পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উঃ 3 285 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড গেলাম। জেনারেল ওসমানী ওপার থেকে রামগড়ে এলেন। সেখানেই বাংলাদেশের মাটিতে তার সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল। জেঃ ওসমানী আমাকে খুব প্রশংসা করলেন এবং বললেনঃ আরো দু’দিন রামগড় আটকে রাখতে হবে।’ তারিখটি ছিল ৩০শে এপ্রিল, ১৯৭১। আগেই বলেছি, ২রা মে বিকেলে আমরা ভারতীয় এলাকায় চলে গিয়েছিলাম। রামগড়কে আরো দুদিন আটকিয়ে জন্য এবং সীমান্তে আটকে পড়া নিরীহ জনগণকে নিরাপদে ভারতে পার করে যাওয়ার জন্য দু’দিন সময়ের প্রয়োজন ছিল। মুক্তিযুদ্ধে যে আপনারা জয়ী হচ্ছিলেন, এটা কখন বুঝতে পেরেছিলেন? অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে। একটা সময় খুব খারাপ এসেছিল জুন-জুলাই মাসে। তখন অনেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। এমনকি আমাদের এমএনএগণ পর্যন্ত বলতে শুরু করেছিলেনঃ “ভাই আর কি দেশে ফিরে যাওয়া যাবে?” কিন্তু আমরা হতাশায় ছিলাম না। আমরা সব সময় আশাবাদী ছিলাম। কারণ, এতে জড়িত ছিল বাঁচামরার প্রশ্ন। হয় দেশ উদ্ধার করতে হবে, নইলে দেশ-জাতি সবই গেল। তবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে আমরা জয়ের দিকে যাচ্ছি এবং আমরা জিতবই- দু’মাস লাগতে পারে, ছয়মাস লাগতে পারে, আমরা আমাদের নিজেদের শক্তিতে জিতব। এজন্য ভারতীয় সৈন্যের প্রয়োজন হবে না। পাকিস্তানী বাহিনীর তুলনায় আপনাদের সৈন্যবল তো খুব কম ছিল, অস্ত্রও ছিল খুবই সীমিত। আপনাদের প্রধান রণকৌশল সম্পকে কিছু বলুন। রণকৌশল যা সাধারণ হওয়া উচিত, তাই ছিল। শুরুর দিকে যেহেতু আমরা ছোট ছোট দলে গিয়েছিলাম, তাই তখন গেরিলা রণকৌশলকে আমরা প্রধান অবলম্বন হিসাবে বেছে নিয়েছিলাম। কারণ যুদ্ধের নিয়মই হলো যখন কোন বড় শত্রর সাথে আপনি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চান, তখন আপনি যদি চিরাচরিত যুদ্ধনীতি ভঙ্গ করে যুদ্ধ করতে হবে, অর্থাৎ গেরিলা যুদ্ধ করতে হবে। এই পদ্ধতিতে আমরা শত্রদের বড় বড় বাহিনীর ওপর আচমকিতে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যেতাম। তাতে শত্রপক্ষের হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশী হতো, অপরপক্ষে আমাদের কিছু হতো না। আমাদের মূল রণকৌশলই ছিল, এই গেরিলা পদ্ধতিতে পাকিস্তান বাহিনীকে রোজ একটু একটু আঘাত করে ওদের শক্তি কমিয়ে দেয়া এবং ওদের অসংগঠিত করে দেয়া, ওদের রসদপত্র নষ্ট করে দেয়া ইত্যাদি। আমরা জানতাম যে একটা সময় আসবে যখন আমরা নিয়মিত বাহিনী গঠন করে ওদের আক্রমণ শত্রবাহিনী থেকে আপনারা কি পরিমান অস্ত্রশস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছিলেন? প্রচুর। শুরুর দিকে আমাদের যা কিছু অস্ত্রশস্ত্র ছিল তাই দিয়ে যুদ্ধ করতাম। পরের দিকে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে আমরা অনেক অস্ত্রশস্ত্র এবং গোলাবারুদ ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। যখন আমরা আকস্মিক আক্রমণ চালাতাম কথন তারা পালিয়ে যেতো। তারা পালিয়ে যাওয়ার পর যা অস্ত্রশস্ত্র পড়ে থাকতো সব আমরা নিয়ে নিতাম। ৩রা ডিসেম্বর ’৭১ পাকিস্তান এবং হিন্দুস্তানের সাথে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার পর আপনার রণকৌশলের কোনও পরিবর্তন হয়েছিল কি? হ্যাঁ। তখন আমরা চিরাচরিত যুদ্ধে (কনভেনশনাল ওয়ার) লিপ্ত হয়ে গেলাম। ৩রা ডিসেম্বরের পর প্রথম আমরা দখল করলাম টেংরা টিলা তারপর দখল করলাম ছাতক, তারপর সুনামগঞ্জ। তারপর