পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
310

সাক্ষাৎকারঃ মেজর সুলতান শাহরিয়ার রশীদ

 আমাকে দেওয়া হয় ৬নং সেক্টরের ১নং সাব-সেক্টর কমাণ্ডারের দায়িত্ব। ১৩ই জুলাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান কার্যালয় থেকে পরিচয়পত্র নিয়ে ৬নং সেক্টরের নিয়ন্ত্রণাধীনে দিনাজপুর জেলার তেতুলিয়া নামক স্থানে ১৭ই জুলাই দায়িত্বভার গ্রহণ করি।

 প্রথম সপ্তাহে আমার সাব-সেক্টরের মুক্ত এলাকা রেকি করা হয় ও পরিচয় হই। সেই সময় উক্ত এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ অবস্থায় ছিল। জুলাই মাসের ২৯ তারিখে তেঁতুলিয়া থানা উন্নয়ন কেন্দ্রে সকল মুক্তিযোদ্ধাদেরকে একত্রিত করার চেষ্টা করি। সেখানে তৎকালীন ই-পি-আর, আনসার মুজাহিদ ও ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেণ্টের জোয়ানরা একত্রিত হই। তার মধ্যে তৎকালীন ৯নং ই-পি-আর উইং-এর জোনের সংখ্যাই বেশী ছিল। এখানে তিনটি কোম্পানী গঠন করা হয়।

 ‘এ’ কোম্পানী কমাণ্ডার সুবেদার আহমেদ হোসেন, প্রাক্তন ই-পি-আর,

 ‘বি’ কোম্পানী কমাণ্ডার সুবেদার খালেক, প্রাক্তন ই-পি, আর;

 ‘সি’ কোম্পানী কমাণ্ডার সুবেদার আবুল হোসেন, প্রাক্তন ই-পি-আর।

 আগষ্ট মাসের ২ তারিখে ভজনপুরে ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা হয়। ৪ঠা আগষ্ট ভজনপুর থেকে কোম্পানী দেবনগরে ডিফেন্স নেয়। সেখানে অবস্থানকালে ময়নাগুড়ি, কামারপাড়া, বিলখাঁজুদ, ফকিরপাড়া, নয়াপাড়া গ্রামসহ সাত-আট মাইল জায়গা দখল করে নেয়া হয়। সেখানে পাকবাহিনীর পোস্ট হিসাবে ছিল। এইসব এলাকা আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের ভিতরেই আমাদের দখলে চলে আসে। আগস্ট মাসের ২য় সপ্তাহের মধ্যে সম্মুখের দিকে ১ মাইল জায়গা আমরা দখল করে নেই। প্রশস্ত ছিল ৭ মাইল। সেখানে জাবরী দেয়ার, গোয়ালঝার, বানিয়াপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, বামনগাঁও, কামাদা ও ভেলুকা পাড়া গ্রাম দখল করে নেই। সেখানে পাক বাহিনীর প্রতিরক্ষা বৃহ্য ছিল। এই সময় পাকবাহিনী আমাদের উপর ভেল্‌কাপাড়া, গোয়ালঝাড় ও জারীদোয়ার গ্রামে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে প্রথমে আমাদের কোম্পানী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সেই সময় আমার অনুরোধে ভারতীয় আর্টিলারী রেজিমেণ্ট পাকবাহিনীর উপর শেলিং করে। এই সুযোগে আমরাও তাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালাই, ফলে পাকবাহনী উক্ত গ্রামগুলি ছেড়ে পিছনে চলে যায়। এই যুদ্ধে আমাদের ২৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে শাহাদত্বরণ করে ও কয়েকজন আহত হয়। আগস্ট মাসের শেষের দিকে আর এক কোম্পানী গঠন করা হয় ছাত্র, যুবক ও কিছু সামরিক জোয়ান দিয়ে। এই কোম্পানী কমাণ্ডার নিযুক্ত হয় সুবেদার আবুল হোসেন। সে সময় আমাদের মোট শক্তি চার কোম্পানীর মত। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে চুই নদীর পশ্চিম পাড়ে চকরমারী গ্রাম, ফকিরপাড়া, খইপাড়, ডাঙ্গাপাড়া, পাথিলগাঁও, জুতরারপাড়া, খাসপাড়া, বালিয়াপাড়া ও প্রধানপাড়া আমরা দখল করে নেই। এই এলাকা দখলে আনতে আমাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর সঙ্গে কয়েকবার সম্মুখ যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং সমস্ত চুই নদীর পশ্চিম পারে পাক-বাহিনীর মুখোমুখি ডিফেন্স নেওয়া হয়। সেই সময় ভারতীয় বি- এস-এফ বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সময় সাহায্য করে। চুই নদীর পশ্চিম পারে চার কোম্পানী মুক্তিযোদ্ধা ডিফেন্স লাগিয়েছিল। সে সময় আমাদের অপর কোম্পানী ও আমাদের ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে টেলিফোন যোগাযোগ স্থাপন করা হয়।

 সেপ্টেম্বর মাসের ৩য় সপ্তাহে পাকবাহিনীর পাক্কা ঘাঁটি অমরখানা তিন কোম্পানী নিয়ে আক্রমণ করি। অমরখাণায় পাকবাহিনীর সঙ্গে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয় কিন্তু পাকবাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে আমরা পুনরায় চুই নদীর পশ্চিম পারে আমাদের ডিফেন্সে চলে আসি। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের