পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
297

 (৫) পরপর তিনদিন ক্রমাগত আক্রমণ করে তেলিখাল চৌকি দখল করি। কাটাখাল এলাকায় আমাদের কাট-অফ ছিল। তেলিখাল চৌকিতে বিপক্ষের ফেলে যাওয়া দুটি ৩০৩ রাইফেল ও ১টি ২” মর্টার হাতে আসে। এই পর্যায়ে পূর্ব কুরাখোলা, কান্দিগাঁও এবং গোরকি আর পশ্চিমে পারকুল ও শিবপুর বেইস স্থাপন করি। পিয়াইন গাংয়ের উত্তর পাড় পর্যন্ত সম্পূর্ণ আমাদের দখলে আসে এবং সদস্য জনাব নুরুল হক টোকের বাজারে জনসভা করেন।

 (৬) অপারেশন জ্যাকপটঃ পর পর তিনদিন ক্রমাগত যুদ্ধ করে বিলাজুর ও বার্নি দখল করি। এতে আমার সঙ্গে তিনটি এফএফ কোম্পানী অংশ নেয় ও আমাদের ৩ জন ছেলে শহীদ হয়।

 (৭) অপারেশন স্লেজ হ্যামারঃ সেক্টর কমাণ্ডার মীর শওকত আলী শেলা সাব-সেক্টর কমাণ্ডার ক্যাপ্টেন হেলালকে নিয়ে ছাতক আক্রমণ করেন। আমার আর ক্যাপ্টেন নূরনবরি উপর ছাতক গোবিন্দগঞ্জ সড়কে রিইনফোর্সিং কলাম কাট-অফ করার দায়িত্ব ছিল। আমরা সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত সফলতার সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখি এবং আমাদের হাতে বিপক্ষের একজন মেজর নিহত হয়।

 (৮) অপারেশন লোনরেঞ্জারঃ নভেম্বরের প্রথম ভাগে সেক্টর কমাণ্ডার নিজে গৌরীনগর চৌকি আক্রমণ করেন। পশ্চিমের ফ্ল্যাঙ্কে একটি এফ এফ কোম্পানীসহ বার্নিতে ছিলাম আমি, পূর্বের ফ্ল্যাঙ্কে তিনটি এফ-এফ কোম্পানীসহ ছিলেন লেফটেন্যাণ্ট সাইফুদ্দিন খালেদ ও লেফটেন্যাণ্ট তাহেরউদ্দিন আখঞ্জি। দুইটি কোম্পানীসহ কোম্পানী কমাণ্ডার কাজী আবদুল কাদের ও কোম্পানী কমাণ্ডার ফকরুদ্দিন চৌধুরী কাগাইল ও গৌরীনগরের মাঝামাঝি জায়গায় কাট-অফ লে করেন। সকাল ৪ টায় আক্রমণ শুরু হয়। এই যুদ্ধে আমার সঙ্গের ৫ জন ছেলে শহীদ হয়। আমরা একটি ৮১ মিঃ মিঃ মর্টার ও কিছু গোলাবারুদ ও অস্ত্রপাতি দখল করি।

 (৯) এই পর্যায়ে সামান্য প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে আমরা ১০ই ডিসেম্বর নাগাদ সিংগারখালের উত্তর পার বরাবর কুরিরগাঁও, বাদাঘাট, মিতিমহল, নোয়াগাঁও, চালতাবাড়ি প্রভৃতি অঞ্চল মুক্ত করি। (৭ই ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনীর কর্নেল রাজ সিং এই সাব -সেক্টরের মধ্য দিয়ে সিঙ্গারখাল পার হয়ে আরও দক্ষিণে অগ্রসর হন) বিভিন্ন সময়ের বেইস স্থাপন ও চৌকি দখলকালে মোট ৬১ জন রাজাকার আমাদের হাতে বন্দী হয়, যারা পরবর্তী পর্যায়ে সিলেট জেলা কর্তৃপক্ষের হাতে সমর্পিত হয়।

 (১০) দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা দশটি এফ-এফ কোম্পানী ও ৩টি এম-এফ কোম্পানীসহ সিলেট মাদ্রাসায় ক্যাম্প স্থাপন করি।

 আমাদের সঙ্গের ১৭ জন শহীদ সহযোদ্ধাকে টোকেরবাজারে কবর দেওয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে আমাদের গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্রের অত্যন্ত অভাব ছিল।

 পরে প্রতিপক্ষের চৌকিগুলো দখলের ফলে আমাদের গোলাবারুদের অভাব কিছুটা পূর্ণ হয়। আমাদের সমস্ত রেশন, অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ আসত শেলা হয়ে আসত ভারতের ১০১ কমাণ্ড এরিয়া থেকে। সব সময়ই খাদ্যদ্রব্য, শীতবস্ত্র, ঔষধপত্র ইত্যাদির প্রচণ্ড অভাব ছিল। আমরা যে সমস্ত অস্ত্রপাতি ব্যাবহার করতাম তা হলোঃ ৩০৩ রাইফেল, ৩০৩ এল-এমজি, ৭.৬২ সি সি এস এল আর, ৯ মিঃ মিঃ এস এম সি। পরবর্তীতে পাকিস্তানীদের হাত থেকে চীনা রাইফেল, চীনা স্টেন, ৭২ মিঃ মিঃ মর্টার ও তিনটি ৩০৩ মেশিনগান ও বেশকিছু জি-২ রাইফেল আমাদের হস্তগত হয়।

স্বাক্ষরঃ ন, আ, ম আলমগীর
ই-এস-এস, ৪০৭৫
১৪-৩-৮৩