পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
163

আক্রমণ শুরু করি। রকেট লাঞ্চারের সাহায্যে শত্রুদের পাঁচটা গাড়ি ধ্বংস করে দেয়া হয়। ১৫ জন পাকসেনা নিহত এবং কতজন আহত হয়েছিল আমার জানা নাই। ৩ জন জীবিত শত্রুসেনাকে আমরা ধরে ফেলি। এদের একজন হচ্ছে নায়েক সুবেদার বশির (সিন্ধি)। আমরা কিছু গোলাগুলি, অস্ত্রশস্ত্র এবং জরুরী কিছু কাগজপত্র উদ্ধার করি। শত্রুরা গোলন্দাজ বাহিনীর সাহায্যে গোলাবর্ষণ শুরু করলে আমরা অবস্থান পরিত্যাগ করি। জীবিত শত্রুসেনাদের আমি মেলা ঘরে পাঠিয়ে দেই। এরা ধৃত হবার ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বেরে যায়।

 বাচ্চু নামে (ক্লাশ নাইনে পড়ত তখন) অসীমসাহসী যুবক একটা হালকা মেশিনগান নিয়ে শালদা নদীর এক স্থানে এ্যামবুশ পেতে শত্রুদের একটা নৌকা উড়িয়ে দিয়। নৌকাতে অবস্থানরত ১২ জন পাকসেনা এতে মারা যায়।

 শালদা নদীর পূর্বপারে মন্দভাগ গ্রাম আমাদের দখলে ছিল। নদীর অপর পার আমাদের দখলে না থাকলেও শত্রুদের নিয়ন্ত্রনে ছিল না। নদীর ওপারে চাঁদলা গ্রামে শত্রুরা অবস্থান নিয়েছিল। শত্রুরা বারবার চাপ দিছিল মন্দভাগ দখল করে নেবার জন্য। আমরা ছোট ছোট অয়্যারলেসের মধ্য দিয়ে ধরতে পারি শত্রুরা যে কোন মুহুর্তে মন্দভাগ আক্রমন করতে পারে। ২১শে সেপ্টেম্বর শত্রুরা চাঁদলা থেকে চারটা নৌকায় করে মন্দভাগ আসছিল। মেজর দূররানির নেতৃত্বে ৩৩-বেলুচের নেতৃত্বে 'বি' এবং “ডি” কোম্পানী এ নৌকাগুলিতে ছিল। শত্রুরা আক্রমন করতে পারে ভেবে আমি বাছাই করা একটা প্লাটুনকে সুবেদার ওহাবের নেতৃত্বে মন্দভাগ শালদা নদীর উপরে অবস্থান নিতে বলি। আর একটা সেকশনকে গ্রামের একপাশে আমার ডানদিকে এবং আরেকটা সেকশনকে বাম পাশে অবস্থান নিতে বলি। আমি অবস্থান নেই মধ্যখানে। আমি আমার বাহিনীকে নির্দেশ দেই আমি গুলি না ছোড়া পর্যন্ত যেন কেউ গুলি না চালায়। রাত্রি একটার সময় শত্রুরা মেজর দুরবানির নেতৃত্বে আমার অবস্থানের দিকে খাল দিয়ে নৌকাযোগে এগুতে থাকে। আমি তখন মন্দভাগ গ্রামে অবস্থানরত ডানপাশের বাহিনীকে নির্দেশ দেই শত্রুদের প্রতি গুলি ছোঁড়ার জন্য। শত্রুরা তখন নৌকা থেকে নেমে দুই ভাগে ব্রোকেন লাইন হয়ে এগুতে থাকে। তারপর যখন তারা আমার প্রতিরক্ষাব্যূহের ২০/২৫ গজের মধ্যে এসে গেছে, তখন আমরা সবাই তাদের উপর অবিরাম গুলিবর্ষণ করতে থাকি। এ গুলিবর্ষণের ফলে প্রথম সারির সবাই আহত-নিহত পড়ে যায় এবং পিছনের ব্রোকেন লাইনেরও অনেকে হতাহত হয়। শত্রুরা অবস্থা বেগতিক দেখে তাদের আহত সৈনিকদের ও গোলাগুলি ফেলে পালিয়ে যায়। পশ্চাদপসরনরত সৈনিদের লক্ষ্য করে মর্টারের সাহায্যে গোলাবর্ষণ করা হয়। ফলে শত্রুদের কিছু আহত হয়। এ যুদ্ধে শত্রুদের ৬ জন আহত সৈনিককে ধরে ফেলি। ২৬ জন মৃত শত্রুসেনাকে নিয়ে আসতে সক্ষম হই। এদের মধ্যে একজন লেফটেন্যাণ্ট ছিল। আমরা ৬টা এমজিআই-এ-৩ ৩৭/৩৮টা জি-৩ রাইফেল, ৫টা পিস্তল, চাইনিজ স্টেনগান ৮টা, ৩.৫ ইঞ্চি রকেট লাআর ২টা, ১টা ক্যামেরা, ১টা বাইনোকুলার, ২টা ক্যাম্পাস, ম্যাপ ও ৫/৬ হাজার গোলাগুলি দখল করে নেই। এ যুদ্ধে আমাদের ৪ জন আহত হয়। পাক গোলন্দাজ বাহিনী আমাদের গোলাবর্ষণ করতে থাকে। এ যুদ্ধে পৌনে পাঁচটা থেকে ছ'টা পর্যন্ত চলে। আমরা ধৃত ও নিহত সৈন্যদের সেক্টর-২-এর হেডকোয়ার্টার মেলাঘরে পাঠিয়ে দেই। শত্রুরা বিপর্যস্ত হবার পরপরই তাদের বিমান বাহিনীর পাঁচটা স্যাবর জেট এসে ৪৭ মিনিট ধরে আমার মুক্ত এলাকায় স্ট্র্যাপিং করতে থাকে। এতে একজন সামান্য আহত হয়।

 জাদিশ্বরে আমি আমার একটা মর্টার সেকশন রাখি নায়েক সুবেদার মঈনের অধীনে। তখন ছিল রমজান মাস। আমি সুবেদার মঈনকে নির্দেশ দেই জাদিশ্বর থেকে কোন এক স্থান বেছে নিয়ে সাহেববাড়িতে অবস্থিত শত্রুসেনাদের অবস্থানে খাওয়ার সময় যেন আচমকা মর্টারের সাহায্যে হামলা চালায়। তাকে যেদিন এ কজি করতে বলা হয়, সেদিন সে ব্যর্থ হয়। পরের দিন ভোররাতে সেহরী খাওয়ার সময় জাদিশ্বর থেকে খাল পার হয়ে নায়েক সুবেদার মঈন তার ৮জন সঙ্গীকে নিয়ে যায় মর্টার হামলা করার জন্য। কিন্তু শত্রুসেনারা কোন গুপ্তচরের মাধ্যমে খবর পেয়ে আগে থেকেই এ্যাম্বুশ পেতে বসে ছিল। তারা নায়েক সুবেদার মঈন ও তাঁর বাহিনীর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এরা সুবেদার মঈন ও তার দুজন সঙ্গীকে ধরে ফেলে। দুজন গুলি করে সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলে রেখে যায়। সুবেদার মঈনকে তারা ধরে নিয়ে যায়। সুবেদার আম্বিয়া টেলিফোন যোগে এ