পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
235

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৭। ৪নং সেক্টর সংঘটিত যুদ্ধের বিবরণ বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র মে-ডিসেম্বর ১৯৭১

সাক্ষাৎকারঃ ব্রিগেডিয়ার চিত্তরঞ্জন দত্ত[১]

 মে, ১৯৭১ সন। ভারতীয় বিভিন্ন এলাকায় খোলা হল নানা ট্রেনিং ক্যাম্প। পুরো সিলেট সেক্টরের ভার আমার উপর দেয়া হল। মোট দুটি সাব-সেক্টর খোলা হল। আমার সৈন্যদের মনোবল ভাঙ্গল না। বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে তারা কাজ করতে আরম্ভ করল। সিলেটের সব থানা থেকে লোক ভর্তি করা শুরু হল এবং প্রশিক্ষণের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলে। বি-ডি-আর, আনসার, মুজাহিদ ও পুলিশকে নিয়ে গড়ে উঠল ‘সেক্টর ট্রুপস’, আর স্কুল-কলেজের ছাত্রদের নিয়ে গড়ে উঠল ‘গণবাহিনী’। সিলেট মোট ৬টি সাব-সেক্টর ছিল।

 ১। জামালপুর সাব-সেক্টরঃ গণবাহিনীর মাহমুদূর রব সাদী এই সাব-সেক্টর কমাণ্ড করত। অল্পবয়স্ক সুন্দর ছেলেটি বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য যে স্পৃহা নিয়ে কাজ করত, তা দেখলে সত্যি আশ্চর্য লাগত। যেখানেই তাকে পাঠানো হয়েছিল, প্রত্যেকটি অপারেশনে সে কৃতকার্য হয়েছে। এই সাব-সেক্টর থেকে অপারেশন চালানো হয়েছে-আটগ্রাম, জাকীগঞ্জ, লুবাছড়া ও কানাইঘাটি এলাকায়। নভেম্বরের শেষের দিকে সাদীকে সিলেটের ভেতরে নবীগঞ্জ এলাকায় প্রায় ৫০জন বিশ্বস্ত গণবাহিনী ছেলে দিয়ে নবীগঞ্জ এলাকা মুক্ত হরতে পাঠানো হয়েছিল।

 ২। বারাপুঞ্জী সাব-সেক্টরঃ এটা কমাণ্ড করত ক্যাপ্টেন রব। সাপ্লাই কোর-এর অফিসার হয়ে পদাতিক সৈন্য পরিচালনায় সে অশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে এবং সাব-সেক্টর লাটু, বিয়ানীবাজার, শারোপার, বরোগ্রাম, জাকীগঞ্জ, আটগ্রাম, কানাইঘাট, চিকনাগুল এলাকায় অসীম সাহসের সাথে যুদ্ধ পরিচালনা করেছে।

 ৩। আমলসিদ সাব-সেক্টরঃ বাংলাদেশ সোনাবাহিনীর লেঃ জহীর এই সাব-সেক্টর কমাণ্ডার ছিল। এই তরুণ অফিসারটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে খুবই সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে। কানাইঘাট অপারেশনে তার দক্ষতার প্রশংসা না করে পারা যায় না। ডিসেম্বর প্রথম সপ্তাহে এই সাব-সেক্টরটি ‘জেড’- ফোর্সের প্রথম বেঙ্গল রেজিমেণ্টর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করেছে।

 ৪। কুকিতল সাব-সেক্টরঃ এটার কমাণ্ডার ছিল ফ্লাইট লেফটেন্যাণ্ট কাদের। বিমান বাহিনীর অফিসার হয়ে এত সুষ্ঠুভাবে পদাতিক বাহিনী পরিচালনা করায় তাকে প্রশংসা না করে পারা যায় না। মাঝে মাঝে সে প্রায়ই বলত, ‘স্যার আমাকে একটা জঙ্গী বিমান এনে দেয়, আমি পাকিস্তানীদের খতম করব। আপনাদের যুদ্ধ খুব মন্থর গতিতে চলছে। আমি চাই তাড়াতাড়ি পাকিস্তানীদের শেষ করে বাংলাদেশ মুক্ত করতে।’ আমি তাকে সান্তনা দিতাম ‘স্লো এ্যাণ্ড স্টীডি ইউনস দি রেস’। এই সাব-সেক্টর দিলখুশ চা বাগান, কুলাউড়া, জুরী চা বাগান এলাকায় অপারেশন চালিয়ে শত্রুকে নাস্তানাবুদ করেছে। পরে এই সাব-সেক্টর ক্যাপ্টেন শরিফুল হক যোগ দিয়েছিল। এই নির্ভীক যুবক পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন হরে। এর কৃতিত্বের কথা পরে আসবে।

 ৫। কৈলাশশহর সাব-সেক্টরঃ লেঃ ওয়াকিউজ্জামান এই সাব-সেক্টর কমাণ্ডার ছিল। নয় মৌজায় বাংলাদেশ পতাকা উত্তোলন ও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এত বড় এলাকাকে মুক্ত রাখার জন্য এই তরুণ


  1. ১৯৭১ সালে মার্চে মেজর পদে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে মেজর-জেনারেল। সাক্ষাৎকারটি ২৪-৩-১৯৭৪ তারিখে গৃহীত হয়।