পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
89

কামান আমাদের দেয়। এই কামানগুলি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়কার ছিল এবং সম্ভবতঃ সেকেল হিসেবে পরিত্যক্ত ছিল কিন্তু তবুও এগুলি পাবার পর আমার গোলন্দাজ বাহিনীর লোকদের মধ্যে একটি নতুন সাড়া জাগে। তারা তৎক্ষণাৎ এই কামানগুলি প্রশিক্ষন নিতে শুরু করে দেয়। প্রকৌশলী লোকের অভাব থাকায় বেঙ্গল রেজিমেণ্ট এবং গণবহিনী থেকে লোক ভর্তি করে তাদের ট্রেনিং দেয়া হয়। এ সময় ক্যাপ্টেন পান্না পাকিস্তান থেকে কোন রকমে সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়। তিনি গোলন্দাজ বাহিনীর লোক ছিলেন। ক্যাপ্টেন পান্না রাতদিন খেটে আমাদের এই গোলন্দাজ বাহিনীরকে ট্রেনিং করিয়ে শত বাধা-বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে মোটামুটি যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত করে তোলেন। এভাবে বাংলাদেশের প্রথম গোলন্দাজ বাহিনীর জন্ম হয়। জন্মের পর থেকে ফার্স্ট ফিল্ড রেজিমেণ্ট বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে জুলাই মাস থেকে আমরা কয়েকটি সাব-সেক্টরে কমাণ্ডার অপারেশনকে ফলপ্রসু করে তোলে। বিশেষ করে শালদা নদী, কোনাবনে প্রথম এই ফিল্ড রেজিমেণ্ট এর সহায়তার জন্যই পাক বাহিনীর বার বার আক্রমণ ক্যাপ্টেন গাফফার এবং মেজর সালেক প্রহিতহ এবং পর্যদুস্ত করতে সক্ষম হয়। ক্যাপ্টেন পাশার নেতৃত্বে আমাদের সদদ্য ট্রেনিংপ্রাপ্ত গোলন্দাজ ব হিনীর সৈন্যরা অনেক সময় এমনভাবে পাকসেনাদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে যে গোলন্দাজ বাহিনীর ইতিহাসে তার বিরল। পাকসেনাদের নিকট ছিল অত্যাধুনিক কামান, আর সেসব কামানের গোলা নিক্ষেপের ক্ষমতা ছিল বেশি। সব সময় পাকসেনাদের চেষ্টা ছিল তাদের কামানের গোলাতে আমাদের এই ছোট পুরাতন কামানগুলিকে বিনষ্ট করে দেয়া। সেজন্য দিনরাত আমাদের প্রথম ফিল্ড রেজিমেণ্ট কোন জায়গাতেই বেশীক্ষন এক স্থানে থাকতে পারতনা। সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানীদের গোলা তাদের উপর পড়ে। তাছাড়া আমাদের পুরাতন কামানগুলির গোলা ক্ষেপণের দুরত্ব ছিল পাকিস্তানীরদের অর্ধেকের কম। সে কারণে অধিকাংশ সময় আমাদের প্রথম ফিল্ড রেজিমেণ্ট-এর লোকেরা তাদের কামানগুলি মাথায় করে নিকটে বা পশ্চাতে দুর্গম রাস্তায় নিয়ে যেত এবং শত্রুদের উপর আক্রমণ করত। এসব আক্রমণের ফলে পাকসেনারা ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়তো। ফার্স্ট ফিল্ড রেজিমেণ্ট-এর কৌশল কতকটা কমাণ্ডো ধরনের। পরবর্তী পর্যায়ে প্রথম ফিল্ড রেজিমেণ্ট আমাদের মুক্তিবাহিনী যখন ডিসেম্বর মাসে ফেনী, নোয়াখালি এবং চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হয়, তখন 'কে' ফোর্সের ৪র্থ বেঙ্গল, ১০ম বেঙ্গল এবং ৯ম বেঙ্গলকে পাক বাহিনীদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সাহায্য করে। গোলন্দাজ বাহিনীর জন্য হবে এটা গৌরবের দৃষ্টান্ত।

 জুলাই মাসের ১২ তারিখে লেঃ হুমায়ুন কবির সি এণ্ড বি রাস্তার উপর একটি প্লাটুনের পেট্রোল পাঠায়। এই পেট্রোলটি শত্রুর গতিবিধি সম্বন্ধে খবরাখবর নেবার জন্য কুটি পর্যন্ত অগ্রসর হয়। দুপুর দুটার সময় এই পেট্রোল পার্টি যখন কুটির নিকট দিয়ে টহল দিচ্ছিল তখন তারা দেখতে পায় অনেক গাড়ীতে কুমিল্লা থেকে পাকিস্তানীরা সৈন্য সমাবেশ করছে। কুটিতে গাড়ী থেকে নেমে ওদের একটি ব্যাটালিয়ানের মত দধল মন্দভাগ বাজারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আমাদের পেট্রোলটি বুঝতে পারে যে, এই পাকসেনারা নয়নপুর, মন্দভাগ বাজার এবং লাটুমুড়া টি, আলীর বাড়ির নিকট নিজট অবস্থান গলি শক্তিশালী করার জন্য যাচ্ছে। মন্দভাগ বাজারের দলটি বাজারের দিকে এসে অবস্থান নেয় এবং দোকানের ভিতর বাঙ্কার তৈরী করতে থাকে। এ ছাড়া তাদের অবস্থানের চতুর্দিকে পাট এবং ধান কেটে পরিস্কার করে ফেলে যাতে তাদের গুলি সামনে আমাদের অবস্থানে এসে পড়ে। এসব সংবাদ পেট্রোল হেডকোয়ার্টারে পৌঁছে। সংবাদ পাবার পর আমি পাকসেনাদের ঘাঁটিগুলি শক্তিশালী হয়ে ওঠার আগেই তাদের উপর আঘাত হানার সিদ্ধান্ত নেই। ক্যাপ্টেন গাফফারকে ৪র্থ বেঙ্গলের 'সি' কোম্পানী দিয়ে ফার্স্ট ফিল্ড রেজিমেণ্টের কামানগুলি মন্দভাগ বাজারের নিকট পর্যন্ত অগ্রসর হয়। সন্ধা হবার আগেই ছোট ছোট কয়েকটি দল পাঠিয়ে বাজারটি এবং শত্রু অবস্থানটি সম্পুর্ণ খবরাখবর নেয়। সন্ধ্যায় ক্যাপ্টেন গাফফার তার কোম্পানী এবং ফার্স্ট ফিল্ড রেজিমেণ্ট-এর সহায়তায় মন্দভাগ বাজারের শত্রু অবস্থানের উপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। আমাদের কামানগুলি গোপনপথে নৌকাযোগে বাজারের পাশ্ববর্তী গ্রামে অবস্থান নেয়। ক্যাপ্টেন