পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
122

শক্তি বৃদ্ধি করে আমাদের উপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। আমাদের সৈনিকরা সাহসিকতার সাথে পরে আক্রমণের মোকাবিলা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের বাহিনী গোলাবারুদ ফুরিয়ে এলে অবস্থান পরিত্যাগ করে নিরাপদে মূল অবস্থানে ফিরে আসে। এই সংঘর্ষে আমাদের পক্ষে একজন শহীদ ও ১১ জন আহত হয়। আমাদের যুদ্ধচলাকালীন সময়ে পাকসেনাদের একটি সরবরাহবাহী ট্রলী মুন্সীরহাট থেকে বেলুনিয়ার দিকে যাওয়ার পথে আমাদের নৈসিকদের পুঁতে রাখা মাইনের আঘাতে ধ্বংস হয়। এতে তিনজন পাকসেনা নিহত ও ৬ জন আহত হয়। ট্রলিতে বোঝাই গোলাবারুদ এবং রেশনও ধ্বংস হয়ে যায়।

 এই ঘটনার দু'দিন পর ১লা অক্টোবর রাত ১১টার সময় আমাদের একটি শক্তিশালী দল পাকসেনাদের মুন্সীরহাট অবস্থানের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। মুন্সীরহাট পাকসেনাদের জন্য বেলুনিয়া সেক্টরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ছিল। কারণ এই ঘাঁটির মাধ্যমে বেলুনিয়ার পশ্চিম দিকে তাদের অবস্থানগুলোতে সরবরাহ অব্যাহত রেখেছিল। বস্তুত সেই জন্যই আমাদের আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু আমাদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে তাদের অবস্থান পরিত্যাগ করে পালিয়ে যায়। এর পরদিন ২রা অক্টোবর পরশুরাম শত্রুঘাঁটির উপর আমাদের সৈনিকরা আক্রমণের চাপ বাড়াতে শুরু করে। পাকসেনারা বিপুলসংখ্যক সমাবেশ করে তাদের এই অবস্থানকে রক্ষা করার জন্য আমাদের উপরও পাল্টা আক্রমণ চালায়। আমাদের সৈনিকরা পাকসেনাদের পরশুরামের দিক থেকে এই পাল্টা আক্রমণ দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিহতকরে। এতে পাকসেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পাকসেনাদের আক্রমণ প্রতিহত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অন্যান্য অবস্থান থেকে প্রায় ২/৩ কোম্পানী সৈন্য একত্রিত করে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া পাকসেনাদের উপর পুনরায় পাল্টা আক্রমণ চালাবার জন্য নির্দেশ দেই। আমাদের সৈন্যরা পাকসেনাদেরও উপর আক্রমণ চালিয়ে তাদেরকে পিছু হটিয়ে দেয় এবং মহুরী নদী অতিক্রম করে পরশুরামের পাকসেনাদের অনেকগুলো অবস্থান দখল করে নেয়। পাকসেনারা তাদের অবস্থানের উপর অক্রমণ হওয়াতে নিজেদের গোলন্দাজ বাহিনীরক সাহয্যের জন্য অনুরোধ জানায়। আমজাদ নগরে অবস্থিত পাক গোলন্দাজ বাহিনী পরশুরামের উপর গোলাবর্ষণ শুরু করে। কিন্তু সৌভাগ্যবশত আমাদের আক্রমণের চাপ শত্রুঘাঁটির অতি নিকটবর্তী থাকা সে গোলাগুলি বেশীরভাগই তাদের নিজেদের অবস্থানের উপর আঘাত হানতে থাকে। আমাদের আক্রমণের চাপ ও তাদের নিজেদের গোলার আঘাতে পাকসেনাদের অবস্থানটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় ৩০/৪০ জন পাকসেনা নিহত ও প্রচুরসংখ্যক সৈন্য আহত হয়। তারা উপায়ান্তর না দেখে তাদের পরশুরামের অবস্থানটি পরিত্যাগ করে আসেন পেছনে নতুন করে অবস্থান নেয়। কয়েকদিনের যুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের সৈনিকদের কাছে বিপর্যন্ত হয়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার কের বেলুনিয়া ও পরমুরামের পাকসেনাদের মনোবল সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে যায়। পাকসেনাদের এহেন মোচনীয় অবস্থা দেখে আমরা তাদের উপর আমাদের চাপ অব্যাহত রাখি। ২রা অক্টোবর সন্ধ্যায় আমাদের একটি দল পাকসেনাদের শালদার অবস্থানের উপর আক্রমণ চালিয়ে ৯জন পাকসেনা নিহত করে এবং তাদের অকেনক রসদ বিনষ্ট করি দেয়। পাকসেনারা তাদের অবস্থানগুলোকে রক্ষা করার জন্য ২রা ও ৩রা অক্টোরের মধ্যবর্তী রাতে ফেনী থেকে মুন্সীরহাট ও চিতলিয়াতে আরো এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য সমাবেশ করে। ৩ তারিখ সকাল ছয় টার সময় তাদের একটি শক্তিশালী দল আমাদের অনন্তপুর ও ধানীকুণ্ডার অগ্রবর্তী অবস্থানের দিকে অগ্রসর হয়। ভারী কামান ও মর্টাররের সাহয্যে তারা আমাদের অবস্থানগুরোতে প্রচণ্ড গোলাবর্ণণ করে এবং সেই সঙ্গে তাদের পদাতিক বাহিনীও আক্রমণ চালায়। পাকসেনারা যখন অবস্থানের ৪০/৫০ গজের মধ্যে পৌঁছে, তখন আমাদের সৈনিকরা তাদের উপর প্রচণ্ড গুলি চালিয়ে প্রায় ২৫/৩০ জন পাকসেনাকে নিহত করে। পাকসেনারা হামলা চালিয়ে আমাদের অনন্তপুরের অবস্থানের দক্ষিণাংশের ট্রেঞ্চগুলো দখল করে নেয়। দক্ষিণাংশে একটি হালকা মেশিনগান বাংকারের উপর কামানের গুলি লেগে ধ্বংস হয়। এই আঘাতে আমাদের কয়েকজন সৈনিক শহীদ হয়। পাকসেনাদের এই প্রবল চাপ ও প্রচণ্ড কামানের গুলির মুখে প্রয়োজনীয় গোলাবারুদ ও অস্ত্রের অভাবে টিকতে না পেরে আমাদের অগ্রবর্তী ঘাঁটির সৈনিকরা পিছু হটে মুখ্য অবস্থানে আসে। পাকসেনারা তাদের আক্রমণ আমাদের মুখ্য অবস্থানের উপরও চালাতে থাকে। এই সময় আমাদের গোলন্দাজ বাহিনী এবং মর্টারের গোলাতে তাদের আক্রমণ প্রতিহত হয়ে যায়। মুখ্য অবস্থানের সামনে টিকতে