পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
303

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
১২। ৬নং সেক্টরের যুদ্ধ সম্পর্কে অন্যান্যের প্রদত্ত বিবরণ ও তথ্যাদি বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র .....১৯৭১

সাক্ষাৎকারঃ লেঃ কর্নেল দেলোয়ার হোসেন[১]
১৬-১০-১৯৭৪

 ২২মে আগষ্ট আমাকে ৬নং সেক্টরে (রংপুর-দিনাজপুর), ক্যাপ্টেন আজিজ পাশাকে ২নং সেক্টরে এবং ক্যাপ্টেন শাহজাহানকে ৯নং সেক্টরে পোস্টিং দেয়া হয়। ২৩শে আগস্ট রাতে আমি শিলিগুড়ি পৌঁছি এবং প্রথমে ৬নং সেক্টরে কর্তব্যরত ক্যাপ্টেন নজমুল হকের (বর্তমান মেজর) সাথে দেখা করি।

 বাংলাদেশের মুক্ত এলাকায় এসে নিজেকে গৌরবান্বিত করি। আমার এত আনন্দ হয়েছিল যা আজ আমি আর প্রকাশ করতে পারব না। শীঘ্রই আমি ৬নং সেক্টরে কর্তব্যরত স্কোয়াড্রন লিডার সদরুদ্দীনের সাথে দেখা করি। এরপর আমি আমাদের সাহায্যে নিয়োজিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিসারদের সাথে সাক্ষাৎ করি। আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম-কবে আমি অর্গবর্তী ঘাঁটিতে যাব এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাব। যদিও আমার রংপুর ও দিনাজপুর এলাকা সম্বন্ধে ধারণা খুব কম ছিল, তবুও দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে যাবার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। এই সময় আমি শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রথম অপারেশন শুরু করি। আমি শত্রুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে তাদের ৫ জনকে নিহত ও ১২ জনকে আহত করি। আমার সাথে যারা ছিল তারা সবাই নতুন শিক্ষাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের ১ জন সামান্য আহত হয়। আমরা হালকা মেশিনগান, এসএমজি, ৩০৩ রাইফেল ও ২ ইঞ্চি মর্টারের সাহায্যে শত্রুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়েছিলাম। আমাদের ডিফেন্স পজিশন থেকে ৩ ইঞ্চি মর্টারের সাহায্য দেয়া হয়।

 অমরখানা সাব-সেক্টর কমাণ্ডার ক্যাপ্টেন শাহরিয়ারের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা আমি জীবনে কোনদিন ভুলতে পারব না। তার মত সাহসী যোদ্ধার কথা ইতিহাসে লেখা থাকবে বলে আমি মনে করি। ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার শত্রুদের যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করেছিল। পাকসেনাদের কাছ থেকে সে ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাকে একটানা কয়েকদিন ও রাত না ঘুমিয়ে থাকতে দেখেছি। ৬নং সেক্টরের অন্যান্য অফিসারদের তার মত এত কৃতিত্বের দাবীদার আর কেউ নয়। আমি ক্যাপ্টেন শাহরিয়ারকে কোন সময়ে বিমর্ষ দেখিনি। দেশপ্রেমিক ও প্রকৃত যোদ্ধার মত তিনি শত্রুদের মোকাবিলা করেছিলেন।

 ৬নং সেক্টরের উইং কমাণ্ডার মিঃ বাশারের (বর্তমান গ্রুপ ক্যাপ্টেন) সাথে আমার তখনও পরিচয় হয়নি। একদিন তিনি আমাকে তাঁর সাথে দেখা করার জন্য বলে পাঠালেন। আমি তাঁর নির্দেশ মত দেখা করি। একজন এয়ার ফোর্সের অফিসার হওয়া সত্ত্বেও তিনি ৬নং সেক্টরের যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন তা যে কোন দক্ষ পদাতিক অফিসারের সাথে তুলনা করা চলে। তিনি নিপুণতার সাথে ৬নং সেক্টর পরিচালনা করেন। দীর্ঘ ৯ মাস তিনি সুদক্ষভাবে ৬নং সেক্টরে শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছেন। ৬নং সেক্টর রংপুর-দিনাজপুর জেলা নিয়ে গঠিত হয়েছিল। অনেক সময় তিনি আমাকে যথাযথ নির্দেশ দিয়ে অপারেশনে বহু সাহায্য করেছেন।

 আমাদের সেক্টর ৬-এর সদর দফতর বুড়িমারীতে স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশের অন্যান্য সেক্টরগুলির তুলনায় একমাত্র আমাদের সেক্টরেই বহু মুক্ত এলাকা ছিল। আমাদের সেক্টর সদর দপ্তর ও সাব সেক্টর দপ্তর


  1. ১৯৭১ সালে ক্যাপ্টেন পদে কর্মরত ছিলেন।