পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
5

 ১১ নম্বর সেক্টরঃ এই সেক্টরটি ছিল মেজর তাহেরর কমাণ্ডে। ১৫ই নভেম্বর এক অভিযানে তিনি আহত হলে স্কোয়াড্রন লিডার হামিদুল্লাহকে এই সেক্টরের কমাণ্ডার করা হয়। এখানে সাব-সেক্টর ছিলো ৮টি এবং গেরিলার সংখ্যা ছিলো প্রায় ২০ হাজার।

 এই সম্মেলনে সেক্টরসমূহ সম্পর্কে সিদ্ধান্তের পর সৈনিকদেরও নিম্নলিখিত গ্রুপে পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।

 নিয়মিত আর্মি ব্যাটালিয়নঃ তখনকার স্বল্পসংখ্যক ব্যাটালিয়নগুলো নিয়ে প্রথম বাংলাদেশ বাহিনী গঠিত হয়। এইসব ব্যাটালিয়নের জনশক্তি ছিলো খুবই কম। প্রত্যেক সেক্টর থেকে লোক সংগ্রহ করে এই শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা চলে। তারপর এগুলোকে ব্রিগেড গ্রুপে ভাগ করা হয়। কে-ফোর্স, এস-ফোর্স এবং জেড- ফোর্স নামে এগুলো পরিচিত হয়। এসব বাহিনীর অধিকাংশ লোকই ছিলো ইপিআর-এর।

 সেক্টর ট্রুপসঃ উপরোক্ত ব্যাটালিয়নগুলোতে যেসব ইপিআর, পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর লোককে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি তাদেরকে যার যার সেক্টরে যুদ্ধ করার জন্য ইউনিট ও সাব-ইউনিটে ভাগ করা হয়। নিয়মিত ব্যাটালিয়নগুলোর চাইতে সেক্টর ট্রুপের অস্ত্রবল ছিলো কিছুটা কম। ওপরের প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রুপ মুক্তিফৌজ, এম এফ, মুক্তিবাহিনী অথবা নিয়মিত সৈন্য হিসাবে পরিচিত। এদেরকে সেনাবাহিনীর বিধি- বিধান ও নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। এদেরকে জীবনধারণের ভাতা হিসেবে একটা যুক্তিসংগত অংকের অর্থ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়, কিন্তু তারা কোন বেতন গ্রহন করেনি। সরকারীভাবে তাদের নাম রাখা হয়”নিয়মিত বাহিনী”।

 অনিয়মিত বাহিনী অথবা ফ্রিডম ফাইটার্স (এফএফ)

 গেরিলা পদ্ধতিতে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য যেসব লোককে ট্রেনিং দেয়া হতো তারা ছিলো ফ্রিডম ফাইটাস। এস সরকারী নাম ছিলো অনিয়মিত অথবা গণ-বাহিনী। এরা সেনাবাহিনীর নিয়ম-কানুন অনুসারে চলতে বাধ্য ছিলো না। অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম-শৃঙ্খলার অভাব ছিলো এই গ্রুপের বৈশিষ্ট্য। তবে আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে, সুদীর্ঘ এবং কঠোর সংগ্রামী জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে তারা আপনা থেকেই সুশৃঙ্খল হয়ে উঠবে। সাধারণতঃ এদেরই বলা হতো 'গেরিলা'। মুক্তিফৌজ এবং ফ্রিডম ফাইটারদেরও সাধারণভাবে এফ-এফ বা ফ্রিডম ফাইটার্স বলা হতো এবং এই নামে সকল যোদ্ধাই সুপরিচিত ছিলো।

 অনিয়মিত বাহিনীর লোকরা কোন বেতন কিংবা জীবনধারণ ভাতা পেতো না। ট্রেনিংয়ের পর বাংলাদেশের ভেতরে পাঠানোর সময় তাদেরকে রাহা খরচ হিসাবে কিছু অর্থ দেয়া হতে। একে বলা হতো ইণ্ডাকশন মানি' বা নিযুক্তি-ভাতা।

 আমাদের নিয়মিত (এম এফ) এবং অনিয়মিত (এফ এফ) বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো এবং সদস্যসংখ্যা হিসাব করে তাদের জন্য কাপড়-চোপড়, রেশন, অস্ত্র, গোলাগুলি, অয়্যারলেস সেট এবং টেলিফোন সেট, কম্পাস, বাইনোকুলার ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তালিকা তৈরী করে পুরো সেক্টরের অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের সাকুল্য তালিকা সরকারের কাছে পেশ করতে হতো। আমাদের সরকার আবার ভাসত সরকারের কাছ থেকে জিনিসগুলো সংগ্রহ করতেন। অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতার কথা আগেও বলেছি। নিঃসন্দেহে এই সমস্যার জন্য প্রথমদিকে আমরা মার খেয়েছিলাম। সেক্টরগুলোতে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে তেমন কোন সামঞ্জস্য ছিলো না। কিছু ছিলো চীনের তৈরী, কিছু বৃটিশ, আবার কিছু 'আমেরিকান। এগুলোর গোলাগুলি নিয়ে আমাদের নিদারুণ সংকটে পড়তে হতো। শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে শুধু একধরনের (সম্ভবত ভারতীয়) অস্ত্র দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।

 যানবাহনের সমস্যার তো কোন অন্তই ছিলো না। খুচরা যন্ত্রপাতির অভাবে প্রায়ই গাড়ীগুলি অচল থাকতো। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যেভাবে হোক যতদূর সম্ভব বেশী গাড়ী চালু রাখতে হবে। ভারত সরকারের