিশ্বাস রেখে আত্মনির্ভরশীল বলিষ্ঠ সমাজ গড়ে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

 ৫। শত্রুকে চিনতে হবে। অবাঙ্গালী সামরিক বেসামরিক শত্রু তো আছেই। তারা কমবেশী চিহ্নিত। মারাত্মক হলো ঘরের শত্রু ধর্মের দোহাই দিয়ে, অখণ্ডতার বুলি আওড়িয়ে কালোবাজারী মজুতদারীর বেশে শত্রুর চর সরলপ্রাণ বাঙ্গালীর আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। এরা দোস্ত হিসোবে মনে ঠাই পেতে চায়। একবার ওদের খপ্পরে পড়লে আর নিস্তার পাওয়া যাবে না। এ ধরনের লোককে চিনে রাখতে হবে। বিশ্বাসঘাতকতার পথ ছেড়ে দেয়ার জন্যে তাদের বলতে হবে। তবুও যদি তাদের শুভবুদ্ধির উদয় না হয় তখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে তাদের নাম-ঠিকানা জানিয়ে দিতে হবে এবং কর্তৃপক্ষ দেশদ্রোহীর নির্ধারিত শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করবেন।

 ৬। গ্রামে গ্রামে রক্ষীবাহিনী গড়ে তুলতে হবে। মুক্তিবাহিনীর নিকটতম শিক্ষণশিবিরে রক্ষীবাহিনীর স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রামের শাস্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা ছাড়াও এরা প্রয়োজনে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধ সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করবেন।

 ৭। গ্রাম/শহর অথবা মহল্লার নেতারা নিজেদের মধ্যে নেতা নির্বাচন করে গ্রাম- গ্রামান্তরে যোগাযোগ ও পণ্য বিনিময় ব্যবস্থার সুযোগ-সুবিধা রক্ষার জন্যে প্রচেষ্টা চালাবেন। এর উপরের স্তরের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব থাকবে প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত সদস্যদের হাতে।

 ৮। বাংলাদেশের সকল মুক্ত এলাকায় সরকারী, আধাসরকারী, বে-সামরিক কর্মচারীরা স্তরে স্তরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশে কাজ করবেন। শত্রু কবলিত এলাকায় জনপ্রতিনিধিরাই ব্যক্তিবিশেষে অবস্থানুযায়ী ব্যবস্থা করবেন।

 ৯। সকল সামরিক, আধা সামরিক কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বাঙ্গালী কর্মচারী অনতিবিলম্বে নিকটতম মুক্তিসেনা শিবিরে যোগ দেবেন এবং কোন অবস্থাতেই শত্রুর সহযোগিতা করবেন না।

 ১০। যোগাযোগ ব্যবস্থার বিশেষভাবে নৌ-চলাচল সংস্থার কর্মচারীরা কোন অবস্থাতেই শত্রুর সাথে সহযোগিতা করবেন না এবং যতদূর সম্ভব যানবাহনাদি নিয়ে মুক্ত এলাকায় চলে আসবেন।