পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ত্রয়োদশ খণ্ড).pdf/৫৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

569 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ত্রয়োদশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ উপমহাদেশীয় অবস্থা সম্পর্কে | সোভিয়েত তথ্য বিভাগ প্রচারিত ৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১ ‘তাস’-এর বিবৃতি পুস্তিকা তাস-এর বিবৃতি হিন্দুস্থান উপদ্বীপে পরিস্থিতি সম্পর্কে তাস-প্রচারিত বিবৃতির পূর্ণ পাঠ নিচে দেওয়া হল : হিন্দুস্থান উপদ্বীপে পরিস্থিতির গুরুতর অবনতির খবর আসছে। ৩রা ডিসেম্বর উত্তর-পশ্চিম ভারতের অনেকগুলো শহরে পাকিস্তানী বিমানবহর বোমা ফেলে ও গোলাবর্ষণ করে। ভারত-পাকিস্তানের সীমান্তে সশস্ত্র সংঘর্ষ চলছে। এটা সকলেরই জানা আছে যে, পাকিস্তান সরকার কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বন করায় উক্ত অঞ্চলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেই পরিস্থিতিই সম্প্রতি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে উত্তেজনা সৃষ্টির প্রধান কারণ। সম্প্রতিকালে স্বশাসন, প্রাথমিক নাগরিক অধিকার এবং স্বাধীনতার জন্য পূর্ব পাকিস্তানে এক গণআন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। ১৯৭০ সালে আইন-সভার যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেই নির্বাচনে মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করে। নির্বাচনের পর পূর্ব পাকিস্তানে স্বশাসনের বিষয় বিবেচনার জন্য ভবিষ্যতে রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রশ্নে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু কোনরকম ফয়সালা করার আগ্রহ না দেখিয়ে পাকিস্তান সরকার হঠাৎ ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ, সমস্ত আলাপ-আলোচনা ভেঙে দেন। মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের বন্দী করা হয় এবং তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। তারপরই শুরু হয় জনগণের ওপর নিষ্ঠুর পীড়ন। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয় এবং পূর্ব পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ নাগরিক প্রাণভয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে আসেন। পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক সন্ত্রাস ও অরাজকতার রাজত্ব শুরু হয়। ব্যাপক সন্ত্রাস ও উৎপীড়নের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের প্রতিরোধ যখন ক্রমশ দৃঢ় হয়ে উঠল তখন পাকিস্তান সরকার এই অবস্থার জন্য ভারতের কাঁধে দোষ চাপাল এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটাল। শান্তি রক্ষার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে সোভিয়েত সরকার বার বার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এবং পাকিস্তান সরকারের কাছে হিন্দুস্থান উপদ্বীপের পরিস্থিতির জন্য এবং পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলী সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে অত্যাচার ও উৎপীড়নের নীতি গ্রহণের জন্য নিন্দা করে পূর্ব পাকিস্তানে একটি রাজনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পাকিস্তান সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সোভিয়েত পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয় সোভিয়েত সরকারের স্থির বিশ্বাস যে উৎপীড়নের নীতি ত্যাগ করে, মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিয়ে, এবং ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রকাশিত মনোভাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি সমাধানের জন্য অবিলম্বে আলাপ-আলোচনা আবার শুরু করা উচিত। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারত আগত লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর দেশে ফিরে যাওয়ার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এই সব বিচার বিবেচনার জন্য পাকিস্তান সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে সোভিয়েত সরকার মানবিক নীতি অনুযায়ী কাজ করেছে এবং দেশে যে জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সেই সমস্যার সমাধানে পাকিস্তানের জনগণের সাফল্য কামনা করেছে।