পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
100

রোড খুলতে চেষ্টা করে। এই সময় মাঝে মাঝে পাকসেনাদের শক্তিশালী দল এই রাস্তায় টহল দেয়ার জন্যে আসত। চৌদ্দগ্রামের উত্তরে ও দক্ষিণে ইমামুজ্জামান এইসব পাকসেনাদের টহলদারী দলগুলোকে তাড়িয়ে দিত।

 ৩০শে জুলাই সকাল ৭টায় ইমামুজ্জামানের একটা প্লাটুন চৌদ্দগ্রামের ৪ মাইল দক্ষিণে নানকারা নামক স্থানে এ্যামবুশ পাতে। এ্যামবুশ পার্টি সারা দিন অপেক্ষা করার পর জানতে পারে যে, জগন্নাথদিঘীর নিকট একটি জীপ টহলে বেরোবার জন্যে তৈরী হচ্ছে। এই জীপকে এ্যামবুশ করার জন্য এ্যামবুশ পার্টি তখনই তৈরী হয়ে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময় পাকবাহিনীর এই জীপটি চৌদ্দগ্রামের দিকে অগ্রসর হয় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের এ্যামবুশ অবস্থানে পৌঁছে। পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে এ্যামবুশ পার্টি জীপটির উপর মেশিনগান এবং হালকা মেশিনগান থেকে গুলি চালায়। গুলিতে ড্রাইভার আহত হয়। ৬ জন পাকসেনা জীপ থেকে লাফিয়ে নিচে নামে; কিন্তু তারাও আমাদের এ্যামবুশ পার্টির গুলিতে নিহত হয়। পরে এ্যামবুশ পার্টি একটি মৃত পাকসেনার পকেটে একটি চিঠি পায়। তা থেকে জানা যায় যে এই পাকসেনারা ২৯তম বেলুচ রেজিমেণ্টের ‘সি’ কোম্পানীর লোক। নিহত পাকসেনাদের নিকট হতে রাইফেল এবং যথেষ্ট গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। একজন আহত পাকসেনা আমাদের হাতে বন্দি হয়। এই এ্যামবুশের পর পাকসেনারা কুমল্লিা থেকে আরও সৈন্য চৌদ্দগ্রামে নিয়ে আসে এবং সারা রাত ধরে আমাদের অবস্থানের উপর মর্টার এবং কামানের গোলা নিক্ষেপ করে। আমাদের লোকেরাও শত্রু অবস্থানের উপর মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করে। পরদিন ৩১শে জুলাই সকালে পাকিস্তানীদের একটি কোম্পানী চৌদ্দগ্রাম থেকে ও আর একটি কোম্পানী জগন্নাথদিঘী থেকে ট্রাঙ্ক রোড হয়ে আমাদের অবস্থানের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পাকসেনারা যখন আমাদের অবস্থানের ২০০ গজের মধ্যে পৌঁছে, তখনই আমাদের এ্যামবুশ অবস্থান থেকে তাদের উপর অতর্কিত গুলি চালান হয়। গুলির আঘাতে ২০ জন পাকসেনা রাস্তার উত্তরে এবং ৬ জন দক্ষিণে আহত ও নিহত হয়। পাকসেনারা কামানের গোলার সহায়তায় পিছনে সরে যেতে থাকে। এই সময়েও আমাদের গুলির আঘাতে আরও কিছু সৈন্য হতাহত হয়। এরপর আমাদের এ্যামবুশ পার্টি সেই অবস্থান পরিত্যাগ করে হরিশ্বরদার হাটের নিকট নতুন অবস্থান নেয়। এর দুদিন পর ২রা আগস্ট সকাল ৭টায় পাকসেনাদের একটি ব্যাটালিয়ন উত্তর, দক্ষিণ, পশ্চিম হতে হরিশ্বরদার হাটের দিকে অগ্রসর হয়। এই সময়ে আমদের অবস্থানে লেঃ ইমামুজ্জামান আরও দুটি প্লাটুন পাঠিয়ে অবস্থানটি শক্তিশালী করে। পাকসেনারা হরিদশ্বর হাটের নিকট অবস্থিত তিনটি ভাঙ্গা সে পর্যন্ত অগ্রসর হয় এবং সেখানে পিছন থেকে গোলাগুলি চালায়। আমাদের কোম্পানীটিও সাহসের সঙ্গে পাকসেনাদের আক্রমণকে প্রতিহত করতে থাকে। সমস্ত দিনের যুদ্ধ পাকসেনাদের ২৫ জন হতাহত হয়। পাকসেনারা ২রা আগস্ট রাতে প্রধান সড়কের উপর তাদের প্রতিরক্ষাব্রু তৈরী করে। এর পরদিন ৩রা আগস্ট সমস্ত দিন ধরে পাকসেনাদের সাথে সংঘর্ষ চলে। ঐ দিন সন্ধ্যায় আমাদের কোম্পানীটি অবস্থান পরিত্যাগ করে তাদের ঘাটিতে ফিরে আসে।

 পাকসেনাদের একটি শক্তিশালি দল নয়ানপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় সুদৃঢ় ঘাঁটি করে অবস্থান করছিল। অনেক সময় এই অবস্থানের সঙ্গে অতীতে আমাদের যথেষ্ট সংঘর্ষ হয়। পাকসেনারা এই ঘাঁটিতে আরও বাড়িয়ে শালদা নদীর অবস্থান পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করছিল। মেজর সালেক পাকসেনাদের নয়ানপুর ঘাঁটি আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই ঘাঁটিতে পাকসেনাদের অন্তত এক কোম্পানীর চেয়ে বেশি সৈন্য ছিল। পাকসেনারা স্টেশন ও নিকটবর্তী রেলওয়ে গুদাম এলাকায় তাদের সুদৃঢ় বাঙ্কার তৈরী করে। মেজর সালেক পাকসেনাদের এই অবস্থানটি সম্বন্ধে বিস্তারিত খবরাখবর সংগ্রহ করে। এরপর ৪র্থ বেঙ্গলের ‘এ’ কোম্পানী এবং কিছুসংখ্যক গণবাহিনী নিয়ে রাত সাড়ে ১২টার সময় পাকসেনাদের অবস্থানের নিকট জমায়েত হতে থাকে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রাত আড়াইটার সময় স্টেশনের ২০০ গজ উত্তরে রেললাইন পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে দখল করে নিতে সক্ষম হয়। এই সময়ে পাকসেনাদের গোলাগুলি ভীষণ তীব্র হতে শুরু করে এবং আমাদের সেনাদের আক্রমণ