পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
220

 ১৬ই মে তেলিয়াপাড়া রাস্তার ৮১ মাইল পোস্টের নিকট উক্ত এ্যামবুশ করি। ঐ এ্যামবুশ দুটি পাকিস্তানী ট্রাক ধ্বংস করতে সক্ষম হই। একটা ট্রাক দখল করি এবং প্রায় ৫০ জন সৈন্য হতাহত হয়।

 মে মাসের ১৫ তারিখে পাকিস্তানী সৈন্য তেলিয়াপাড়া আক্রমণ করে। সেখানে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে প্রায় ৪০ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। আমাদের শহীদের সংখ্যা ছিল ৫জন। পাকিস্তানী সৈন্যদের আর্টিলারী ও মর্টার আক্রমণ আমরা তেলিয়াপাড়া থেকে সৈন্য তুলে নিয়ে সিমনা চলে যাই এবং সেখানে হেডকোয়ার্টারে স্থাপন করি। তেলিয়াপাড়া থেকে সৈন্য তুলে নেওয়া সত্বেও তেলিয়াপাড়া সিলেট বড় রাস্তায় আকস্মিক আক্রমণ আমরা অব্যাহত রাখি।

 সিমনা থেকে ডেলটা কোম্পানী আমার অধীনে দেয়া হয় এবং এই ডেলটা কোম্পানী নিয়ে আমি শাহবাজপুর মাধপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন করি এবং জুলাই মাস নাগাদ আমি ঐ সমস্ত জায়গায় যুদ্ধ করি।

 ১৮ই জুলাই পাকিস্তানী সৈন্যরা আমার কোম্পানী এবং ক্যাপ্টেন নাসিমের কোম্পানীর উপর আক্রমণ করে রাত প্রায় ৪টার সময়। এক ব্রিগেড পাকিস্তানী সৈন্য আমাদের দুটি কোম্পানীর উপর আক্রমণ করে। ১৯শে জুলাই বিকাল ৩টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলতে থাকে। এখানে আমরা একটা পাকিস্তানী লঞ্চ ডুবিয়ে দিকে সক্ষম হই। আমার কোম্পানীর ১ জন শহীদ ও একজন আহত হয়। পাকিস্তানী সৈন্যও কয়েকজন নিহত হয়।

 ২৯শে জুলাই মুকুন্দপুর হরশপুর রেল স্টেশনে আমি আমার কোম্পানী নিয়ে পুনরায় আক্রমণ করি। তখন আমার ঘাঁটি ছিল লক্ষীপুর গ্রামসহ আর ৪টি গ্রাম নিয়ে। মাঝে মাঝেই আমরা মুকুন্দপুর হরশপুর রেল স্টেশনের চতুর্দিক থেকে আক্রমণ করি। কেননা তখন পাকিস্তানী সৈন্যদের অবস্থান ছিল মুকুন্দপুর হরশপুর রেল স্টেশনের মাঝে।

 লক্ষীপুর ছিল আমার কোম্পনীর মূল ঘাঁটি। এখান থেকে আমার এক প্লাটুন সৈন্য পাঠিয়ে আমিরগঞ্জ ব্রিজ ভেঙ্গে দেই। আমিরগঞ্জ ব্রিজে পাকিস্তানী মুজহিদ বাহিনীর মুজহিদকে আক্রমণ করলে তারা পালিয়ে যায়। এবং আমার প্লাটুন, উক্ত ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে সেখানে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে।

 ১৩ই সেপ্টেম্বর সিঙ্গারবিল এবং মুকুন্দপুর-এর মাঝখানে এক খানা ট্রেন নষ্ট করে দেই। ট্রেনে ৪টা বগী ছিল। ইঞ্জিনটা মাটিতে পড়ে যায়। ৪টা বর্গীর প্রায় ৭০জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত এবং আহত হয়। উক্ত ট্রেন ধ্বংস করে দেওয়ায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী মুকুন্দপুর থেকে তাদের ঘাঁটি তুলে নেয়।

 সেপ্টম্বর পর্যন্ত উক্ত এলাকা আমাদের দখলে থাকে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানী সৈন্য পুনরায় মুকুন্দপুর দখলের চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত তারা মুকুন্দপুর রেললাইন মেরামত করে পুনরায় দখল করে নেয়।

 ২৪শে সেপ্টম্বর ক্যাপ্টেন (বর্তমানে মেজর) ভূঁইয়া তাঁর কোম্পানী নিয়ে ধর্মঘর নামক জায়গায় পাকিস্তানীদের উপর চরম আক্রমণ করেন। ক্যাপ্টেন ভূঁইয়াকে সাহায্য করার জন্য আমার কোম্পানী ছিল বাঁ দিকে ফ্ল্যাস্ক প্রোটেকশনে। ক্যাপ্টন নাসিমের কোম্পানী ছিল ডান দিকের ফ্ল্যাস্ক প্রোটেকশনে। উক্ত যুদ্ধে পাকিস্তানী সৈন্যদের একজন জুনিয়র কমিশশু অফিসারসহ দশজন নিহত হয়। আমদের পক্ষে কোন হতাহত হয়নি।

 ২রা নভেম্বর ১০ম বেঙ্গল রেজিমেণ্ট ইণ্ডিয়ান আর্মির সহায়তায় বেলুনিয়াতে একটি বড় যুদ্ধের পরিকল্পনা করে এবং ২য় বেঙ্গল রেজিমেণ্টকে অনুরোধ করে ১টি কোম্পনী সেখানে পাঠানোর জন্য। অনুরোধ অনুযায়ী আমাকে বেলুনিয়া পাঠান হয়। আমি আমার ডেল্টা কোম্পানী নিয়ে বেলুনিয়ায় রওনা হই এবং বিকেলে পৌঁছি। বেলুনিয়ায় আমি দশম বেঙ্গল রেজিমেণ্টের সঙ্গে যোগদান করি।