আক্রমন চালাচ্ছে। তাদের পক্ষে এই ঘাঁটিতে বেশীক্ষণ টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। এই ম্যাসেজ পাওয়ার পর পাকসেনাদের দুর্বলতা সম্পূর্নভাবে বুঝতে পারি। তাদের মনোবল যে একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে তাবেশ বোঝা যায়। সঙ্গে সঙ্গে সুবেদার মঙ্গল মিয়াকে তার আক্রমণ আরো জোরদার করার নির্দেশদেই। এই প্রচণ্ড আক্রমণে টিকতে না পেরে গুদামঘরে অবস্থানরত পাকনোরা নয়ানপুর রেলস্টেশনের দিকে পালাতে থাকে। সুবেদার মঙ্গল মিয়ার দলটি গুদামঘর এলাকা দখল করে নেয়। আরো কিছুক্ষণ যুদ্ধ চলার পর সুবেদার বেলায়েত এবং নায়েবসুবেদার সিরাজের প্রচণ্ড আক্রমণে শালদা নদীরেলস্টেশনে অবস্থানকারী পাকসেনারাও রেললাইন ধরে নয়ানপুরে দিকে পালাতে থাকে। আমাদের সৈনিকরা পলায়নপর পাকসেনাদের পাকসেনাদের উপর গুলি চালিয়ে অনেককে হতাহত করে। দুপুর নাগাদ সমস্ত শালদা নদী এলাকা শত্রুমুক্ত হয় এবং আমাদের সম্পূর্ন নিয়ান্ত্রণাধীনে আসে। পাকসেনারা যাতে এই এলাকাটি আবার দখল করে নিতে না পারে সেজন্য আমাদের অবস্থানটিকে শক্তিশালী করে তোলা হয়। পাকসেনারা নয়াপুর রেলস্টেশনের ঘাঁটি থেকে বেশ কয়েকবার এই অবস্থানের উপর মর্টার ও কামানের আক্রমণ চালায় এবং এই অবস্থানটি পুনর্দখলের জন্য শালদী নদী গুদামঘরের দক্ষিনে কিছুসংখ্যাক সৈন্য সমাবেশ করে। এই খবর পেয়ে সুবেদার বেলায়েত একটি দল নিয়ে পাকসেনাদের আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য গুদামঘর এলাকায় আক্রমণ চালায়। পাকসেনাদের আক্রমণ প্রতিহত হয় এবং তারা পালিয়ে যায়। কিন্তু একজন পাকসেনা আড়াল থেকে সুবেদার বেলায়েতকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। সুবেদার বেলায়েতের মাথায় গুলি বিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে চিকিৎসার জন্য ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী হাসপাতালে পাঠনো হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে হাসপাতালে পৌঁছায় আগেই পথে সে শাহাদত্বরণ করে। তার মত বীর সৈনিকের শহীদ হওয়াতে আমরা সবাই মর্মাহত হয়ে পড়ি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা বাংলাদেশ একজন মহান বীরকে হরালো। সুবেদার বেলায়েতের কীর্তি এবং বিক্রমের কথা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
শালদা নদী এলাকা দখল করা একটি দুঃসাহসী পকিল্পনা ছিল। এই পরিকল্পনা অত্যন্ত অপ্রচলিত কৌশলের একটি বিরাট সাফল্য। এর ফলে কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত সম্পূর্ন এলাকা শত্রুমুক্ত হয়। বাংলাদেশ সরকার ক্যাপ্টেন গাফফার এবং শহীদ বেলায়েতকে কৃতিত্বপূর্ন লড়াইয়ের জন্য বীরউত্তম উপাধিতে ভূষিত করেন। এই যুদ্ধে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র আমাদের হস্তগত হয়। এগুলোর মধ্যে ২১টা রাইফেল, ৫টা এল-এম-জি, ৩টা এম-জি-এই-৩ মেশিনগান, ৩১টা হালকা মেশিনগান ম্যাগাজিন, ৪টা রকেট লাঞ্চার (৮০টি গোলাসহ) ১টা এস-এম-জি, ১টা অয়্যারলেস সেট, ২০২৫০টি গুলি, ২০০টি ২” মর্টার বোমা, ৩টা টেলিফোন সেট ১টা জেনারেল, ২টা এম-জি ব্যারেল, অনেক রেশন কাপর-চোপর ম্যাপ ও বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র আমাদের দখলে আসে। এইসব দলিলপত্র থেকে জানা যায় ৩০তম পাঞ্জাব জজিমেণ্টের 'বি' কোম্পানী ও ‘ডি’ কোম্পানী পাকিস্তানীদের প্রতিরক্ষব্যূহ নিয়োজিত ছিল। এই সংঘর্ষে প্রায় ৮০/৯০ জন পাকসেনা হতাহত হয় এবং ১২জন পাকসেনা আমাদের হাতে জীবন্ত ধরা পড়ে। ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ১৬ঘণ্টা যুদ্ধে আমাদের ২জন শহীদ এবং ৮ জন আহত হন।
শালদা নদী কমপ্লেক্স আমাদের হস্তগত হওয়ার পর পাকসেনারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এই এলাকা পুর্নদখলের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। পাকসেনারা চান্দলার নিকটে অন্যান্য এলাকা থেকে প্রচুর সৈন্য এনে সমাবেশ ঘটায়। ১৬ই নভেম্বর রাত ২-১৫ মিঃ এ পাকসেনারা প্রায় দুই ব্যাটালিয়ন সৈন্যশক্তি নিয়ে আমাদের শালদা নদী, মন্দভাগ, কামালপুর, মঙ্গল প্রভৃতি অবস্থানের উপর গোলন্দাজ বাহিনী ও মর্টারের সহায়তায় প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণ প্রায় ৩/৪ ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে। ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্টের সৈনিকরা অসীম সাহসিকতার সঙ্গে পাকসেনাদের এই প্রচণ্ড আক্রমণকে প্রতিহত করে। সকাল পর্যন্ত যুদ্ধে পাকসেনাদের বিপুলসংখ্যক সেনা হতাহত হয় এবং উপায়ান্তর না দেখে পাকসেনারা আক্রমণ পরিত্যাগ করে পিছু হটে যায়। এর একদিন পর আমাদের একটি ছোট দল মঙ্গলপুরের নিকট পাকসেনাদের ঘাঁটির উপর অতর্কিত আক্রমন চালিয়ে ১৭ জন পাকসেনাকে নিহত ও অনেককে আহত করে। আরেকটি রেইডিং পার্ট কাইউমপুরে পাকসেনাদের অবস্থানের