পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
193

মাঝে আটকাইয়া যায়। তখন আমি আমার প্লাটুন লইয়া তাহাদের উপর আক্রমণ চালাই। আমাদের আক্রমণে ১ জন মেজর, ১ জন লেঃ সহ প্রায় ১০০ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। চারজন আহতকে চিকিৎসার জন্য কোনাবন পাঠাইয়া দেই। ঐ দিন আমরা পাকবাহিনীর বহু মৃত লাশ উদ্ধার করি। পাক বাহিনীর মৃত লাশ ১ দিন পর ভাসিতেও দেখা গিয়াছে। পাক-বাহিনীর মৃত লাশ হইতে আমরা বহু টাকা-পয়সা, ঘড়ি-কলম উদ্ধার করি। এগুলি আমার জোয়ানদেরকে দিয়া দেই। সেখানে আমরা ৬টি এমজিআই-এ-৩, ৭টি এলএমজি, ৭০টা জি-৩ রাইফেল, ১টা ৬০ এমএম মোটর, ৩টা ৮৩ এম-এম-বি-সি, ১টা অয়ারলেস সেট, ৩টা টেলিফোন, ৩টা ২" মর্টার, একজন হাবিলাদারের পকেট থেকে ৩শত ডলার, কয়েকটা ট্রানজিস্টার উদ্ধার করি। পরদিন সকালে পাকবাহিনী আমাদের উপর বিমান হামলা করে। তাহাতে আমাদের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয় নাই। এ সময়ও তাহারা আমাকে ধরিয়া দিবা জন্য ৫০ হাজার টাকা ঘোষণা দেয়। প্রকাশ থাকে যে, ১৯ তারিখেই আমাকে ৪র্থ বেঙ্গলের 'সি' কোম্পানীর কমাারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

 ২৩-১১-৭১ তারিখে আমি আমার পুরা কোম্পানী লইয়া শালদা নদীতে তিন দিক হইতে আক্রমণ করি। আমি নিজে ৮নং প্লাটুন লইয়া তাহাদের পাকা ডিফেন্সের উপর হামলা চালাই। আমি তখন একটা এলএমজি ও অয়ারলেস সেট বহন করিয়া চলিতাম। ৬০ এমএম ও ২" মর্টার বহন করার জন্য অন্য লোক ছিল। আমি নিজে আমার এই অস্ত্রের সাহায্যে তাহাদের ৫টি পাকা বাঙ্কার উড়াইয়া দেই। আমাদের এই আক্রমণের মাঝেই আমি বর্তমান মেজর গফফার সাহেবের সহিত অয়ারলেসে আলাপ করিতেছিলাম। ঐ সময় আমার অয়ারলেসে পাকসেনাদের কথা ধরিতে পারি। তখনই আমি অয়ারলেসের মাধ্যমে পাকসেনাদের গালি দিতে থাকি এবং বলি যে, তোরা আমাদেরকে জানিস না, আমরা বেঙ্গল রেজিমেণ্টের লোক-তখন পাকসেনারা ভয় পাইয়া পিছনে হটিতে থাকে। এই সুযোগে আমরা তাহাদের উপর আরো প্রচণ্ড বেগে আক্রমণ চালাই। তখন তাহারা আরো তাড়াতাড়ি পিছন হটে। আমাদের এই আক্রমণে ৫০জন পাকসৈন্য নিহত হয়। ১ জন রাজাকারসহ চারজন পাকসেনাকে বন্দী করিয়া ফেলি। পাক-বাহিনী হটিয়া যাবার পর আমরা এখান হইতে বহু অস্ত্র শস্ত্র ও মালামাল উদ্ধার করি।

সাক্ষাৎকারঃ সুবেদার গোলাম আম্বিয়া

 ৭ই জুন এক এ্যামবুশে ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। ১২ই জুন সিংগারবিল এলাকায় এ্যামবুশে ১৩ জন পাকসেনা নিহত ও ২ জন আহত হয়। ১৬ই জুন এক এ্যামবুশে ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়। ২০শে জুন আর এক এ্যামবুশে ২ জন নিহত হয়। ২৩শে জুন রাজাপুর ব্রীজ মেরামতকারী দলের উপর আমরা এ্যামবুশ করি। এতে ২/৩ জন সাধারণ নাগরিকসহ ২৭ জন মারা যায়। কয়েকজন আহত হয়। ২৪শে জুন কাশিমপুর এলাকায় এ্যামবুশে ১৭ জন নিহত হয়। ঐ তারিখে রুপা এলাকায় এ্যামবুশে২৮ জন নিহত হয়। ২৫শে জুন কালাছড়া চা বাগান এলাকায় আমরা আক্রমণ করি। এই আক্রমণে তাদের ৪৪ জন নিহত হয়। ২৬শে জুন রেইডে ঐ এলাকায় তিনজন নিহত হয়। ২৭শে জুন আর এক এ্যামবুশে ওদের ১৬ জন নিহত হয়।

 ২রা জুলাই রুপা গ্রাম এলাকায় এ্যামবুশে ১৯ জন নিহত হয়। ৪ঠা জুলাই সিংগারবিল ব্রীজ মেরামত করতে সাধারণ নাগরিকসহ ৩০ জন নিহত হয়। কালাছড়া চা-বাগান এলাকায় এক রেইডে ৪ জন নিহত হয়। ১২ জুলাই মেজর খালেদ মোশররফ আমাকে দুটো প্লাটুন নিয়ে কুলাপাথর যাবার নির্দেশ দেন।

 শালদা নদী এলাকায় ক্যাপ্টেন গফফারের নেতৃত্বে দুটো কোম্পানী ছিল। তাদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য আমাকে কুলাপাথরে পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম-আখাউড়া রেলওয়ে যোগাযোগ ব্যাহত করার জন্য আমি এক প্লাটুন নিয়ে কোনাবনে আসি। চাটুয়াখোলা প্লাটুন হেডকোয়ার্টার ছিল। ক্যাপ্টেন গাফফার আমাকে পেয়ে খুব খুশী হন।

 ১৬ই জুলাই চাটুয়াখোলা থেকে এক এ্যামবুশে একজন ক্যাপ্টেনসহ ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। আমাদের হাবিলদার তৈয়ব আলী গুলির আঘাতে শহীদ হন।