পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/২১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
186

কয়েকজন রাজাকারকে হত্যা করে ক্যাম্পটি তছনছ করে দেয়। ইতিমধ্যে শত্রুর কয়েকজন গুপ্তচর হাতেনাতে ধরা পড়ে। অপরদিকে সুবেদার শামসুল হকের হাতে একজন রাজাকা কমাণ্ডার ধরা পড়ে।

 ২৭শে জুন: আমি ভারত হতে পুনরায় বিস্ফোরক দ্রব্য এবং গোলাগুলি নিয়ে আসি।

 ৩০শে জুন: হাবিলদার মতিনের নেতৃত্বে এবক প্লাটুন মুক্তিসেনা লক্ষ্মীপুরে থেকে কালীরবাজার অগ্রগামী খানসেনাদের প্রচণ্ড আক্রমণ করলে কয়েকজন হতাহত হয়। পাকসেনারা কালীরবাজারে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।

 ১৭ই জুলাই: রামগঞ্জের উত্তরে নরিমপুর হতে এক কোম্পানী পাক রেঞ্জার্স ও রাজাকার দল অগ্রসর হতে থাকলে হাবিলদার জাকির হোসেনের নেতৃত্বে এক প্লাটুন মুক্তি সেনা তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বেশ কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর শত্রুরা রাজাকারের দুটি মৃতদেহ ফেলে দৌড়ে প্রাণ বাঁচায়। পরে হাবিলদার জাকির হোসেন মৃত রাজাকারদ্বয়ের দাফনের ব্যবস্থা করে।

 ১৯শে জুলাই: কয়েকজন রাজাকারসহ হানাদার বাহিনীর এক কোম্পানী সৈন্য মান্দারীবাজারে ক্যাম্প করেছিল। আমি উক্ত ক্যাম্প আক্রমণ করার জন্য সুবেদার ওয়ালীউল্লাকে আদেশ করি। ওয়ালীউল্লা, হাবিলদার মতিন ও শাহাবউদ্দিন মান্দারীতে শত্রু ঘাঁটির উপর আক্রমণ করে। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর দু'জন জোয়ান শহীদ হন।

 ২৩শে জুলাই (পুনরায় সাহেবজাদা পুল চূর্ণ-বিচূর্ণ): পাকবাহিনী সাহেবজাদা পুল মেরামত করে পুনরায় নোয়াখালীর সাথে রেল যোগাযোগ স্থাপন করে। আমি নায়েক আবুল হোসেন ও সুবেদার শামসুল হককে নিয়ে পুলটি নষ্ট করতে যাই। সেখানে কিছু রাজাকার ও মিলিশিয়া পাহারারত ছিল। তাদেরকে আমাদের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য আমরা গোলাগুলি আরম্ভ করি। অপরদিকে নায়েক আবুল হোসেন পুলের নীচে গিয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য লাগিয়ে সরে পড়ে। কিছুক্ষণ পরই বিরাট আওয়াজে পুলটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং নোয়াখালীর সাথে রেল যোগাযোগ পুনরায় বিছিন্ন হয়ে পড়ে।

 ২৬শে জুলাই: এদিন সুবেদার ওয়ালীউল্লাকে নরিমপুর পাঠাই রেকি করার জন্য। ওয়ালীউল্ল নরিমপুর পৌঁছলে কয়েকজন পাক দালাল (অস্ত্রহীন) সুবেদার ওয়ালীউল্লাকে অতি কৌশলে ঘিরে ফেলে ও বন্দী করে। তৎক্ষণাৎ সুবেদার ওয়ালীউল্লা পিস্তল দিয়ে একজন দালালকে গুলি করে জীবন রক্ষার্থে প্রাণপণে ঊর্ধবশ্বাসে দৌড়াতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত পালাতে সক্ষম হয়।

 ১৪ই আগস্ট (বসুরহাট যুদ্ধ): নোয়াখালী জেলার পশ্চিমাংশ থেকে পূর্বাংশে পাকবাহিনীর সৈন্যদের আনাগোণা বেশী পরিলক্ষিত হয়। এ সময় চারদিক থেকে মুক্তিসংগ্রাম অধিকতর শক্তিশালী হতে থাকে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল অনেকগুণ বেড়ে যায়।

 আমি বাছাই করা যোদ্ধাদের এক প্লাটুন মুক্তিসেনাকে নায়েক সুবেদার শামসুল হকের নেতৃত্বে পাঠাই বসুরহাটে খান সেনাদের নির্মূল করার জন্য। অদম্য সাহসী বীরযোদ্ধা শামসুল হক এখানে খান সেনাদের উপর চরম আক্রমণ করে শত্রুর একখানা জীপ নষ্ট করে দেয় এবং কয়েকজনকে হতাহত করে। এ যুদ্ধে আমার দু'জন বীরযোদ্ধা শহীদ হন এবং দু'জন গুরুতরভাবে আহত হয়। সিপাহী নূরনবীর বৃদ্ধাঙ্গুল গুলির আঘাতে উড়ে যায়।

 ১৬ ই আগস্ট (পুনরায় আপানিয়া পুল ধ্বংস): পাকবাহিনীর দ্বারা নতুন মেরামত করা আপানিয়া পুলটি নায়েক শহীদ ধ্বংস করে দেয় ও লাকসাম-নোয়াখালী যোগাযোগ বিছিন্ন করে দেয়।

 ২৬শে আগস্ট: মিলিশিয়া ও রাজাকার বাহিনীর একটি বিরাট দল আমিনবাজার থেকে আমিশাবাজার দিকে অগ্রসর হচ্ছে এ খবর পাবার পর আমরা তাদের চতুর্দিক দিয়ে ঘেরাও করার পরিকল্পনা করি। সুবেদার