পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
292

সহযোগিতার জন্য। ১১ তারিখ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত আঙ্গারগাঁও থেকে সালুটিকর বাজার মুক্ত করলাম। ১৫ তারিখ মেসেজ পেলাম যে, কোন অবস্থাতেই যেন শত্রুর ওপরে যেন ফায়ার না করি, যদি তারা ফায়ার না করে। এটা সম্ভবত সারোরের ব্যাপারে করা হয়েছিল। এই মেসেজ নিয়ে মতানৈক্য দেখা দিয়েছিল। পাকিস্তানের অবস্থা তখন শেষ ধাপে। আমাদের সম্মিলিত বাহিনী তখন ঢাকার কাছে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে গেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী তখন নির্জীব, তবুও আমাদের ওপর ফায়ার করছে এবং করলে পাল্টা আমরাও করছি।

 সতেরো কি আঠারো ডিসেম্বর। সালুটিকর নদীর অপর পারে পাকসেনা ছিল, তারা খবর দিলো তারা সারেণ্ডার করবে, তাদের ওপর যেন ফায়ার না করা হয়।

 সে সময় আমি চলে গিয়েছিলাম পশ্চিম দিকে, যেখানে তাহেরউদ্দিন আখঞ্জি গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে সিলেট শহরে ঢোকার চেষ্টা চালাতে। সেখান থেকে আমি ওয়াকিটকিতে মেসেজটা পাই এবং গিয়ে হাজির হই। আমাদের সালুটিকর নদীর ও পারে যেতে দেয়া হয়নি সারেণ্ডার অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গের ছেলেরা গণ্ডগোল করতে পারে এই আশংকায়। আমিই শুধু গিয়েছিলাম।

 আমি সেক্টর হেডকোয়ার্টারে নির্দেশ পেলাম আমার ছেলেরা ভেতরে যাতে ঢুকতে না পারে। কারণ তখন সম্ভবনা ছিল আত্মসমর্পিত পাকসেনাকে পেলে ছেলেরা হয়তো মেরেই ফেলবে। আমি তখন আমার তিনটা কোম্পানীকে আঙ্গারজোরে ক্লোজডোর করে রাখলাম।

 তার সাতদিন পর গোটা ট্রুপস নিয়ে আমি সিলেট শহরে ঢুকি।

সাক্ষাৎকারঃ মোঃ রফিকুল আলম

 ২রা সেপ্টেম্বর শিলং থেকে আমাদেরকে ট্রেনিং সেণ্টারে পাঠানো হয়। শিলং থেকে ৮২ কিলোমিটার দূরে খাসিয়া জয়ন্তিকা হিলে পৌছার পর। এরপর আমরা ই-২ সেক্টরের ফরম পূরণ করি। তার পরই শুরু হয় ট্রেনিং। ৯ই সেপ্টেম্বর ট্রেনিং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য তামাবিল চেকপোষ্টে (সিলেট জেলায়) আমার পোস্টিং হয়। ঐ দিনই আমি তামাবিল পৌছি এবং একটি প্লাটুনের দায়িত্ব গ্রহণ করি।

 আমি ছিলাম জুনিয়র কমিশন অফিসার- সেনাবাহিনীর সুবেদার র‍্যাঙ্ক-এর সমতুল্য। তামাবিলে অবস্থানকালেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ মুজিবনগর সরকার আমাকে একটি বিশেষ দায়িত্ব দেন। কিন্তু সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে লিপ্ত থাকায় তামাবিল সাব-সেক্টর থেকে আমাকে রিলিজ সার্টিফিকেট দেয়া হয়নি। ফলে ঐ সময় আমি স্টাফ ইণ্টেলিজেন্স পোস্টে যোগদান করতে পারিনি।

 ১১ই সেপ্টেম্বর রাতে একদল মুক্তিফৌজ নিয়ে পাকিস্তানী সৈন্যদের অবস্থানের উপর আমরা 'আক্রমণ চালাই। এই আক্রমণে গুলি বিনিময়ের সময় সাবেক সেনাবাহিনীর সিপাহী অফিসার বুলেটবিদ্ধ হন। পাকিস্তানী সৈন্যদের চারজন নিহত ও ছয়জন রাজাকার আহত হয়। সংঘর্ষের পর স্টেনগান, একটি ৩০৩ রাইফেল ও ঝুড়িভর্তি মাছ উদ্ধার করা হয়।

 ১৮ই সেপ্টেম্বর জৈন্তাপুর পাকসৈন্যদের অবস্থানের উপর আক্রমণ চালানো হয়। ক্যাপ্টেন ফারুক ও সুবেদার খোরশেদ আলম এই অভিযানে আমাদের সাথে ছিলেন। তীব্র সংঘর্ষের মধ্যে একটি অয়ারলেস সেট ফেলেই আমরা চলে আসি।

[১]


  1. সাক্ষাৎকারটি ২২-৭-৭৮ তারিখে প্রকল্প কর্তৃক গৃহীত