পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খন্ড
298
শিরোনাম সূত্র তারিখ
১১। ৬নং সেক্টরের যুদ্ধ বর্ণনা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কথা বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র জুন-ডিসেম্বর ১৯৭১

সাক্ষাৎকারঃ এয়ার ভাইস মার্শাল এম কে বাশার[১]
১৫-৫-১৯৭৩

 ১৪ই মে আমরা কুমিল্লা হয়ে সোনামুড়ার নিকটবর্তী শিবেরবাজারে রাত্রিযাপন করি। স্থানীয় জনসাধারণ আমাদের যথেষ্ট আদর-যত্ন করে এবং তারাই পরের দিন আমাদেরকে সোনামুড়ায় পৌছায়। সোনামুড়া বি-এস-এফ ক্যাম্পে আমরা নিজেদেরকে ব্যাসায়ী বলে পরিচয় দেই। সেখানে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের একজন অফিসার মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুট করছিলেন। আমরা তার কাছে গিয়ে নিজেদের পরিচয় দেই। আমার সাথে ছিলেন তৎকালীন গ্রুপ ক্যাপ্টেন খোন্দকার, স্কোয়াড্রন লিডার সদরুদ্দীন, ফ্লাইট লেঃ বদরুল আলম, ফ্লাইট লেঃ কাদের, এক্স ফ্লাইট লেঃ রেজা। এখান থেকে আমাদেরকে মুজিবনগরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জেনারেল ওসমানী আমাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। আমরা ওনাকে বিমান বাহিনী হঠন করার প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু সে সময় এটা সম্ভব ছিল না। তারপর আমরা স্থলযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সংকল্প জানালাম। সেখানে আমাকে ৬নং সেক্টর কমাণ্ডারের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

 ৬নং সেক্টরে রংপুরে একটা মুক্তিবাহিনী মেজর নওয়াজেশের অধীনে ভূরুঙ্গামারীর কাছে সংঙ্গবদ্ধ হয়েছিল এবং আর একটা বাহিনী দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও হয়ে মেজর নজমুলের অধীনে ভজনপুরে নদীর উপরে একটা পুল উড়িয়ে নদীর উত্তর পারে প্রতিরক্ষাবুহ্য তৈরী করে। দুটো জায়গাই বাংলাদেশের ভিতরে ছিল এবং এখান থেকে কখনো আমরা পিছু হটিনি, বরং এগিয়ে গিয়েছিলাম। মেজর নওয়াজেশের একটা দল সুবেদার বোরহান উদ্দীনের (ই-পি-আর) নেতৃত্বে রংপুরের রুহুমারী এলাকায় প্রতিরক্ষা বুহ্য তৈরি করে এবং এ জায়গা বাংলাদেশের স্বাধীনতাপ্রাপ্তি পর্যন্ত মুক্ত ছিল। এলাকা পরবর্তীকালে ১১নং সেক্টরকে দিয়ে দেয়া হয়।

 রংপুরে পাটগ্রাম থানাও মুক্ত এলাকা ছিল। এখানেও মেজর নওয়াজেশের একটা দল প্রতিরক্ষা বুহ্য তৈরি করেছিল। মেজর নওয়াজেশের এবং মেজর নজমুলের দুটো বাহিনী (ই-পি-আর আনসার, মোজাহেদ, পুলিশ, ছাত্র, শ্রমিক, ড্রাইভার) মিলিয়ে ৭০০ জন ছিল। অস্ত্র বলতে ছিল শুধুমাত্র রাইফেল সামান্য ক’টা, এল-এম জি, মর্টার এবং একটা মেশিনগান। গোলাবারুদও খুব কম ছিল।

 আমার দুটো সমস্যা ছিল। প্রথমত আমি বাহিনীর অফিসার-ঐ এলাকায় সৈনিক, অফিসার এবং জনগণ আমাকে ঠিকভাবে গ্রহণ করবে কিনা সে প্রশ্ন, এবং দ্বিতীয়তঃ সৈনিকদের সংঘবদ্ধ করা এবং সংগঠিত করা। আমাদের অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদও কম ছিল। কিভাবে আরও বেশী অস্ত্র সংগ্রহ করতে হবে সেটাও একটা প্রধান সমস্যা ছিল। ভারত থেকে কিভাবে অস্ত্রশস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করতে হবে সেটাও একটা সমস্যা। রিক্রুটমেণ্ট এবং ট্রেনিং সমস্যা ছিল। তাছাড়া হাসপাতালও ছিল না, ঔষধপত্র ও ডাক্তারের অভাব ছিল। রেশন আমরা ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী থেকে পেতাম কিন্তু খাদ্য সরবরাহ নিয়মিত ছিল না। যে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা তাদের পরিবার নিয়ে এসেছিল তাদেরকে রেশন সরবরাহ করা কষ্টকর ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের কোন পোশাক ছিল না। লুঙ্গী এবং গেঞ্জী পরেই তারা যুদ্ধ করছিল। তাদের কোন বিছানাপত্র ছিল না। তাদেরকে খোলা মাঠে থাকতে হত। টাকা-পয়সারও যথেষ্ট অভাব ছিল।


  1. ১৯৭১ সালে উইং কমাণ্ডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।