পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
185

 কিন্তু সুচতুর দালার ছেরু মিয়া টের পেয়ে পূর্বেই আত্মগোপন করে। তার ৪ জন সহকারী আমাদের হাতে ধরা পড়লে তাদেরকে হত্যা করা হয়। এদের মৃত্যুর পর এতদঞ্চলে আর তেমন কোন অত্যাচার হয়নি এবং ছেরু মিয়ারও তেমন কোন সন্ধান করতে পারিনি। অবশ্য দেশ মুক্ত হবার পর এই কুখ্যাত দালাল মীরজাফর মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়া এবং প্রকাশ্যে জনসাধারণের রায়ে তাকে হত্যা করা হয়।

 ৬ই জুন: বহু নিরীহ গরীব লোককে প্রলোভন দিয়ে মাইজদীতে রাজাকারে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হতো। সিপাই শাহজাহানকে পাঠালাম মাইজদীতে রাজাকার ট্রেনিং ক্যাম্পে হাতবোমা নিক্ষেপ করার জন্য।

 শাহজাহান অতি গোপনে ও কৌশলে রাজাকার ট্রেনিং ক্যাম্পে ঢুকে হাতবোমা নিক্ষেপ করে। এতে রাজাকার কমাণ্ডার ও আরও দুইজন রাজাকার নিহত হয়। সিপাই শাহজাহান তাদেরকে হত্যা করে অসীম সাহসের পরিচয় দিয়ে বীরত্বের সাথে ফিরে আসতে সক্ষম হয়।

 ১১ই জুন: চন্দ্রগঞ্জ রাস্তায় পাকবাহিনীর চলাফেরা অনেকাংশে বেড়ে যাওয়ায় চন্দ্রগঞ্জের পুলটি উড়িয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেই। পুলের উভয় পাশে পাক বাহিনীর মেশিনগান মোতায়ের থাকা সত্ত্বেও পুলটি উড়িয়ে দিতে সক্ষম হই।

 ইতিমধ্যে খবর পেলাম যে আমাকে ধরার জন্য নোয়াখালীর পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ মোটা টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। গোপালপুর চৌধুরী বাড়ির নসা মিয়া যদিও পাক বাহিনীর সঙ্গে আপাতদৃষ্টিতে যোগাযোগ রক্ষা করতেন কিন্তু মূলত তিনি আমাদেরকে গোপনে গোপনে পাক হানাদার বাহিনীর সমস্ত গোপনীয় তথ্য জানাতেন। সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর স্বার্থেই তিনি পাঞ্জাবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আমাদেরকে সাহায্য করতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় তার চতুরতা ধরে ফেলে পাক হানাদাররা। তারা গোপালপুর আক্রমণ করে তাকে জঘন্যভাবে হত্যা করে।

 এই নসা মিয়ার নিকটই আমি জানতে পারি যে আমাকে ধরার জন্য পাক বাহিনী মোটা টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে এবং অল্পদিনের মধ্যে তারা আমাদের মারাত্মকভাবে আক্রমণ করবে। আমি নসা মিয়ার নিকট এ খবর পাওয়ার পর আমিশাপাড়া ক্যাম্প তুলে নেই এবং অন্যান্য ক্যাম্প থেকেও সমস্ত সৈন্য তুলে নিয়ে সেনবাগের প্রতাপপুর নামক গ্রামে আত্মগোপন করি। অবশেষে ১৮ই জুন পাকসেনারা ১ ব্যাটালিয়ন সৈন্য নিয়ে আমাকে ও আমার দলবলকে ধরার জন্য আমিশাপাড়া বজরা সড়ক, সোনাইমুড়ি-চাটখিল রোড, চন্দ্রগ্রাম-খিলপাড়া সড়ক দিয়ে একই সময় অগ্রসর হন। অবশেষে তারা আমাদের পাত্তা না পেয়ে চলে যায়।

 ২১শে জুন: হাবিলদার মতিন অতর্কিতে দালালবাজার রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে একজন মিলিশিয়া সহ ১৬ জন রাজাকারকে হত্যা করে তাদের ক্যাম্প তছনছ করে দেয়।

 ২৩শে জুন: আপানিয়া পুলের নিকট কয়েকজন দালালসহ দু'জন পাকসেনা ইতস্তত ঘোরাফেরা করতে থাকে। সম্ভবত সতী মা-বোনদের ইজ্জত নষ্ট করার উদ্দেশ্যে ঘোরাফেরা করছিল; ঠিক সেই মুহূর্তে নায়েক সুবেদার শামসুল ও হাবিলদার মন্তাজ সেখানে উপস্থিত হয়ে পাকসেনা দু'জনকে খতম করে। অবশ্য দালালরা পালিয়ে যায়। এখানে শামসুল হক ও মন্তাজ অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দিলে স্বাধীনতকামী যোদ্ধাদের মনোবল অত্যন্ত দৃঢ় হয়।

 ২৪শে জুন (বগাদিয়ায় পুনরায় বিস্ফোরণ ও যুদ্ধ): নায়েক শহীদ বগাদিয়ার নিকটে রাস্তার উপর মাইন বসিয়ে কিছুদূরে সরে থাকে। কিছুক্ষণ পর পাকবাহিনী এক প্লাটুন সৈন্য একটা ট্রাকে চলতে থাকলে মাইন বিস্ফোরণে গাড়িখানা সামান্য নষ্ট হয়। পর মুহূর্তে কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। যুদ্ধে কোন ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি।

 ২৫শে জুন: রাতে হাবিলদার মতিন লক্ষ্মীপুরের বাগবাড়ি ক্যাম্প মর্টারের সাহায্যে আক্রমণ করে ও কয়েকজনকে আহত করে। ২৬শে জুন সুবেদার ওয়ালীউল্লা কাফলাতলী রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে