পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

195 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড সেনাবাহিনীর পজিশন ছিল উত্তর দিকে বেলুনিয়া, দক্ষিণ দিকে ফুলগাজী এলাকা। তারা ধরে নিয়েছিল এটা বোধ হয় একটা মুক্তিবাহিনীর এ্যামবুশ। গোলাগুলির সঙ্গে সঙ্গে ফুলগাজী থেকে পাকিস্তানীদের রিইনফোর্সমেন্ট চলে আসে। প্রায় ৪০/৫০ জন পাকসৈন্য আমাদের দিকে এগুতে থাকে হামলা চালানোর জন্য। ওরা যখন আমাদের রেঞ্জ-এর মধ্যে চলে আসে তখন আমাদের সম্পূর্ণ ডিফেন্স-রেল লাইনের পূর্বপশ্চিম দিক এবং বেলুনিয়া ফেনী সড়ক যেটা রেল লাইনের সমান্তরাল-এই দুই পজিশন থেকে একই সঙ্গে আমরা আক্রমণ চালাই। আক্রমণে পাকিস্তানীদের ৪০ জনেরও বেশী হতাহত হয় এবং ৬/৭ জন বোধ হয় পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এই সকল এ্যামবুশে আমাদের পিছনে যে পাকিস্তানী পজিশন ছিল তারা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। এবং তারা আমাদের মধ্য দিয়ে ‘ব্রেক থ্রো করার চেষ্টা করে। তারা সেইদিন রাতেই পালাবার চেষ্টা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। পাকিস্তানীদের বেশীর ভাগই আমাদের হাতে ধরা পড়ে এবং সেদিন রাতেই ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনী পাকিস্তানী পজিশন-এর উপর প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করে। পরের দিন বেলুনিয়া থেকে পরশুরাম পর্যন্ত সম্পূর্ণ এলাকাটি হানাদার বাহিনীমুক্ত হয়। এটা ছিল নভেম্বরের ঘটনা। প্রশ্নঃ পরবর্তীতে সব সময়ই কি এটা আপনাদের দখলে ছিল? উত্তরঃ বস্তুতপক্ষে এর আগেও এই এলাকা আমাদের দখলে ছিল। বেলুনিয়ায় মুহুরী নদীর পশ্চিম দিক থেকে নিয়ে শালদা নামে একটা স্থান পর্যন্ত বলা যায় সব সময়ই আমদের দখলে ছিল। আর বর্তমান এলাকা দখলের পর আমাদের এলাকা প্রায় তিনগুণ বেড়ে গেল। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, এই বিমান বাহিনীর বিমান আমাদের উপর হামলা চালায়। সেই বিমান হামলায় আমাদের দশ/বার জনের মত সৈন্য শহীদ হয় এবং ১৫/১৬ জনের মত আহত হয়। এখানে আমাদের ডিফেন্স খুব স্ট্রং ছিল এবং মনোবলও খুব দৃঢ় ছিল। সেই অটুট মনোবলের জন্যই সময়মত এবং যথাযথ খাওয়া-দাওয়া না পেলেও সৈন্যরা সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে গেছে। পরবর্তী সময়ে ইন্ডিয়ান কোর-কমান্ডার স্বগত সিং ব্যক্তিগতভাবে আমদের এলাকা পরিদর্শনে আসেন এবং কমাণ্ডিং অফিসারদের অভিনন্দন জানান। প্রশ্নঃ খাদ্যের ব্যাপারে আপনাদের কি রকম অসুবিধা ছিল? খাবার কি ঠিকমত সরবরাহ হতো না? উত্তরঃ আমরা খাবার পেতাম। আমদের ব্যাটালিয়নের খাবার দেওয়ার দায়িত্ব ছিল ইন্ডিয়ানদের তরফ থেকে। তবে আমাদের ব্যাটালিয়নের যত সৈন্য ‘অথরাইজড় ছিল তার দ্বিগুণ লোক আমাদের ব্যাটালিয়নে ছিল। এর কারণ ছিল। মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে আমরা লোকজন সংগ্ৰহ করতাম এবং তাদেরকে আমাদের সঙ্গে রাখতাম। ফলে আমাদের সবাইকে মাসিক যে ভাতা দেওয়া হতো সেটা এবং যে খাবার নির্দিষ্ট ছিল তা থেকে শেয়ার করতে হতো। বেলুনিয়ায় নোয়াখালীর এমপি খাজা আহাম্মদ (আওয়ামী লীগের) এবং তাঁর লোকজনের সঙ্গে আমাদের খুব একটা সৌদার্য ছিল না। ফলে বেলুনিয়ার আওয়ামী লীগের তরফ থেকে তেমন কোন সহযোগিতা পাইনি। তবে বেলুনিয়ার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে সব সময় খুবই সহযোগিতা পেতাম। এ সময়ের একটা ঘটনার কথা আমার মনে পড়ে। আমাদের সৈন্যরা গিয়ে একটা এ্যামবুশ করে পাকিস্তানী পজিশনের পেছনে, সেটা ছিল অক্টোবরের শেষের দিকে। নিলকি নামে একটা গ্রাম ছিল, সেখানে পাকিস্তানীদের বিশ ক্ষতি হয়। সেই গ্রামে আমি ছিলাম, সংঘর্ষের পর আমি যখন চলে আসি, সেইদিনই অর্থাৎ পরদিন ভোরবেলা পাকিস্তান সেনাবাহিনী সেই গ্রামটা জুলিয়ে দেয় এবং ৪০/৫০ জন লোককে নৃশসংভাবে হত্যা করে। তার মধ্যে ১৪ বৎসরের ছেলে ও আশি বৎসরের বৃদ্ধ ছিল। এই খবরটা পাওয়ার আমি মানসিকভাবে খুব দুঃখ পাই এবং রাতের বেলা আবার ফেরত যাই সেই