পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৯০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

870 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র সম্পর্ক সুপ্রাচীন। আমরা মনে করি, বাঙালী মানসিকতা ও বাংলার ধ্যানধারনার সঙ্গে বৃটেনবাসীর সম্যক পরিচয় আছে। বৃটিশ ভারতে শাসনবর্হিভূত অঞ্চলসহ গঠিত পশ্চিম পাকিস্তানের যুদ্ধবাজ গণতন্ত্রের দুশমনদের মানসিকতাও তাদের কাছে পরিচিত। তাই বৃটেন সরকারের পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া দুরূহ নয় বলেই আমরা মনে করি। ফরাসী দেশ সভ্যতার প্রথম গণবিপ্লবের উত্তরাধিকারী। গণসংগ্রামকে উপলব্ধি ও অনুভব করার ব্যাপারে তাঁদের একটা সুপ্রাচীন ঐতিহ্য আছে। ফরাসী বিপ্লবের উত্তরসুরী বাংলাদেশের বিপ্লবকে স্বীকৃতি জানিয়ে ফরাসী সরকার ও জনগণ তাদের গণমুখী ভূমিকা অব্যাহত রাখবেন বলে আশা করা অযৌক্তিক নয়। পাষন্ডের রক্ষাকবচ গণতন্ত্রের পুরোধা বলে প্রচারিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের পথিকৃৎ বলে পরিচিত চীন বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের কামনা-বাসনার প্রশ্নে যে সম্পূরক নীতি গ্রহণ করেছেন সে নীতির নিন্দা না করে পারা যায় না। জাতিসংঘের ভেতরে ও বাইরে ওয়াশিংটন-পিকিং আতাত যে ভূমিকা গ্রহন করেছে তাতে বিশ্বের স্বাধীনতাকামী প্রত্যেকটা মানুষ স্তম্ভিত হয়েছে। আত্নস্বাৰ্থ ভূমন্ডলীয় যুদ্ধনীতির খাতিরে এ দুটি পরস্পরবিরোধী শক্তির যে মিতালী হয়েছে। সে মিতালী মানুষের জন কল্যাণে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। সুবৃহৎ দুটি শক্তির এই ধরনের মিত্রতা বিশ্ব মানবগোষ্ঠীর জন্যে বড় রকমের একটা সর্বনাশ ডেকে আনার আশংকা রয়েছে বললে অত্যুক্তি করা হবে না। মার্কিন প্রশাসনের হাতে গণতন্ত্রের অপমৃত্যু আর মহান চীনে মার্কসবাদ ও লেনিনবাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বরূপের যৌথ অভিব্যক্তি ইয়াহিয়ার মত একটা পাষন্ডের রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়িয়েছে- এর চাইতে দুঃখের ও ক্ষোভের বিষয় আর কি হতে পারে। পররাষ্ট্রনীতির রুপরেখা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে স্বাধীন সার্বভৌম জোটনিরপেক্ষ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি। আমাদের মত ক্ষুদ্রায়তন এবং উন্নয়নকামী দেশকে ভূমন্ডলীয় শক্তি -সংঘাতে জড়িয়ে পড়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। আমরা সর্বপ্রকারের সামরিক জোট বা আতাতের বিরুদ্ধে। সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও বর্ণষৈম্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত সকল মানুষের প্রতি আমাদের সমর্থন থাকবে। কারও প্রতি আমাদের বিদ্বেষ নেই। সবার জন্যে আমাদের বন্ধুত্বের দুয়ার উন্মুক্ত। নিষ্ঠুর প্রহসন দুঃসহ আওয়ামী লীগ দলের পক্ষ থেকে দলের নেতা এবং স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর নির্বাচনপূর্ব বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে ১৯৭০ সালের ২৮ শে নভেম্বর এ পররাষ্ট্রনীতির রুপরেখা জাতির সামনে পেশ করেছিলেন। স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা বাংলার আদরের দুলাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ ইয়াহিয়াচক্রের কারাগারে আবদ্ধ। কি নিদারুণ পারিপার্শ্বিকতায় না বাংলার নয়নমণি দুঃসহ দিনগুলো কাটাচ্ছেন। আজ স্বাধীনতার নবীন উষাকে তাঁর অনুপস্থিতি শুধুমাত্র স্নানই করে দেয়নি, তাঁকে ছাড়া স্বাধীনতা আমাদের কাছে নিতান্তই অপূর্ণাঙ্গ, অসম্পূর্ণ। বাংলার পথে-প্রান্তরে, গ্রামে-গঞ্জে, শহর-বন্দরে বঙ্গবন্ধুর অমোঘ বাণী বাঙময় হয়ে উঠেছে। কিন্তু তিনি থেকেও আমাদের মধ্যে নেই। এ মর্ম-যাতনা দুঃসহ। এ নিষ্ঠুর প্রহসন আমরা স্বীকার করে নিতে পারি না। বলছি, শেখ মুজিবুর রহমানের মত ক্ষণজন্মা মহাপুরুষকে দানবের গ্রাস থেকে উদ্ধার করে আনার দায়িত্ব বিশ্ববিবেকের। লুমুম্বা হত্যার কুৎসিৎ বিয়োগান্তক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেজন্যে তৎপর হওয়া মানবিক মর্যাদাবোধে সকল বিশ্বাসী নাগরিকদের অবশ্য কর্তব্য। বৃহৎ শক্তিবর্গ ও জাতিসংঘের কাছে