পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
3

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খন্ড

 গেরিলা ঘাঁটিঃ প্রতিটি ঘাঁটিতে গেরিলাদের থাকা-খাওয়ার জন্য কয়েকটি নিরাপদ গৃহের ব্যবস্থা থাকবে যেখান থেকে যথাযথ খবরপ্রাপ্তির পরই পরবর্তী লক্ষ্যস্থলে তারা পৌঁছতে পারবে। প্রত্যেক ঘাঁটিতে একটি করে মেডিক্যাল গ্রুপ থাকবে যারা প্রয়োজনে গেরিলাদের চিকিৎসা করবে। প্রত্যেক ঘাঁটিতে একজন রাজনৈতিক নেতার দায়িত্ব থাকবে। এদের দায়িত্ব ছিলো বিভিন্ন কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে পাকিস্তানীদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়া এবং একই সংগে বাঙ্গালীরা যেন মানসিক সাহস ও শক্তি হারিয়ে না ফেলে সেদিকে লক্ষ্য রাখা। শত্রুর বিরুদ্ধে বড় ধরনের আক্রমন পরিচালনার উদ্দেশ্যে আরো বেশীসংখ্যক গেরিলা কিংবা নিয়মিত বাহিনীর সৈনিকদের স্থান সংকুলানের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিকে তৈরী রাখাও এদের দায়িত্ব ছিল।

৩। নিয়মিত বাহিনীর সদস্যদের অবিলম্বে ব্যাটালিয়ন ফোর্স এবং সেক্টর ট্রুপস-এর ভিত্তিতে সংগঠিত করতে হবে।
৪। শত্রুর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে যুদ্ধ পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ঃ
(ক) প্রতিটি সুবিধাজনক স্থানে শত্রুর বিরুদ্ধে রেইড এবং অ্যামবুশের মাধ্যমে আঘাত হানার জন্য বিপুলসংখ্যক গেরিলাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
(খ) শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে দেয়া হবে না। বিদ্যুতের খুঁটি, সাবস্টেশন প্রভৃতি উড়িয়ে দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ অচল করার মাধ্যমে এ কাজ করতে হবে।
(গ) পাকিস্তানীদেরকে কোন কাঁচামাল কিংবা উৎপাদিত পণ্য রফতানী করতে দেয়া হবে না। এসব জিনিস যেসব গুদামে থাকবে সেগুলো ধ্বংস করে দিতে হবে।
(ঘ) শত্রুপক্ষের সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম আনা-নেয়ার জন্য ব্যাবহারযোগ্য বাহন রেলপথ, নৌযান পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করতে হবে।
(ঙ) রণকৌশলগত পরিকল্পনা এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যাতে শত্রুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়তে বাধ্য হয়।
(চ) শত্রুদের ছত্রভঙ্গ করার পরে তাদেও বিচ্ছিন্ন গ্রুপগুলোর ওপর গেরিলারা মরণপণ আঘাত হানবে।

 বিভিন্ন সেক্টর এবং ফোর্স পুনর্গঠনের কাজে ইপিআর-এর ভূমিকা ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে ইপিআর বাহিনীর কাছ থেকেই বাংলাদেশ সরকার প্রায় সমুদয় অস্ত্র ও গোলাবারুদের ব্যাবস্থা করেছিলো। শুধু তাই নয়, প্রথম থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে তারাই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো। ইপিআর-এর অয়্যারলেস সেট এবং যানবাহন ব্যাপকভাবে কাজে লেগেছিলো। মুক্তিযুদ্ধে ইপিআর-এর সিগন্যালরা এবং ড্রাইভাররা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে। সেই দুর্দিনে স্বাধীনতার জন্য নিবেদিত প্রাণ ড্রাইভাররা শত্রুপক্ষের তুমুল গোলাবৃষ্টির মধ্য দিয়ে আমাদের সৈন্য ও রসদ বহন করে দৃঢ় মনোবল ও সাহসিকতার অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টন্ত স্থাপন করেছে।

আমাদের এই সম্মেলনে বাংলাদেশকে এগারোটি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়।

 ১ নম্বর সেক্টরঃ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং নোয়াখালী জেলার অংশবিশেষ নিয়ে (মুহুরী নদীর পূর্ব এলাকা) এই সেক্টর গঠিত হয়। সমগ্র সেক্টরটি আবার পাঁচটি সাব-সেক্টরে ভাগ করা হয়। আমি এই সেক্টরে কমাণ্ডার নিযুক্ত হই। এই সেক্টরের মোট সৈন্যসংখ্যা ছিলো ২১শ’। এর মধ্যে ১৫শ’ ইপিআর, ২শ’ পুলিশ, ৩শ’ সাময়িক বাহিনী এবং নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিলো প্রায় একশ’। এখানে গেরিলাদের সংখ্যা ছিলো