পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
133

শক্তি নিয়ে আমাদের প্রতিরক্ষার উপর আক্রমণ চালাতে শুরু করে। প্রায় তিনঘণ্টা যুদ্ধের পর সকাল সাড়ে ছ'টা পর্যন্ত আমাদের সৈনিকরা এই আক্রমণকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। পাকসেনারা প্রতিহত হয়ে আমাদের রক্ষাব্যূহের সামনে থেকে গোলাগুলি চালাতে থাকে। বেলা দশটার সময় পাকসেনারা আরো দু কোম্পানী সৈন্য নিয়ে দু'বার আক্রমণ চালায়। পাকসেনাদের এই শক্তিশালী দলগুলো গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় প্রবল বাধার মাঝেও সামনে অগ্রসর হতে থাকে। অগ্রসর হওয়ার সময় আমাদের সৈনিকদের গুলিতে তাদের অনেক হতাহত হয়। অবশেষে পাকসেনারা আমাদের প্রতিরক্ষব্যুহ ভেদ করতে সক্ষম হয়। প্রায় দু'ঘণ্টা যাবৎ হাতাহাতি যুদ্ধে আমাদের দুর্ধর্ষ সৈনিকরা আমাদের প্রতিরক্ষাব্যূহে প্রবেশকারী পাকসেনাদেরকে সাফল্যের সঙ্গে সম্পুর্ণরূপে পর্যদন্ত করতে সক্ষম হয়। পাকসেনারা তাদের মৃতদেহ ফেলে রেখেই পলায়ন করতে বাধ্য হয়। আমাদের প্রতিরক্ষাব্যূহের চতুর্দিকস্থ কর্দমাক্ত নিম্ন জলাভূমি দিয়ে পালাবার পথে তারা আরো অধিকভাবে বিপর্যয়ের সন্মুখীন হয়। আমাদের সৈন্যরা এই যুদ্ধে ৩৩ তম বেলুচ রেজিমেণ্টের সেকেণ্ড লেঃ পারভেজ খানসহ ৮জন পাকসেনাকে বন্দী করে। এছাড়া একজন অফিসারসহ ৫০জন পাকসেনা নিহত হয়। ৬টি এমজিআইএ -৩, কুড়িটি ৭৩৬২ চায়না রাইফেল, চারটি জি-৩ রাইফেল, একটি মর্টার, একটি হালকা পিস্তল, পাঁচটি সাবমিশিনগান, ১৫ বাক্স মেশিনগানের গুলি, ৩১টি ৯৪-এলাগা গ্রেনেড, ২০টি ৩৬-এইচই গ্রেনেড, ১০টি এমএম বোমা, অনেকগুলো বেয়োনেট, বেশকিছু জি-৩ রাইফেল ম্যাগজিন, ১৫টি বিভিন্ন দলিলপত্রসহ বেশকিছু ফাইল আমাদের সৈন্যরা দখল করে নেয়। এই প্রচণ্ড যুদ্ধে আমাদের পাঁচজন সৈনিক গুরুতরভাবে আহত হয়, কেউ শহীদ হয়নি। তাদের এই বিপুল বিপর্যয়ের ফলে পর্যুদন্ত দিশেহারা পাকবাহিনী এফ -৮৬ জঙ্গীবিমান দিয়ে আমাদের অবস্থানে প্রায় ৪৫ মিনিটকাল ধরে মারাত্বকভাবে হামলা চালায়। পাকসেনার গোলন্দাজ ইউনিটর ভারী কামানের সাহায্যে শত শত গোলাবর্ষণ করতে থাকে। আমাদের এই অবস্থানটি দখল করতে না পেরে পাকসেনারা কিছু পিছনে গিয়ে পুনরায় আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ২০শে অক্টোবর পাকসেনাদের একটি শক্তিশালী দল সকাল থেকে কামালপুরের নিকট আমাদের আরেকটি অবস্থানের উপর গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণেও তারা আমাদের শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যূহে ভেদ করতে না পেরে বিফল হয়। পাকিস্তানীদের একজন অফিসারসহ ৩০জন সৈনিক নিহত হয়। বার বার ব্যর্থ হওয়ায় পাকবাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। পাকসেনারা ৩/৪দিন ধরে আমাদের অবস্থান গুলোর দুর্বলতা সম্পর্কে অনসন্ধান চালায়। ২৫ তারিখ অপরাহ্ন ৩-৫মিনিট থেকে মন্দভাগ, মঙ্গলপুর ও শ্রীপুরস্থ আমাদের অবস্থানগুলোর উপর বিকাল ৪-১০ পর্যন্ত চারটি এফ -৮৬ জঙ্গীবিমান প্রবলভাবে হামলা চালায় এবং একই সঙ্গে গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় পাকসৈনিকরাও এইসব অবস্থানগুলোর উপর প্রবল আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণ সন্ধ্যা ৬-৩০টা পর্যন্ত চলতে থাকে।আমাদের সৈনিকরাও মনোবল না হারিয়ে পাকসেনাদের এই সম্মিলিত আক্রমণকে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিহত করে। সংঘর্ষে পাকসেনাদেরও প্রায় ৫৮জন সৈনিক হতাহত হয়। ফলে তাদের আক্রমণ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বাধ্য হয়ে পিছু হটে যায়। যুদ্ধে আমাদের দু'জন সৈনিক শহীদ এবং ৯জন আহত হয়।

 আমরা যখন মন্দভাগে পাকসেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত এবং পাকসেনাদের প্রতিহত করার জন্য কসবার অবস্থান থেকে কিছুসংখ্যক সৈন্য মন্দভাগ নিয়ে মন্দভাগ অবস্থানকে শক্তিশালী করছিলাম ঠিক তখনই আমাদের কসবার অবস্থানের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পাকসেনারা অগ্রসর হয়ে কসবার পুরোনো বাজার পর্যন্ত পুনর্দখল করে নেয়।

 সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে আমার সেক্টরের সৈনিকদের পুনর্গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ আসে কে-ফোর্স, গঠনের, আমি আগে থেকেই মনস্থ করেছিলাম যে, পাকসেনাদের উপর পুনঃ আক্রমণের পুর্বে আমার অধীনস্থ সৈনিকদের পুনর্গনের দরকার। গত ৪/৫ মাস ধরে অবিরাম যদ্ধে এবং জীবনধারনের নিতম প্রয়োজন আহারুনিদ্রা থেকে বঞ্চিত ও যুদ্ধে সামগ্রীর অপর্যাপ্ততা ইত্যাদি প্রবল প্রতিকুলতার দরুন তারা স্বাভাবিক কারনেই অত্যন্ত পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। সুতরাং পরবর্তী প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এছাড়া নতুন প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত সৈনিকদের