পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
219

পাকবাহিনীর বিপুল ক্ষতি করি। ভৈরবের অপর পাড়ে যে পাক ঘাঁটি ছিল ১৭ই ডিসেম্বর তারা আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

 বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং ২৫তারিখে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে অস্ত্র ধরি। অসহযোগ আন্দোলণে পুরো সমর্থন আমাকে এগিয়ে দেয়।

স্বাক্ষরঃ মেজর, এম, এ মতিন
২৮-৩-৭৩

সাক্ষাৎকারঃ লেঃ কর্নেল হেলাল মুর্শেদ[১]

 ৪ঠা মে আমি আমার প্লাটুনসহ শাহবাজপুর পৌঁছি। ৫ই মে সকালে আমি রেকি করি এবং রাত্রে রেইড করি। ৬ই মে সকালে জনসাধারণের মুখে শুনতে পাই ৯জন পাকিস্তনী সৈন্য মারা যায়। তার ফলে পাকিস্তানী সৈন্যরা জনসাধারণের বাড়ীঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমার প্লাটুনের মাত্র ১জন আহত হয়। রেকি করে ৭ই মে আমি আহত সৈন্যসহ প্লাটুন নিয়ে বিকেলে মাধবপুর পৌঁছি। মাধবপুরে তখনো আমাদের ডিফেন্স ছিল। আমরা মাধবপুর পৌঁছার পর এবং মেজর শফিউল্লাহ তেলিয়াপাড়া থেকে মাধবপুর পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানী সৈন্যরা শাহবাজপুর থেকে মাধবপুর পৌঁছে আমাদের উপর আক্রমণ চালায় এবং গোলাগুলি করে। ঐ মূহূর্তে আমরা যদিও অত্যন্ত ক্লান্ত ছিলাম তথাপি মেজর শফিউল্লাহ আমাকে শত্রুর বাদিক দিয়ে আক্রমণ করার আদেশ করেন। আমি প্লাটুন নিয়ে শত্রুর বাদিকে অগ্রসর হই। উদ্দেশ্য ছিল শত্রুর আক্রমণকে প্রতিহত করা। ঐ সময় আমি শত্রুর উপর আক্রমণ করতে পারলাম না এ জন্য যে আমাদের চতুর্দিক দিয়ে শরণার্থী যাচ্ছিল। বিকেলে ছয়টা পর্যন্ত পাকিস্তানীদের সঙ্গে যুদ্ধ চলে। পাকিস্তানীদের চরম আক্রমণে আমাদের আলফা কোম্পানী সৈন্য তুলে নিয়ে মনতলায় নতুন করে ডিফেন্স তৈরী করে।

 মনতলায় আমি তাদের সঙ্গে যোগদান করি। মনতলায় আমাদের প্রধান ঘাঁটি তৈরী করি এবং সেখান থেকে ছোট ছোট রেইড এবং এ্যামবুশ করার সিদ্ধান্ত নেই।

 এসময় পাকিস্তানী সৈন্য মাধবপুর দখল করে ভেলিয়াপাড়া পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। ভেলিয়াপাড়া জঙ্গলের মধ্য দিয়ে তারা রাস্তা তৈরী করে সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। মাধবপুর এবং তেলিয়াপাড়া হয়ে যে রড় রাস্তা সিলেট পর্যন্ত বিস্তৃত সেই রাস্তায় পাকিস্তানী সৈন্যদের রেইড এবং এ্যামবুশ করাই শ্রেয় মনে করি এবং সেভাবে রেইড ও এ্যামবুশ করতে থাকি। কেননা ঐ রাস্তা দিয়ে পাকিস্তানী গাড়ী যাতায়াত করতো।

 মনতলা থেকে আমি কয়েকবার এ্যামবুশ করি। আমি প্রথম এ্যামবুশ করি ইসলামপুর গ্রামের রাস্তায়। ঐ রাস্তায় মাইন বসিয়ে গাড়ি উড়ানোর চেষ্টা করি এবং তাদের যোগাযোগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেই। মাইন বসানোর ফলে আমার প্রথম এ্যামবুশে একটা জীপ, একটা ট্রাকসহ মোট ৩০জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত ও আহত হয়। আমাদের গুলিতেও প্রায় ২০ জন নিহত হয়। সর্বমোট প্রায় ৫০ জন পাকিস্তনী সৈন্য নিহত ও আহত হয়। মনতলায় এটাই আমার সাফল্যজনক এ্যামবুশ। পরেও কয়েকবার এ্যামবুশ করি কিন্তু তত সুবিধা করতে পারিনি।

 এরপর মনতলা থেকে তেলিয়াপাড়া যাবার নির্দেশ পাই। আমি মেজর নাসিমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তেলিয়াপাড়া চলে যাই। তেলিয়াপাড়া যে কোম্পানীটি ডিফেন্সে ছিল। তার ক্যাপ্টেন (বর্তমানে মেজর) মতিনের পরিবর্তে আমাকে দেওয়া হয়। আমাকে আমার প্লাটুনসহ উক্ত কোম্পানীর কমাণ্ডার নিযুক্ত করে। তেলিয়াপাড়া অবস্থানকালে আমার কোম্পানী নিয়ে আরও একটি এ্যামবুশ করি।


  1. ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ২য় বেঙ্গল রেজিমেণ্টে লেফটেন্যাণ্ট পদে কর্মরত ছিলেন। সাক্ষাৎকারটি : ১৯৭৩ গৃহিত