পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
132

অফিসারসহ ৫০ জন পাকসেনাকে নিহত করে। তাদের চারটি নৌকাও ডুবিয়ে দেয়। গোসাইরহাট রেলস্টেশনের নিকট একটি রেলইঞ্জিন মাইন দিয়ে উড়িয়ে দেয়। এসব সংঘর্ষে আমাদের গেরিলারা অনেক অস্ত্রশসন্ত্র দখল করে। অক্টোবর মাসেন প্রথম সপ্তাহে পাকসেনারা কসবার পশ্চিমে প্রায় দুই কোম্পানী সৈন্য সমাবেশ করে। পাক সমাবেশ আমরা বুঝতে পারি যে, কসবাকে পুর্ণদখল করার জন্য তারা পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা তাদের সম্ভাব্য আক্রমণের মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুতি নেই। আমি আমাদের কসবা অবস্থানের সাহায্যর্থে আমাদের প্রথম গোলন্দাজ ব্যটারীকে অনুরুপভাবে মোতায়েন করি।

 ১৩ ই অক্টোবর সন্ধ্যা ৫-৩০ টায় পাকসেনারা গোলমদাজ বাহিনীর সহায়তায় আমাদের অবস্থানের উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। ৪র্থ বেঙ্গলের 'ডি' কোম্পানী বিপুল সাহস ও দৃঢ় আস্থার সঙ্গে এই আক্রমণের মোকাবিলা করে।প্রায় একঘণ্টা যুদ্ধের পর গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় তীব্র পাল্টা আক্রমণের মুখে পাকসেনারা টিকতে না পেরে পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়। যুদ্ধে প্রায় ৪৫ জন পাকসেনা হতাহত হয়। ১৫টি জি ও রাইফেল, একটি ৩” মর্টার এবং ৩৫০০টি ৭.৬২ গুলি ও ৮টি ৩" মর্টারের গোলা আমাদের হস্তগত হয়। এছাড়াও ন'টি বাঙ্কার ধ্বংস করা হয়। এই প্রচণ্ড সংঘর্ষে আমাদের দু'জন শহীদ হয় এবং একজন আহত হয়। পরে জানা যায় যে, পাকসেনারা এই আক্রমণে পঞ্চম পাঞ্জাব রেজিমেণ্টের সৈন্য নিয়োগ করেছিল। পরদিন পাকসেনারা যখন কসবার পশ্চিম দিক থেকে আরো পিছু হটে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময় আমাদের একটি প্লাটুন তাদের একটি দলকে এ্যামবুশ করে। এ্যামবুশে প্রায় ১৫ জন পাকসেনা এবং ১৫জন রাজাকার নিহত হয়। আমাদের দু'জন সৈনিক শহীদ এবং একজন আহত হয়। আমাদের একটি হালকা মেশিনগান বিনষ্ট হয়।

 এই সময় পাকসেনারা তাদের অগ্রবর্তী ঘাঁটগুলিতে লঞ্চ ও নৌকার সাহায্যে রসদ সরবরাহ করতো। নদীপথে জলযান বন্ধ করে দেয়ার জন্য আমি একটি গেরিলা দলকে বাঞ্জারাম থানার উজানচরের নিকট বিদ্যুৎ সরবরাহকারী পাইলনগুলো কেটে নদীতে ফেলে নদীপথে বাধা সৃষ্টি করার নির্দেশমত আমাদের গেরিলা দল বৈদ্যুতিক পাইলনগুলি কেটে নদীতে ফেলে দিয়ে একটু দুরে এ্যামবুশ পেতে অপেক্ষা করতে থাকে। পাইলন কাটার সংবাদ পেয়ে ৩/৪টি লঞ্চভর্তি পাকসেনা, মুজাহিদ ও রাজাকার নদীপথের এই বাধাগুলো পরিস্কার করার জন্য আসে। পাকসেনারা যখন কজে লেগে যায় ঠিক এমন অদুরেই এ্যামবুশ পেতে অবস্থানরত আমাদের গেরিলারা তাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। ফলে প্রায় ৭০/৮০ জন পাকসেনা, মুজাহিদ এবং রাজাকার নিহত হয়। গেরিলাদের প্রচণ্ড গোলার মুখে অবশিষ্ট পাকসেনা লঞ্চ নিয়ে পালিয়ে আত্যরক্ষা করে।এই বিপর্যয়ের কয়েকদিন পর পাকসেনারা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ৫/৬ টি লঞ্চে বিপুলসংখ্যক সৈন্য বিমান বাহিনীর সহায়তায় আমাদের উজানচরের ঘাঁটির উপর আক্রমণ চালায়। আমাদের সৈনিকরা শুধু হালকা মেশিনগান, রাইফেল ও এস এল আর নিয়ে পাকসেনাদের এই বিপুল শক্তির বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ চালায়। কিন্তু বিমান হামলার বিরুদ্ধে টিকতে না পেরে অবশেষে অবস্থানটি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এর তিনদিন পর ১১ই অক্টোবর বিকাল চারটায় আমাদের এই দলটি জানতে পারে যে, পাকসেনাদের একটি প্লাটুন লঞ্চযোগে বাঞ্চারাম থানার আসাদনগর এলাকা লুট করার জন্য অগ্রসর হচ্ছে। এই খবর পেয়ে আমাদের গেরিলা দলটি পাকসেনাদের লঞ্চটিকে আসাদনগরে এ্যমবুশ করে। এ্যামবুশে ৮জন পাকসেনা নিহত হয় এবং অন্যরা পলায়ন করে প্রাণ বাচায়। আমাদের আরেকটি দল হোমনায় তাদের ওবেইস তৈরী করে। এই সময় হোমনা থানাতে পাকসেনারা পশ্চিম পাক পুলিশ মোতায়েন করে। আমাদের গেরিলা দলটি হোমনা থানাতে অতর্কিত আক্রমণ চালায়ে ৭জন পাকপুলিশকে নিহত করে এবং রাইফেল ও কয়েকশ রাউণ্ড গুলি দখল করে নেয়।

 পাকসেনারা কসবাতে বিপর্যস্ত হওয়ার পর কুমিল্লা থেকে চান্দলার নিকট সৈন্য সমাবেশ করে। পাকসেনাদের এই সমাবেশের মুল কারণ ছিল মন্দভাগকে পুনর্দখল করা। ৪র্থ বেঙ্গলের 'সি' কোম্পানী এই সময় মন্দভাগের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল। ১৮ তারিখ রাত সাড়ে তিনটায় পাকসেনারা প্রায় এক কোম্পানী